তাওরাত এবং ইঞ্জিল কি বিকৃত?
তাওরাত এবং ইঞ্জিল কি বিকৃত?

তো কুরান নাজিল হবার পরে মুসলমানেরা দাবী করে আসছে যে আগের কিতাব গুলি তথা তাওরাত এবং ইঞ্জিল বিকৃত হয়ে যাওয়ার কারনে আল্লায় মুহাম্মদের মারফতে কুরান নাজিল করেছে । অথচ কুরান এবং হাদীস পড়লে বরং নানাবিধ আয়াত এবং হাদীস পাওয়া যায় যেটা প্রমান করে যে, তাওরাত এবং ইঞ্জিল বা এককথায় বাইবেল বিকৃত হয়নি।
আজকে তাই কুরান এবং হাদীস থেকে সেটাই আলোচনা তথা প্রমান করে দেখাবো যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল কি বিকৃত হয়েছে নাকি হয়নি। তো চলুন আগে দেখে আসি সেই আয়াতে কি বলা হয়েছেঃ
প্রথমে আমি সেই আয়াতকে দেখাবো যেটাকে কেন্দ্র করেই মুসলমানেরা দাবী করে যে,বাইবেল তথা তাওরাত এবং ইঞ্জিল বিকৃত হয়েছে ,সেটা হচ্ছে সুরা বাকারার ৭৯ নাম্বার আয়াত,এবং সুরা মায়েদার ১৫ নাম্বার আয়াত।
Al-Ma'idah 5:15
يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَعْفُوا۟ عَن كَثِيرٍۚ قَدْ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٌ وَكِتَٰبٌ مُّبِينٌ
হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল জ্যোতি এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।
Al-Baqarah 2:79
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ ٱلْكِتَٰبَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشْتَرُوا۟ بِهِۦ ثَمَنًا قَلِيلًاۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে। তারপর বলে, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তারা তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা লিখেছে তার পরিণামে তাদের জন্য ধ্বংস, আর তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।** মনে রাখবেন এটা হচ্ছে সুরা বাকারা, যেটার chronological order হচ্ছে ৮৭. যেটা মদীনায় গিয়ে প্রথমে নাজিল হয়। অথচ সরা নিসার ৮২ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছেঃ
An-Nisa; 4:82
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلْقُرْءَانَۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُوا۟ فِيهِ ٱخْتِلَٰفًا كَثِيرًا
তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।
(যদিও কুরানে যথেষ্টই বৈপিরত্য রয়েছে।
প্রমানঃhttps://imranshakh.blogspot.com/2019/10/blog-post_29.html )
এবার দেখুন আল্লা তার বানী সম্পর্কে কুরানে কি বলছেঃ
Al-An 6:34
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُوا۟ عَلَىٰ مَا كُذِّبُوا۟ وَأُوذُوا۟ حَتَّىٰٓ أَتَىٰهُمْ نَصْرُنَاۚ وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَٰتِ ٱللَّهِۚ وَلَقَدْ جَآءَكَ مِن نَّبَإِى۟ ٱلْمُرْسَلِينَ
আর অবশ্যই তোমার পূর্বে অনেক রাসূলকে অস্বীকার করা হয়েছে, অতঃপর তারা তাদেরকে অস্বীকার করা ও কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেছে, যতক্ষণ না আমার সাহায্য তাদের কাছে এসেছে। আর আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং অবশ্যই রাসূলগণের কিছু সংবাদ তোমার কাছে এসেছে।
আবার সুরা আন আমের ১১৫ তে বলা হচ্ছেঃ Al-An 6:115
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًاۚ لَّا مُبَدِّلَ لِكَلِمَٰتِهِۦۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
আর তোমার রবের বাণী সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার দিক থেকে পরিপূর্ণ হয়েছে। তাঁর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
আবার তাফসীরুল কুরানের অনুবাদে বলা হয়েছেঃ আপনার প্রতিপালকের বাক্যের পূর্নসত্য এবং সুসম, যার পরিবর্তকারী নেই।
অর্থাৎ এই কথাটা যদি নবী মুহাম্মকে এড্রেস করেও বলে থাকে, তবে সেই মুহাম্মাদের প্রতিপালকই তো অন্যান্য নবীদেরও প্রতিপালক।মুহাম্মদের মত অন্যান্য নবীদের উপরেও তিনি কিতাব নাজিল করেছিলেন ।
আবার যদি আমরা সুরা ইউনুসের ৬৪ নাম্বার আয়াত দেখি,তাহলেঃ Yunus 10:64
لَهُمُ ٱلْبُشْرَىٰ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَفِى ٱلْءَاخِرَةِۚ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَٰتِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْعَظِيمُ
তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবী জীবনে এবং আখিরাতে। আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই। এটিই মহাসফলতা।
অর্থাৎ আল্লার বানীর কোন পরিবর্তন নেই ।
আবার আমরা যদি সুরা কাহাফের ২৭ নাম্বার আয়াত দেখি, তাহলেঃ Al-Kahf 18:27
وَٱتْلُ مَآ أُوحِىَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَۖ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَٰتِهِۦ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلْتَحَدًا
আর তোমার রবের কিতাব থেকে তোমার নিকট যে ওহী পাঠানো হয়, তুমি তা তিলাওয়াত কর। তাঁর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নেই এবং তিনি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল তুমি পাবে না।
উপরোক্ত আয়াতগুলি থেকে স্পস্টই দেখতে পেলাম যে,আল্লার বানীর কোন পরিবর্তন নেই। তাহলে যদি কেউ বলে যে তৌরাত এবং ইঞ্জিল বিকৃত হয়েগেছে,তাহলে তো উপরোক্ত আয়াত গুলিকে অস্বীকার করছে এবং আল্লার কুরানও ভুল বা মিথ্যা প্রমানিত হচ্ছে। কেননা মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে,তৌরাত এবং ইঞ্জিল কিতাব হচ্ছে মুসলমানদের অন্যান্য দুজন নবীর উপরে প্রেরিত দুটি কিতাব , তথা মুসা এবং ঈসার উপর নাজিল কৃত কিতাব।তাহলে at the same time,আপনি কিভাবে বিশ্বাস করেন যে তৌরাত এবং ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত হয়েছ? যদি আপনি এটা বলেন তাহলে আপনি কুরানের উপরোক্ত আয়াতকে মিথ্যা বলে প্রমান করছেন। এবং যদি বলেন যে বাইবেল বা তৌরাত এবং ইঞ্জিল ইহুদি খ্রিস্টারা বিকৃত করেছে , তাহলে তো এটাই প্রমান হয় যে,আল্লায় ইহুদী খ্রিস্টানদের কাছে দুর্বল বা অসহায় হিসাবে প্রমানিত হচ্ছে।
যাহোক এবার পরের স্টেপে যাওয়া যাক , সুরা আল ইমরনের ৩ নং আয়াত থেকে যা পাইঃ Aal-e-Imran 3:3
نَزَّلَ عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ
তিনি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন যথাযথভাবে, এর পূর্বে যা এসেছে তার সত্যায়নকারী হিসেবে এবং নাযিল করেছেন তাওরাত ও ইনজীল।
অর্থাৎ মানুষের হিদায়েতের জন্য তিনি পুর্বে যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল নাজিল করেছিলেন সেই কিতাবই এই কুরানের সত্যায়ন করছে।তো এখন যদি কেউ বলেন যে,তাওরাত এবং ইঞ্জিল বিকৃত হয়েগেছে তাহলে কুরানের সত্যায়ন হলো তো সেই বিকৃত কিতাব দিয়েই ।তো বিকৃত কিতাবের মাধ্যেম কোন সত্যায়িত বস্তুও নিশ্চয় বিকৃত বলেই প্রমানিত হবে,তাইনা ?
Al-Ma 5:46
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰٓ ءَاثَٰرِهِم بِعِيسَى ٱبْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِۖ وَءَاتَيْنَٰهُ ٱلْإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
আর আমি তাদের পেছনে মারইয়াম পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্মুখে বিদ্যমান তাওরাতের সত্যায়নকারীরূপে এবং তাকে দিয়েছিলাম ইনজীল, এতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো এবং (তা ছিল) তার সম্মুখে অবশিষ্ট তাওরাতের সত্যায়নকারী, হিদায়াত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।
অর্থাৎ এখানে মারিয়ান পূত্র ঈসাকে যে ইঞ্জিল কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, যেটা তাওরাতের সত্যায়ন রুপে তাকে পাঠিয়েছিলেন সেটাই বলা হচ্ছে।
এবার সুরা মায়েদার ৪৭এবং ৪৮ নাম্বার আয়াতের দিকে যাওয়া যাকঃ Al-Ma'idah 5:47
وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ ٱلْإِنجِيلِ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فِيهِۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَٰسِقُونَ
আর ইনজীলের অনুসারীগণ তাতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যেন ফয়সালা করে আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক।
Al-Ma'idah 5:48
وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِۖ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلْحَقِّۚ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًاۚ وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْۖ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
আর আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি যথাযথভাবে, এর পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী ও এর উপর তদারককারীরূপে। সুতরাং আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তুমি তার মাধ্যমে ফয়সালা কর এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে, তা ত্যাগ করে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি শরীআত ও স্পষ্ট পন্থা এবং আল্লাহ যদি চাইতেন, তবে তোমাদেরকে এক উম্মত বানাতেন। কিন্তু
তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। সুতরাং তোমরা ভাল কাজে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহরই দিকে তোমাদের সবার প্রত্যাবর্তনস্থল। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন, যা নিয়ে তোমরা মতবিরোধ করতে।
এখানে দেখুন,আল্লা বলছে মুহাম্মাদের উপর যে কুরান নাজিল করেছে তার সত্যাসত্য বা সত্যায়ন করছে পূর্ববর্তী নবীদের উপর প্রেরিত কিতাব থেকে, অর্থাৎ তৌরাত এবং ইঞ্জিল থেকে। তো আমরা জানি সত্যায়ন কিভাবে করে!
যেখানে মেইন কপিই যদি জাল বা বিকৃত হয় তাহলে তো সেই ফটোকপিও জাল হয়ে যাবে, তাইনা? অর্থাৎ যেই তৌরাত এবং ইঞ্জিল থেকে কুরানকে attached করছে সেই তৌরাত এবং ইনজিলই যদি বিকৃত হয়ে থাকে,তাহলে কুরানের অবস্থান কোথায়?
তো এবার আমরা যদি সুরা মায়েদার chronological order বা নাজিলের সময় সুচি কিংবা সিরিয়াল অনুযায়ী দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই যে,সুরা মায়েদা নাজিল হয়েছিল সুরা বাকারারও পরে গিয়ে। অর্থাৎ সুরা বাকার chronological order হচ্ছে ৮৭, এবং সুরা মায়েদার chronological order হচ্ছে ১১২, তো এবার কি বলবেন?
আগে যেটা বিকৃত বলে আল্লায় ঘোষনা করছিল প্রায় ৬-৭ বছর আগে,সেটাই বা সেই কিতাবই ৬-৭ বছর পরে গিয়ে কিভাবে সঠিক বা সত্যাসত্য হয়ে গেল?
এবার দেখা যাক,
Al-Ma'idah 5:59
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ هَلْ تَنقِمُونَ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلُ وَأَنَّ أَكْثَرَكُمْ فَٰسِقُونَ
বল, ‘হে কিতাবীরা, কেবল এ কারণে কি তোমরা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কর যে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং পূর্বে নাযিল হয়েছে তার প্রতি? আর নিশ্চয় তোমাদের অধিকাংশ ফাসিক।’
Al-Ma'idah 5:68
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لَسْتُمْ عَلَىٰ شَىْءٍ حَتَّىٰ تُقِيمُوا۟ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْۗ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَٰنًا وَكُفْرًاۖ فَلَا تَأْسَ عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَٰفِرِينَ
বল, ‘হে কিতাবীরা, তোমরা কোন ভিত্তির উপর নেই, যতক্ষণ না তোমরা তাওরাত, ইনজীল ও তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা কায়েম কর’। আর তোমার নিকট তোমার রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা তাদের অনেকের অবাধ্যতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবে। সুতরাং তুমি কাফির কওমের উপর হতাশ হয়ো না।
অর্থাৎ, হে ইহুদি খ্রিস্টানেরা তোমরা যদি তোমাদের তাওরাত এবং ইঞ্জিল কিতাব পালন না কর, এবং একই সাথে বলতেছে মুসলমানদের তোমরা তোমাদের কুরানকে না মান,তাহলে তোমরা কিন্তু সঠিক পথে নেই বা থাকবেনা। তাহলে তাওরাত এবং ইঞ্জিলকিতাব যদি বিকৃতই হয়ে থাকবে তবে সেটা কেন সুরা বাকার ৭৯ নাম্বার আয়াত নাজলের প্রায় ৬-৭ বছর পরে এসে এই কথা বলবে? তাও আবার সপ্তম শতাব্দীতে এসে , যখন মুহাম্মাদের উপর কুরান নাজিল হচ্ছে। যদি তাওরাত এবং ইঞ্জিলকিতাব বিকৃত ই হবে তাহলে সপ্তম শতাব্দীতে এসে কেন আল্লায় তাওরাত এবং ইঞ্জিলকিতাব পালন করতে বলবে?
তো আল্লা যদি ৭-৮ বছর আগেই জানবে যে বাইবেল বিকৃত হয়েছে তাহলে তিনি কেন সেই তাওরাত এবং ইঞ্জিল কিতাব পড়ার বা পালন করার তাগিদ দিবে?
আবার সুরা মায়েদার ৬৯ নাম্বার আয়াতেঃ Al-Ma'idah 5:69
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلصَّٰبِـُٔونَ وَٱلنَّصَٰرَىٰ مَنْ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَعَمِلَ صَٰلِحًا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে, ইয়াহূদী হয়েছে এবং সাবিঈ ও নাসারারা (তাদের মধ্য থেকে) যে ঈমান এনেছে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে এবং নেককাজ করেছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।
উপরোক্ত আয়াত যদি সঠিক হয় তাহলে তাহলে আল্লা কেন বিকৃত কিতাব অনুসরণ করতে বলবে এবং সেটা অনুসরণ করার কারনে তাদের আখিরাত দিবসে কোন ভয় পাবেনা বা সব বিষয়ে তারা মুক্তি পেয়ে যাবে? আল্লা কিভাবে বলতে পারে বিকৃত কিতাব অনুসরণ করে আখিরাতে মুক্তি পেয়ে যাবে? আল্লা কেন বললোনা যে, যারা কুরান বিশ্বাস না করবে এবং যারা কুরান অনুসরণ না করবে, এবং যারা মুহাম্মাদকে না মানবে তারা আখিরাতে মুক্তি পাবেনা?
এবার দেখুনঃ Al-Ankabut 29:46
وَلَا تُجَٰدِلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مِنْهُمْۖ وَقُولُوٓا۟ ءَامَنَّا بِٱلَّذِىٓ أُنزِلَ إِلَيْنَا وَأُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَٰهُنَا وَإِلَٰهُكُمْ وَٰحِدٌ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ
আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা যুলম করেছে । আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী’।
আবার দেখুনঃ
Yunus 10:37
وَمَا كَانَ هَٰذَا ٱلْقُرْءَانُ أَن يُفْتَرَىٰ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن تَصْدِيقَ ٱلَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ ٱلْكِتَٰبِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ
এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।
আবার দেখা যাকঃ
Yunus 10:94
فَإِن كُنتَ فِى شَكٍّ مِّمَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْـَٔلِ ٱلَّذِينَ يَقْرَءُونَ ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلِكَۚ لَقَدْ جَآءَكَ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ ٱلْمُمْتَرِينَ
সুতরাং আমি তোমার নিকট যা নাযিল করেছি, তা নিয়ে তুমি যদি সন্দেহে থাক, তাহলে যারা তোমার পূর্ব থেকেই কিতাব পাঠ করছে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর। অবশ্যই তোমার নিকট তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য এসেছে। সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
অর্থাত, যারা কুরানকে সন্দেহ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর এই কিতাব আসার আগে তারা কোন কিতাব পাঠ করেছে? তো কুরান আসার আগে তারা কোন কিতাব পাঠ করতো? তাওরাত আর ইঞ্জিল কিতাবই তো, নাকি? তো যদি সেই তাওরাত এবং ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত হয়েই থাকবে তবে আল্লা কেন সেই বিকৃত কিতাবকে সাক্ষী মানলো?
তাহলে বিকৃত বা ভুয়া সাক্ষী দিয়ে কুরানকে সত্যায়িত করে কুরানই কি বিকৃত হয়নি?
আবার দেখুন সুরা আম্বিয়ার ৭ নাম্বার আয়াতেঃ Al-Anbiya 21:7
وَمَآ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِىٓ إِلَيْهِمْۖ فَسْـَٔلُوٓا۟ أَهْلَ ٱلذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
আর তোমার পূর্বে আমি পুরুষই পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠাতাম। সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান।
অর্থাত, কুরানের আগে আল্লায় পুরুষ নবী রাসুল পাঠাতেন, যাদের কাছে ওহী বা বানী পাঠাত। যদি তোমরা না জানো তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর।
আবার দেখুন সুরা আল ইমরানের ৯৩ নাম্বার আয়াতেঃ Aal-e-Imran 3:93
كُلُّ ٱلطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِّبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَٰٓءِيلُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ ٱلتَّوْرَىٰةُۗ قُلْ فَأْتُوا۟ بِٱلتَّوْرَىٰةِ فَٱتْلُوهَآ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ
সকল খাবার বনী ইসরাঈলের জন্য হালাল ছিল। তবে ইসরাঈল তার নিজের উপর যা হারাম করেছিল তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে। বল, ‘তাহলে তোমরা তাওরাত নিয়ে আস, অতঃপর তা তিলাওয়াত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
তো এখানে দেখুন,কুরানে বা মুসলমানদের মধ্যে কিছুকিছু খাবারের হালাল হারাম নিয়ে বাক বিতন্ডা চললে সেটাকে সত্যায়নের জন্য তাওরাতকে সাক্ষী হিসাবে আনতে বলছে।
তো তাওরাত যদি বিকৃত হয়েই থাকবে তাহলে নবী মুহাম্মাদকে কেন তাওরাত এনে দেখতে বলবে? আল্লায়ই কি তাহলে এতই বোকা এবং নির্বোধ আপনাদের চেয়ে?
এবার দেখুনঃ An-Nisa 4:47
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ ءَامِنُوا۟ بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَىٰٓ أَدْبَارِهَآ أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّآ أَصْحَٰبَ ٱلسَّبْتِۚ وَكَانَ أَمْرُ ٱللَّهِ مَفْعُولًا
হে কিতাবপ্রাপ্তগণ, তোমরা ঈমান আন, তার প্রতি যা আমি নাযিল করেছি তোমাদের সাথে যা আছে তার সত্যায়নকারীরূপে। আমি চেহারাসমূহকে বিকৃত করে তা তাদের পিঠের দিকে ফিরিয়ে দেয়া অথবা তাদেরকে লা‘নত করার পূর্বে যেমনিভাবে লা‘নত করেছি আসহাবুস্ সাবতকে* । আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে।
এখানে সুরা নিসার chronological order হচ্ছে ৯২ , মানে সুরা বাকারার ও প্রায় দেড় বছর পরের। তো ওগুলা যদি বিকৃত হয়েই থাকবে, তাহল বারবার কেন আল্লায় সেই বিকৃত কিতাবকে সাক্ষ্য হিসাবে প্রমোট করছে?
তো এবার আমি আপনাদেকে একটা সহী হাদীস থেকে রেফারেন্স দিয়ে আলোচনার ইতি টানতে চাইঃ
সুনানে আবু দাউদ,
অধ্যায়-৩৩( শাস্তির বিধান)
হাদীস নাম্বার- ৪৩৯২.
সাইদ উমার থেকে বর্নিতঃ
তিনি বলেন একদা ইহুদিদের একটা দল রাসুলের কাছে কূফ নামক একটি স্থানে ডেকে নিয়ে যান,তিনি তাদের সাথে সেখানে এক মাদ্রাসায় গেলে তারা বলে, হে আবুল কাশেম আমাদের এক ব্যক্তি একজন মহিলার সাথে জেনা করেছে। আপনি এটার ফয়সালা করে দিন। তারা রাসুলের জন্য একটা বালিশ রেখে দেয়, এবং রাসুল তার উপর বসে বলেন তোমরা আমার কাছে তাওরাত এনে দাও। তারকাছে তাওরাত আনা হলে তিনি সেটা বালিশের উপর রাখেন এবং তিনি বলেন আমি তোমার উপর এবং তোমার নাজিলকারীর উপর ঈমান রাখি।
তো পাঠক কি বলবেন এবার?
যদি তাদের ( ইহুদিদের) কিতাব বিকৃতই হয়ে জাবে তাহলে মুহাম্মদে কেন সেই বিকৃত কিতাবের উপর এবং কিতাবের প্রতিপালকের উপর ঈমান আনতে যাবে?
এবার উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন যে কি বলবেন?
তাওরাত এবং ইঞ্জিল কিতাব বিকৃত হয়েছে বলবেন নাকি কুরান বিকৃত হয়েছে বলবেন?
Mad,
ReplyDelete