শবে বরাতের কথা কি কুরানে উল্লেখ আছে ?
শবে বরাতের কথা কি কুরানে উল্লেখ আছে ?
শবে বরাত বলুন আর লাইলাতুল বারায়াত বলুন কোন আকৃতিতে শব্দটি কুরআন মাজীদে খুজেপাবেন না৷ সত্য কথাটাকে সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায় পবিত্র কুরআন মাজীদে শবেবরাতের কোন আলোচনাই নেই৷ সরাসরি তো দূরের কথা আকার ইংগিতেও নেই। ৷
অনেককে দেখা যায় শবে বরাতের গুরুত্ব আলোচনা করতে যেয়ে সূরা দুখানের প্রথম চারটিআয়াত পাঠ করেন আয়াতসমূহ হল:
حم ﴿1﴾ وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ ﴿2﴾ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ ﴿3﴾ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴿4﴾ (الدخان: 1-4)
অর্থ: হা-মীম ৷ শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের ৷ আমিতো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে ৷আমি তো সতর্ককারী ৷ এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয় ৷ (সূরা দুখান, ১-৪) ।
শবে বরাত পন্থী আলেম উলামারা এখানে বরকতময় রাত বলতে ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন ৷ যারা এখানে বরকতময় রাতের অর্থ ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন যা আল্লাহর কিতাব বিকৃত করার মত অপরাধ ৷ কারণ:
শবে বরাত পন্থী আলেম উলামারা এখানে বরকতময় রাত বলতে ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন ৷ যারা এখানে বরকতময় রাতের অর্থ ১৫ শাবানের রাতকে বুঝিয়ে থাকেন তারা এমন বড় ভুল করেন যা আল্লাহর কিতাব বিকৃত করার মত অপরাধ ৷ কারণ:
(এক) কুরআন মাজীদের এ আয়াতের তাফসীর বা ব্যাখ্যা সূরা আল-কদর দ্বারা করা হয়। সেই সূরায় আল্লাহ বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ ﴿1﴾ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ ﴿2﴾ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ﴿3﴾ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ ﴿4﴾ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ ﴿5﴾
অর্থ: আমি এই কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি ?লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ৷ এতে প্রত্যেক কাজের জন্য মালাইকা(ফেরেশ্তাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশে।এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজরপর্যন্ত অব্যাহত থাকে ৷ (সূরা কাদর, ১-৫) ,
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর ৷ লাইলাতুল বারায়াত নয় ৷ সূরা দুখানের প্রথম সাত আয়াতের ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর ৷ আর এ ধরনের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আল-কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াত দ্বারা করা হল সর্বোত্তম ব্যাখ্যা। ৷
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর ৷ লাইলাতুল বারায়াত নয় ৷ সূরা দুখানের প্রথম সাত আয়াতের ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর ৷ আর এ ধরনের ব্যাখ্যা অর্থাৎ আল-কুরআনের এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াত দ্বারা করা হল সর্বোত্তম ব্যাখ্যা। ৷
(দুই) সূরা দুখানের লাইলাতুল মুবারাকার অর্থ যদি শবে বরাত হয় তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাড়ায় আল কুরআন শাবান মাসের শবে বরাতে নাযিল হয়েছে ৷ অথচ আমরাসকলে জানি আল-কুরআন নাযিল হয়েছে রমযান মাসের লাইলাতুল কদরে ৷
যেমন সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেনঃ
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ.
অর্থঃ রামাযান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল-কুরআন
(তিন) অধিকাংশ মুফাচ্ছিরে কিরামের মত হল উক্ত আয়াতে বরকতময় রাত বলতে লাইলাতুল কদরকেই বুঝানো হয়েছে ৷ শুধু মাত্র তাবেয়ী ইকরামা রহ. এর একটা মত উল্লেখ করে বলা হয় যে, তিনি বলেছেন বরকতময় রাত বলতে শাবান মাসের পনের তারিখের রাতকেও বুঝানো যেতে পারে। তিনি যদি এটা বলে থাকেন তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। যা কুরআন ও হাদীসেরবিরোধী হওয়ার কারণে পরিত্যাজ্য ৷ এ বরকতময় রাতের দ্বারা উদ্দেশ্য যদি শবে বরাত হয় তাহলে শবে কদর অর্থ নেয়া চলবেনা।
(চার) উক্ত আয়াতে বরকতময় রাতের ব্যাখ্যা শবে বরাত করা হল তাফসীর বির-রায় (মনগড়া ব্যাখ্যা), আর বরকতময় রাতের ব্যাখ্যা লাইলাতুল কদর দ্বারা করা হল কুরআন ওহাদীস সম্মত তাফসীর ৷ সকলেই জানেন কুরআন ও হাদীস সম্মত ব্যাখ্যার উপস্থিতিতে মনগড়া ব্যাখ্যা (তাফসীর বির-রায়) গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই
(পাচ) সূরা দুখানের ৪ নং আয়াত ও সূরা কদরের ৪ নং আয়াত মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায়যে, বরকতময় রাত বলতে লাইলাতুল কদরকেই বুঝানো হয়েছে ৷ সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ),ইবনে কাসীর, কুরতুবী প্রমুখ মুফাচ্ছিরে কিরাম এ কথাই জোর দিয়ে বলেছেন এবং সূরা দুখানের‘লাইলাতুম মুবারাকা‘র অর্থ শবে বরাত নেয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ (তাফসীরে মায়ারেফুলকুরআন দ্রষ্টব্য)
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরে বলেছেনঃ “কোন কোন আলেমের মতে ‘লাইলাতুমমুবারাকাহ‘ দ্বারা উদ্দেশ্য হল মধ্য শাবানের রাত (শবে বরাত) ৷ কিন্তু এটা একটা বাতিল ধারণা
অতএব এ আয়াতে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ‘ এর অর্থ লাইলাতুল কদর। শাবান মাসের পনেরতারিখের রাত নয় ৷
(ছয়) ইকরামা (রঃ) বরকতময় রজনীর যে ব্যাখ্যা শাবানের ১৫ তারিখ দ্বারা করেছেন তা ভুলহওয়া সত্ত্বেও প্রচার করতে হবে এমন কোন নিয়ম-কানুন নেই ৷ বরং তা প্রত্যাখ্যান করাই হলহকের দাবী ৷ তিনি যেমন ভুলের উর্ধে নন, তেমনি যারা তার থেকে বর্ণনা করেছেন তারা ভুলশুনে থাকতে পারেন অথবা কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বানোয়াট বর্ণনা দেয়াও অসম্ভব নয় ৷
(সাত) শবে বরাতের গুরুত্ব বর্ণনায় সূরা দুখানের উক্ত আয়াত উল্লেখ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যেএ আকীদাহ বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, শবে বরাতে সৃষ্টিকূলের হায়াত-মাউত, রিয্ক-দৌলত সম্পর্কেসিদ্ধান্ত নেয়া হয় ও লিপিবদ্ধ করা হয় ৷ আর শবে বরাত উদযাপনকারীদের শতকরা নিরানব্বইজনের বেশী এ ধারণাই পোষণ করেন ৷ তারা এর উপর ভিত্তি করে লাইলাতুল কদরের চেয়ে ১৫শাবানের রাতকে বেশী গুরুত্ব দেয় ৷ অথচ কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ বিষয়গুলি লাইলাতুলকদরের সাথে সম্পর্কিত ৷ তাই যারা শবে বরাতের গুরুত্ব বুঝাতে উক্ত আয়াত উপস্থাপন করেনতারা মানুষকে সঠিক ইসলামী আকীদাহ থেকে দূরে সরানোর কাজে লিপ্ত, যদিও মনে-প্রাণে তারাতা ইচ্ছা করেন না
(আট) ইমাম আবু বকর আল জাসসাস তার আল-জামে লি আহকামিল কুরআন তাফসীর গ্রন্থেলাইলালাতুন মুবারাকা দ্বারা মধ্য শাবানের রাত উদ্দেশ্য করা ঠিক নয় বলে বিস্তারিত আলোচনাকরার পর বলেন : লাইলাতুল কদরের চারটি নাম রয়েছে, তা হল : লাইলাতুল কদর,লাইলাতু মুবারাকাহ, লাইলাতুল বারাআত ও লাইলাতুস সিক।
(আল জামে লি আহকামিল কুরআন, সূরা আদ-দুখানের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
লাইলাতুল বারাআত হল লাইলাতুল কদরের একটি নাম। শাবান মাসের পনের তারিখের রাতেরনাম নয় ।
ইমাম শাওকানী (রহ.) তার তাফসীর ফতহুল কাদীরে একই কথাই লিখেছেন
(তাফসীর ফাতহুল কাদীর : ইমাম শাওকানী দ্রষ্টব্য)
এ সকল বিষয় জেনে বুঝেও যারা ‘লাইলাতুম মুবারাকা‘র অর্থ করবেন শবে বরাত, তারা সাধারণমানুষদের গোমরাহ করা এবং আল্লাহর কালামের অপব্যাখ্যা করার দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।
শবে বরাত নামটি হাদীসের কোথাও উল্লেখ হয়নি
প্রশ্ন থেকে যায় হাদীসে কি লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত নেই ? সত্যিই হাদীসের কোথাওআপনি শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত নামের কোন রাতের নাম খু্জে পাবেন না। যে সকল হাদীসে এ রাতের কথা বলা হয়েছে তার ভাষা হল ‘লাইলাতুন নিস্ফ মিন শাবান‘ অর্থাত্ মধ্যশাবানের রাত্রি ৷ শবে বরাত বা লাইলাতুল বারায়াত শব্দ আল-কুরআনে নেই, হাদীসে রাসূলেও নেই৷ এটা মানুষের বানানো একটা শব্দ ৷ ভাবলে অবাক লাগে যে, একটি প্রথা ইসলামের নামে শত শত বছর ধরে পালন করা হচ্ছে অথচ এর আলোচনা আল-কুরআনে নেই। সহীহ হাদীসেও নেই ৷
অতএব এ রাতকে শবে বরাত বা লাইলাতুল বরায়াত অভিহিত করা মানুষের মনগড়া বানানো একটি বিদ‘আত যা কুরআন বা হাদীস দ্বারা সমর্থিত নয় ৷
শবে বরাত সম্পর্কিত প্রচলিত আকীদাহ বিশ্বাস ও ‘আমল ।শবে বরাত যারা পালন করেন তারা শবে বরাত সম্পর্কে যে সকল ধারণা পোষণ করেন ও উহাকে উপলক্ষ করে যে সকল কাজ করে থাকেন তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
১)তারা বিশ্বাস করে যে, শবে বরাতে আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণীর এক বছরের খাওয়া দাওয়াবরাদ্দ করে থাকেন।
২)এই বছর যারা মারা যাবে ও যারা জন্ম নিবে তাদের তালিকা তৈরী করা হয়
৩)এ রাতে বান্দার পাপ ক্ষমা করা হয়।
৪) এ রাতে ইবাদাত বন্দেগী করলে সৌভাগ্য অর্জিত হয়।
৫) এরাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশে নাযিল করা হয়েছে
৬) এ রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়
৭) মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের সাবেক গৃহেআসে
৮) এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া হয়, বাড়ীতে বাড়ীতে মীলাদ পড়া হয্, আতশবাযী করা হয় কবরস্থানগুলো আগরবাতিও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়, লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যায়৷
৯)বহু লোক এ রাতে ঘুমানোকে অন্যায় মনেকরে থাকে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একশত রাকাত, হাজার রাকাত ইত্যাদি সালাত আদায় করা হয়।
১)তারা বিশ্বাস করে যে, শবে বরাতে আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণীর এক বছরের খাওয়া দাওয়াবরাদ্দ করে থাকেন।
২)এই বছর যারা মারা যাবে ও যারা জন্ম নিবে তাদের তালিকা তৈরী করা হয়
৩)এ রাতে বান্দার পাপ ক্ষমা করা হয়।
৪) এ রাতে ইবাদাত বন্দেগী করলে সৌভাগ্য অর্জিত হয়।
৫) এরাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ হতে প্রথম আকাশে নাযিল করা হয়েছে
৬) এ রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা হয়
৭) মৃত ব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের সাবেক গৃহেআসে
৮) এ রাতে হালুয়া রুটি তৈরী করে নিজেরা খায় ও অন্যকে দেয়া হয়, বাড়ীতে বাড়ীতে মীলাদ পড়া হয্, আতশবাযী করা হয় কবরস্থানগুলো আগরবাতিও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়, লোকজন দলে দলে কবরস্থানে যায়৷
৯)বহু লোক এ রাতে ঘুমানোকে অন্যায় মনেকরে থাকে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে একশত রাকাত, হাজার রাকাত ইত্যাদি সালাত আদায় করা হয়।
এ সবের কিছুরই উল্লেখ নাই কোরান শরিফে ।
No comments