Header Ads

Header ADS

রোজা কি শুধুমাত্র মক্কা তথা আরব্য অঞ্চলের লোকেদের জন্য নাকি সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য?

 রোজা রাখা কি শুধুমাত্র মক্কা তথা আরব্য অঞ্চলের লোকেদের জন্য নাকি সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য????

Image result for রমজান

রোজা বা সাওম মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি ইবাদত ।
ঈমানের যে ৫টি মূল ভিত্তি রয়েছে তার মধ্যে নামাজের পরেই রয়েছে এই সাওম বা রোজার স্থান ।
সাওম মানে হচ্ছে বিরত থাকা ।
অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সমস্ত পানাহার এবং যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সাওম বা রোজা ।

কুরানের কিছু কিছু সুরার আয়াতের বর্ননা এবং সারা বিশ্বের ভৌগলিক এবং পরিস্থিতি বারবারই স্মরন করিয়ে দেয় রোজা বা সাওম কি সারা বিশ্বের লোকের জন্য প্রযোজ্য নাকি কেবলমাত্র আরবের লোকেদের জন্য ?
তো আজকের আলোচনার মূল বিষয় এটাই ।
চলুন আমরা কুরান থেকে আগে জেনে নিই কি বলা হয়েছে এবং কেনইবা আমার কাছে প্রশ্নের  জন্ম নিয়েছেঃ
১.  An-Naml 27:91

إِنَّمَآ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ ٱلْبَلْدَةِ ٱلَّذِى حَرَّمَهَا وَلَهُۥ كُلُّ شَىْءٍۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ ٱلْمُسْلِمِينَ
‘আমাকে তো নির্দেশ দেয়া হয়েছে এই শহরের রব-এর ইবাদাত করতে যিনি এটিকে সম্মানিত করেছেন এর সব কিছু তাঁরই অধিকারে। আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই’।

উপরের বক্তব্যটি কার?
আল্লার নাকি কোন ব্যক্তির বলে মনে হচ্ছে?
নিশ্চয় কোন ব্যক্তির ,আর সেই ব্যক্তিটি আর কেউই নন,স্রেফ মুহাম্মদের , কেননা মুহাম্মদকেই আরবের মক্কায় নবী হিসাবে পাঠানো হয়েছিল।

২.  Ash-Shura 42:7

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ قُرْءَانًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ ٱلْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ ٱلْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِۚ فَرِيقٌ فِى ٱلْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِى ٱلسَّعِيرِ
আর এভাবেই আমি তোমার ওপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে ‘একত্রিত হওয়ার দিন’ এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোন সন্দেহ নেই, একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জ্বলন্ত আগুনে।

উপরের বক্তব্য টি থেকে স্পষ্ট ই বুঝা যাচ্ছে কুরান তথা ইসলাম শুধুমাত্র মক্কা ও তার আশেপাশের
লোকেদের জন্য, সারা বিশ্বের লোকেদের জন্য নয়।
অর্থাৎ সুরা নমলের ৯১ নাম্বার আয়াত এবং আশ শুরার ৭ নাম্বার আয়াত থেকে আমরা স্পস্টই প্রমান পেলাম যে  মুহাম্মদকে নবী হিসাবে পাঠানো হয়েছিল কেবলমাত্র মক্কা ও তার আশপাশের লোকেদের জন্য, সমগ্র পৃথিবীর মানুষের জন্য নয়।

৩. Al-Baqarah 2:187
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمْۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّۗ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْۖ فَٱلْـَٰٔنَ
بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبْتَغُوا۟ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمْۚ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلْخَيْطُ ٱلْأَبْيَضُ مِنَ ٱلْخَيْطِ ٱلْأَسْوَدِ مِنَ ٱلْفَجْرِۖ ثُمَّ أَتِمُّوا۟ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيْلِۚ وَلَا 
       تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَٰكِفُونَ فِى ٱلْمَسَٰجِدِۗ تِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।

এই আয়াতের মাধ্যমে বলা হয়েছে ফজরের আজান থেকে রাত পর্যন্ত না খেয়ে সিয়াম বা রোজা পালন করতে। অথচ বিশ্বের বুকে এমন এমন কিছু দেশ আছে যেখানে সারাদিনে  ২৪ ঘন্টাই দিন বা সুর্য্যের আলো থাকে।
অর্থাৎ সেখানে ২৪ ঘন্টাই দিন , সূর্যাস্ত নেই বললেই চলে ।
যেমন গত ২৩ এপ্রিল ২০১৯ এ দেখেছিলাম নরওয়েতে ১৯ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল ২৪ ঘন্টাই দিন থাকে বা সুর্য্যের আলো থাকে।
এছাড়াও আরো যেসকল দেশে কখনোই সুর্য্যের আলো অস্ত যায়না সেসকল দেশ হচ্ছেঃ

১. নরওয়ে:
নরওয়ে’কে মধ্যরাতের সূর্যের দেশ বলা হয়। নরওয়ের অতি উচ্চতায় ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান হবার ফলে সেখানে দীর্ঘ ঋতু ধরে দিবালোকের মত রাতেও সূর্যের আলো দেখা যায়। এই দেশে মে থেকে জুনে একটানা ৭৬ দিন পর্যন্ত সূর্য কখনও অস্ত যায় না। তবে ২০ ঘণ্টা সূর্যের আলো অনেক বেশী থাকে। বাকি ৪ ঘণ্টা সূর্য কিছুটা নিমজ্জিত অবস্থায় থাকে, তবে সম্পূর্ণ অস্ত যায় না।
২. ফিনল্যান্ড:
এদেশের বেশীরভাগ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে একটানা ৭৩ ঘণ্টা পর্যন্ত সূর্যাস্ত হয় না। আবার শীতকালে এদেশের নাগরিক সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত থাকে। আর্কটিক বৃত্তের উপর মূলত এই মধ্যরাতের সূর্য দেখা যায়। এখানে যখন সূর্যোদয় হয়, তখন সূর্য আর অস্ত যেতে চায় না আবার যখন সূর্যাস্ত হয় তখন সূর্যোদয় হতে চায় না।
৩. সুইডেন:
মে মাস থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত এখানে প্রায় মধ্যরাতে সূর্যাস্ত হয় আবার সকাল ৪ টার দিকে সূর্যোদয় হয়ে যায়। এখানে, ছয় মাস সূর্যোদয় এর সময় বেশী আবার বাকি ছয় মাস সূর্যাস্তের সময় বেশী।
৪. আলাস্কা:
মে এর শেষ থেকে জুলাই এর শেষ পর্যন্ত এখানে সূর্যাস্ত হয় না। আর্কটিক অক্ষের দক্ষিণে আলাস্কা শহর অবস্থিত। এটি আদর্শ সময় হতে ৫১ মিনিট পেছনে চলে।
৫. আইসল্যান্ড:
আইসল্যান্ডে কখনও সূর্য সম্পূর্ণ অস্ত যায় না। এখানে সারারাত দিগন্ত জুড়ে অনুভূমিকভাবে সূর্য পরিভ্রমণ করে। ইউরোপের এই বিশাল আইসল্যান্ড মে থেকে জুলাই পর্যন্ত অন্ধকার দেখতে পায় না। গ্রীষ্মের সময় এখানে মধ্যরাতে সূর্য অস্ত যায় এবং ভোঁর ৩টায় আবার সূর্যোদয় হয়।–সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে।
এছাড়াও পৃথিবীতে এমনও কিছু যায়গা বা দেশ রয়েছে যেখানে কখনোই সূর্যদ্বয় হয়না বা বিশ্বের বুকে এমনও কিছু কিছু যায়গা আছে যেখানে কখনোই সুর্য্যের আলো পৌছতেই পারেনা ।
তো এমতাবস্থায় সেখানের মানুষেরা কিভাবে রোজা বা সাওম পালন করবে ?
হয়তো এহেন প্রশ্ন শুনে অনেকেই বলতে পারেন যে, যেখানে কখনোই সূর্য্যের আলো পৌছায়না বা যেখানে কখনোই সূর্য অস্ত যায়না সেখানে মানুষে যাবে কেন ?
কিন্তু জনাব ভুলে যাবেননা যে এখন বিশ্বায়ন এবং আধুনিকায়নের যুগ ।
মানুশের নানান কর্মের প্রয়োজনে গবেষনার কাজে , ভ্রমনের জন্য কিংবা এডভেঞ্চারের তাগিদে অনেকেই এখন এরকম কাজ করে থাকে।
তো তখন তাদের ক্ষেত্রে কি হবে ?
সাওমের সময় সেখানের সমাধান কি হবে ?
এই বিষয়টা তো নিশ্চয় সেই সৃষ্টিকর্তার মাথায় থাকা দরকার ছিল যিনি নিজেকে কুরানে সমগ্র বিশ্বের সমস্ত কিছুর স্রস্টা দাবী করেন , যিনি সর্ববিষয়ে জ্ঞাত বলে দাবী করেন ,যিনি মানুষের কল্যানের জন্য সকল সমাধানের জন্য কুরান নামক কিতাব পাঠিয়ে দিয়েছেন ,তার তো এহেন বিষয়ে ভুল হবার কোন প্রশ্নই আসেনা ,তাইনা ?
তো এই বিষয়ে তারা কিভাবে এটা থেকে বেরোবে বা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবে?

গত বছরের এপ্রিলে রোজার সময়ে নরওয়ের সুর্যাস্ত না হওয়া নিয়ে সারা বিশ্বে যখন আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল তখন বাধ্য হয়েই আমাদের দেশসহ বিশ্বের সমস্ত মুসলিম দেশের মওলানারা চিন্তাভাবনা করে সেসব যায়গায় রোজা পালনের বা ইফতারের নিয়ম বাতলে দেন ।কিন্তু জনাব একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো যে, যেটা একটা অতীব গুরুত্বপূর্ন ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত ,সেই বিষয়ে একজন স্রস্টায় কিভাবে এতবড় ভুল করতে পারে ?
যিনি আবার দাবী করেন তিনি সর্ববিষয়ে জানেন ।
যাহোক, হয়তো অনেকেই এখন ইজমা কিয়াসের কথা টেনে নয় ছয় চৌদ্দ একটা বুঝ দেওয়ার চেষ্টাও করতে পারেন ,কিন্তু জনাব আপনি সুরা নমলের ৯১ নাম্বার আয়াত এবং সুরা আশ শুরার ৭ নাম্বার আয়াতের ব্যাখ্যা আমাকে কিভাবে বুঝাবেন?
যেখানে স্পস্ট করেই বলা হয়েছে তাকে মানে মুহাম্মদকে তো কেবলই আরবী ভাষাভাষীর এবং মক্কা ও তার আশেপাশের লোকেদের সতর্ক করার জন্য পাঠানো হয়েছে ?
তো উপরের এই দুটি আয়াতের অর্থ এবং আল্লার এই বিশ্বের সমস্ত যায়গার সুর্যাস্ত এবং সুর্যদ্বয়ের বিষয়ে না জানার বিষয়টাই স্পস্ট প্রমান করে যে, রোজা বা সাওম কেবলমাত্র মক্কা ও তার আশেপাশের লোকেদের জন্য মানে ইসলাম নামক রাজনৈতিক দলটা কেবলই  মক্কা তথা আরবের লোকেদের জন্যই মুহাম্মদে তৈরি করেছিল।
আর সে বিষয়ে স্পস্ট প্রমান পাওয়া যায় কুরানের কোথাও আরব্য মরু অঞ্চলের বাইরে কোন বিষয়ে , কোন জাতি ,কোন শহর , কোন অঞ্চল সম্পর্কে বিন্দুমাত্রই কোন বর্ননা পাওয়া যায়না বলে ।
আরো ভালো বুঝতে পারবেন এই বিষয়ে এই লেখাটা থেকেঃhttps://imranshakh.blogspot.com/2020/02/blog-post_22.html

ধন্যবাদ ...






No comments

Powered by Blogger.