Header Ads

Header ADS

হযরত মুহাম্মদের আগমনী বার্তা কি হিন্দু ধর্মে উল্লেখ আছে?

হযরত মুহাম্মদের আগমনী বার্তা কি হিন্দু ধর্মে উল্লেখ আছে?

 থাকলে সেটার বিশ্লেষন করলে পুরো ব্যাপারটি কি দাঁড়ায়?

Image result for কল্কি



  পাকিস্তান আমলে একবার হঠাৎ শোনা গেলো কুরআন শরীফে নবীজির দাড়ি মোবারক পাওয়া যাচ্ছে! সাধারণ বিশ্বাসী মুসলমান ওযু করে বিসমিল্লাহ বলতে বলতে কুরআনের পৃষ্ঠা খুলতে লাগল। দুরু দুরু বক্ষে হঠাৎ দেখতে পায় ভেতরের ভাঁজে মেহেদী রাঙানো একটা দাড়ির মত চুল! মানুষের সেই পশমে চুমু খেতে খেতে অজ্ঞান হওয়ার দশা। 

আমার নানীর মুখে শুনেছি এই ঘটনা যিনি নিজেই কুরআনে নবীজির দাড়ি মোবারক খুঁজে পাওয়া ভাগ্যবানদের একজন! তবে তিনি একা নন, তাদের প্রতিবেশী কয়েক ঘরেই কুরআন খুলে নীবিজির দাড়ি পাওয়া গিয়েছিল। অনেকেই পাননি, যারা পাননি তারা নিজেদের দুর্ভাগা মনে করেছিল। ১০-১২ বছর আগে ঠিক এরকম একটা ঘটনা যেটা আমার চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি।

 হিন্দু অধ্যুষিত একটা পাড়ায় কিছু তথ্য সংগ্রহর কাজে গিয়েছিলাম, হঠাৎ সেখানে মহিলাদের মধ্যে খুব চাঞ্চল্য দেখা গেলো। গীতাতে নাকি লোকনাথ বাবার দাড়ি পাওয়া যাচ্ছে! এক মহিলা আমার সামনেই সেটা খুঁজে পেলেন! এরকম অলৌকিক ঘটনা যদি আপনি নিজের চোখে ঘটতে দেখেন, এরকম অবিশ্বাস্য, নবী বা অবতারদের চিহৃ যদি এভাবে ঘরে এসে আপনাকে আর্শিবাদ করে যায় , তো ধর্মের উপর আপনার ভক্তি আর শ্রদ্ধা কতখানি বাড়বে ভেবে দেখুন।
 আর এই ভক্তি আর শ্রদ্ধাই তো মসজিদ-মন্দিরগুলি ছড়ি ঘুরাবে তাদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের উপর। যারা এই প্রতারণাগুলি ঘটান তাদের অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত কোন লাভ-লোকসান থাকে না। তারা ধর্মের প্রসারের, ধর্মের প্রতি মানুষের প্রবল অনুরাগ বাড়াতেই এই মিথ্যাচারের আশ্রয় নেন। 

ইসলামের পরিভাষায় একে “তাকিয়া” বলা হয়ে থাকে। জাকির নায়েক থেকে শুরু করে মুহাম্মদ কাসিম নানোত্বি,মুফতি কাজী ইব্রাহিম,আমির হামজা,দেলোয়ার হোসাইন সাঈদি,মিজানুর রহমান আজহারী,তারেক মনোয়ার,তাহেরী, মীর্জা গুলামের মত ইসলামিক পণ্ডিতরা সবাই “তাকিয়ার” আশ্রয় নিয়ে মিথ্যাচার করেন কোন রকম অনুতাপ ছাড়াই। কারণ এরকম মিথ্যাচার ইসলাম ধর্মে বৈধ। হিন্দু ধর্মের এরকম প্রতারণাকে কি বলে জানি না। তবে কুরআনের সেই দাড়ি মুরারক ও গীতায় লোকনাথের ব্রাহ্মচারীর দাড়ি যথাক্রমে যারা কুরআন ও গীতায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তারা ধর্ম প্রচারকারী কোন সংগঠন নিশ্চত করেই। এরা প্রকাশিত কুরআন, গীতা বা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থে আগে থেকে এরকম লোম (বিড়ালের নাকি মানুষের কে জানে!) বইয়ের পাতার ভাঁজে ঢুকিয়ে রাখে। এই চক্রটি নিজেরা বইটি বিপনন করে। তাদের নির্ধারিত এরিয়াতেই বইগুলি সাপ্লাই করা হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বইগুলি বিক্রি, কখনো বিনামূল্যে বিতরণের পর এক বা দুই বছর পর সেই এলাকাগুলিতে একটা গুজব ছড়ানো হয় যে- কুরআনে নবীজির দাড়ি পাওয়া যাচ্ছে, বা গীতায় লোকনাথের দাড়ি পাওয়া যাচ্ছে! যদি পঞ্চাশ জন মানুষও সেটা খুঁজে পান তো গোটা দেশে সেই হিউমার ছড়াতে সময় লাগবে ২৪ ঘন্টা। আর আজকের মোবাইলের যুগে কয়েক ঘন্টা মাত্র…।

এই ধরণের প্রতারণা যতটুকু নিরহ ধাঁচের ততটুকুই হিংস্র, যখন আপনি অন্যের ধর্মীয় বইতে আপনার নবীর কেশ খুঁজে পাবেন! এটা একটা ঝগড়া লাগনোর মত বিষয়। যদি এর সত্যতা বিন্দু পরিমাণও থাকতো তাও কথা ছিল, কিন্তু কোন রকম প্রমাণের ধার না ধেরে, মনগড়া অপ্রমাণিত বক্তব্য রেখে ধর্মীয় বিদ্বেষ জিইয়ে রাখা ধর্মীয় অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা বিজ্ঞজন মতামত দিবেন। তাওরাতে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ নিজের নাম খুঁজতে গিয়ে সেই ধর্মের সমস্ত ধার্মীকদের মিথ্যাবাদী, জোচ্চোর, শঠ, প্রতারক বানিয়ে ছেড়েছেন! যদিও এ সম্পর্কে কোন প্রমাণ তিনি দাখিল করতে পারেননি। শুধু কুরআনকে দেখিয়ে উনি বলেছেন, এখানে লেখা আছে ইহুদীরা তাওরাত বিকৃত করে ফেলেছে!

জাকির নায়েক “বেদে” হযরত মুহাম্মদের আগমনের বার্তা খুঁজে বের করতে পারলেও (!) তার নবী মুহাম্মদ তাওরাতে নিজের নামখানা বের করে দেখাতে পারেননি। তবে তার নাম যে লেখা ছিল তার অকাট্ট প্রমাণ হাজির করেছিল ঠিকই! তিনি দাবী করেছিলেন, ইহুদীরা তাওরাত বিকৃত করে উনার নাম মোবারক মুছে ফেলেছে! “হযরত মুহাম্মদের আগমনী বার্তা কি তাওরাতে উল্লেখ আছে?”- এই লেখায় দেখবো হিন্দু ধর্মে সত্যিই কি হযরত মুহাম্মদের আগমনি বার্তার কথা লেখা আছে কিনা??

একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন প্রায় সব ধর্মেই একজন করে শেষ অবতার বা পথপ্রদর্শক নবীর আগমনের কথা বলা আছে। একইভাবে একজন অধর্ম, নরাধাম, দজ্জালের আগমনের কথাও উল্লেখ আছে। এর উদ্দেশ্য ধর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা পথ তৈরি রাখা। একইভাবে একজন শত্রুকে খাড়া করে ধর্মের প্রয়োজনীয়তাকে অবারিত রাখা। ধর্ম যেন কালের ফেড়ে অপ্রয়োজনীয় হয়ে না পড়ে, মানুষ যেন তার সময়ে ধর্মকে অসাড় মনে না করে- সেই লক্ষ্যে এই সব শেষ ত্রাতা, শেষ শত্রু বলে মিথ চালু রাখা হয়।আর এসবের মূল কারন হচ্ছে সব ধর্মের গোড়াটা বা শিকড় একই যায়গা হতে বেরিয়েছে বলে ।
ধর্মের শুরুটা ঠিক কোন জাতির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল সেটার নিশ্চয়তা কেউই শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলতে না পারলেও অধিকাংশ বিশ্লেষকের মত রয়েছে নিয়াডার্থাল কিংবা আর্য নামক জাতি হতেই ধর্মের উতপত্তিটা শুরু হয়েছিল।
নানাবিধ উপসর্গ এবং প্রমানাদি সেদিকেই ইঙ্গিত করে ।
আর তাদের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল তারা এই হোমো জাতিটির হাত থেকে বাচার জন্য প্রায় সারা পৃথিবী জুড়েই দাপিয়ে বেড়িয়েছে।ফলে তাদের মাধ্যমেই হয়তো এই ধর্ম গুলি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে ।
ফলে প্রায় প্রতিটি ধর্মেরই মূল বিষয়বস্তু বা কনসেপ্টগুলি প্রায় হুবুহু মিলে না গেলেও শুধুমাত্র আঞ্চলিক ভাষাগত পার্থক্যটাই অধিক লক্ষ্যনীয়।এছাড়া উপাসনার বিষয় এবং বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় , যেটার মূল কারন হয়তো সেই আর্য কিংবা নিয়াডার্থাল জাতিটি ধর্মের বীজ কিছুটা ছড়িয়ে দিয়েই আমাদের হোমোদের মাঝথেকে হারিয়ে যাওয়ার কারন হতে পারে।যদিও সেই জাতির বিস্তৃতির সময়ের সাথে ধর্মের ব্যাখ্যা করা সময়ের মাঝে রয়েছে বিরাট ফাক।
যাহোক,
ধর্মবেত্তাদের চিন্তা যে একদমই ভুল ছিল না সেটা দেখতে পাই এই কালে এসেও জর্জ বুশকে দজ্জাল ও বিন লাদেনকে ইমাম মাহেদী বলে সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসীরা ধর্মের সত্যাসত্য ও প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে নিশ্চিন্ত হন।

হযরত মুহাম্মদ তাওরাতে উনার আগমনি বার্তাকে প্রমাণ করতে না পেরে বলেছিলেন ইহুদীরা সেকথা জেনেশুনে মুছে ফেলেছে। তবে উনার “কল্কি শিষ্য” জাকির নায়েক গুরুর থেকেও মহা ঘুঘু মাল! এই লোক একদম প্রমাণই করে ফেলেছে তার নবীর নাম হিন্দুদের ধর্মীয় কিতাবে লেখা আছে! কৌতূহল জাগতে পারে হিন্দু “বেদে” কি মুহাম্মদ ও তার বাবা-মার নামধাম সহ সবকিছু উল্লেখ আছে?

 ভাবলে অবাক লাগে, একজন মানুষ কতখানি আমড়াগাছি করতে পারলে হিন্দু ধর্মে হযরত মুহাম্মদকে আবিষ্কার করতে পারেন! কয়েক হাজার বছর আগে যদি বেদে মুহাম্মদের কথা বলাই থাকবে তাহলে বেদের ঋষিদের পৌত্তলিকতা জারি থাকে কিভাবে? সেমিটিক ও প্যাগণ ধর্ম দুই পৃথিবীর বাসিন্দা। মুহাম্মদ জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক ছিল বলে নিজেকে সেমিটিক ধর্মের নবী দাবী করে প্যাগন ধর্মে নিজের ভবিষ্যত বার্তা দাবী করেননি, করেছেন সেমিটিক ইহুদী ধর্মে। কিন্তু “কল্কি শিষ্য” জাকির নায়েক বেহেড মাতালই বলতে হবে। আসুন দেখি তার মাতলামীর নমুনা।🔻

কোন একটা ধর্মীয় গ্রন্থে হাজার বছর আগে কোন মানুষের জন্মের অগ্রিম কথা লেখা আছে এমন দাবী আসলে সেই ধর্ম ও তার গ্রন্থকে ঐশ্বরিকভাবে মেনে নেওয়া। সেমিটিক ধর্মের পৌত্তলিক ধর্মকে মেনে নেয়ার নজির একমাত্র ইসলামের দেখা যায়। জাকির নায়েক ও তার মত পেশাদার ইসলামী বক্তাদের যতগুলি ভিডিও ও লেখা পড়লাম সেখানে কল্কি পুরাণ ও ভবিষ্য পুরাণের কথাই উল্লেখ করেছে। পুরাণ আর বেদ কি এক জিনিস? আমি হিন্দু ধর্মের বিশেষজ্ঞ নই। যতদূর জানি পুরাণ হিন্দুদের কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। পুরাণকে প্রায় গালগল্প বলা চলে। জাকির নায়েক তার একটা লেকচারে হিন্দু ধর্মে হযরত মুহাম্মদের আগমনি বার্তার প্রমাণ দেখাতে গিয়ে বলেছিলেন,⬎

// “এতস্মিন্নন্তিবে সেত্দচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ। মহামদ ইতিখ্যাতঃ শিষ্যশাখা সমন্বিত।। নৃপশ্চৈব মহাদেবং মরুস্থ নিবাসিম্ম। চন্দনাদিভির ভ্যর্চ্য তুষ্টাব মনসাহরম্নমস্তে গিরি জানাথ মরুস্থল নিবাসিনে। ক্রিপুবাসুরনাশায় বহুমায়া প্রবর্তিনে॥" (ভবিষ্যপুরাণ ৩:৩:৩)//

// "তম্মান্মুসলবন্তো হি জাতয়ো ধর্ম্ম দূষকাঃ। ইতি পৈশাচধমশ্চ ভবিষ্যতি ময়াকৃতঃ। ” (ভবিষ্যপুরাণ শ্লোকঃ১০-২৭।)  

অর্থ্যাৎ,  ত্রিপুরাসুর নামে একজন আসবেন। মুহামদ নামে জন্ম নেবে ও একটা আসুরী ধর্ম প্রচার করবে। এই ধর্মের অনুসারীদের মুসলমান বলা হবে। তারা মাংস ভক্ষক হবে। মাথায় শিখার বদলে তারা দাঁড়ি রাখবে। তারা লিঙ্গ কর্তন করবে।

অথচ … মুহাম্মদের লিঙ্গ ৪০ বছর বয়েসে কর্তন করা হয়েছিল এরকম কোন তথ্য কোন ইসলামী সূত্রেই পাওয়া যায় না। আরব মূর্তি পুজারীরা খৎনা করত না। হযরত মুহাম্মদের প্রথম দিকের সমস্ত শিষ্য যারা কুরাইশ মূর্তি পুজারী ছিল তারা কেউ সেই বুড়ো দামড়া বয়েসে নুনু কেটে ঘরে বসেছিল এরকম কোন হাদিস বা অন্য কোন সূত্রে জানা যায় না। বড় কথা হচ্ছে হযরত মুহাম্মদ  ভারতবর্ষে কোনদিন আসেননি। তাছাড়া কোন ঈমানদার বান্দা কি ইসলাম ধর্মকে “অসুরের ধর্ম” বলে মেনে নিবেন? তাহলে ভবিষ্য পুরাণে কোথায় হযরত মুহাম্মদের কথা বলা হয়েছে? হযরত মুহাম্মদ স্বয়ং কি কোনদিন বলেছেন যে ভারতের ধর্মীয় গ্রন্থে উনার কথা বলা আছে? ভারতবর্ষ কোন অনুল্লেখ্য স্থান নয়। ভবিষ্যতে এরকম বিতর্ক যেখানে শুরু হবে তা নিয়ে কি “সত্য ধর্মের একমাত্র নবী” কিছু বলে যাবেন না? 
সবচেয়ে বড় কথা ভবিষ্য পুরাণে কথিত এই মুহাম্মদকে নিচ, পিশাচ, পাপী, অধর্ম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে! ভবিষ্য পুরাণের এই দাবীকে সত্য ধরলে ইসলাম ধর্মকে শয়তানের ধর্ম ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। টাউট জাকির নায়েক সাধারণ হিন্দুদের মনে ধাক্কা দিতে ও সাধারণ মুসলিমদের আমোদ দিতে ভবিষ্যপুরানের প্রায় সকলের অগোচড়ে থাকা এই বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে এসেছে যেখানে মুহাম্মদকে একটা পাপাত্মা বলে পরিচয় করে দেয়া হচ্ছে। 

বেদ বা হিন্দু ধর্মের সত্যিকারের প্রাচীন কোন গ্রন্থেই হযরত মুহাম্মদের কথা বলা থাকবে না এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু ধার্মীক তো বিজ্ঞানকে মানবে না। তারা তাই পরস্পর একে অপরকে অভিযুক্ত করে যাবে। ভন্ড জাকির এসব তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবে। এখন আসা যাক ভবিষ্য পুরাণে মুহাম্মদের নামধাম সহ তাকে পাপাত্মা বলে উল্লেখ করা থাকলো কিভাবে? 

এটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে হিন্দু ধর্মের মূল গ্রন্থ কোনগুলি। ভবিষ্যপুরাণ, মৎস্য পুরাণ, কল্কি পুরাণ এরকম যত পুরানই আছে তা হিন্দু ধর্মের গালগল্প ছাড়া কিছু না। মীর মোশারফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু যেমন কারবালার ঘটনা নিয়ে লেখা কাব্য, তেমনি হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে লেখা নানা কাহিনী বাজারে পাওয়া যায় নানা জন নানাভাবে লিখেছেন।

 পুরাণ আপনিও লিখতে পারবেন। অনেকদিন আগে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে একটা ছোট উপন্যাস লিখেছিলেন- সেটা কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয় নিশ্চয়? আপনিও দেব-দেবীদের নিয়ে নিজস্ব ভাল লাগা বা পছন্দের দেব-দেবীদের বেশি বীরত্ব দেখিয়ে কোন পুরাণ লিখতে পারেন যেটা অন্যেদের লেখা কাহিনী থেকে ভিন্ন হতে পারে। এ জন্য হিন্দুদের পুরাণের কাহিনী একেক জায়গায় একেক রকম দেখা যায়। যেমন গণেশের মাথা কাটার কয়েকটি কারণ দেখেছি যা একটির সঙ্গে অন্যটির মিল নেই। যেহেতু হিন্দুরা তাদের ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষিত নয়, আর মুসলিমরা সংগত কারণেই হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না, এটা জেনেই চতুর জাকির হিন্দু ধর্মে মুহাম্মদকে খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবী করেছে। এবং এটা করতে গিয়ে পাপাত্মা বলে অভিহত করা মুহাম্মদকে দেখাতেও তিনি কসুর করেননি। 
আসলে তথাকথিত এইসব ভবিষ্য পুরাণ গুলি খুব বেশিদিন আগের লেখা নয়। বেশির ভাগই মুঘল আমলে লেখা। সম্রাট আকবর নিজেই একজন নবী হতে গিয়ে হিন্দু-ইসলাম ধর্মকে মিলিয়ে মিশিয়ে একটা ধর্ম তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সেই ধর্মের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে গিয়ে নানা রকম পুরাণ লেখান তার লোকজনদেরকে দিয়ে। হিন্দু ধর্মে ইসলামের নবীর কথা বলা আছে এটা বলে তিনি হিন্দুদের নিজ ধর্ম আকড়ে থাকার অনড় অবস্থান থেকে সহনশীল করতে চেয়েছিলেন। একইভাবে নিজে একটি ধর্মের ঘোষণা দিয়ে মুসলিমদের নিজ ধর্ম ত্যাগ করাতে চেয়েছিলেন।
 এসব করতে গিয়ে তিনি হিন্দু পন্ডিতদেরকে দিয়ে পুরাণ লেখান। এটা করতে গিয়ে তিনি হিন্দু-মসলিম দুই পক্ষেই বিরাগ ভাজন হন। সেই প্রতিক্রিয়ায় হযরত মুহাম্মদের শয়তানের মত আর্বিভাবের কথা হিন্দু ধর্মে কে কবে লিখে রেখেছে তা আজ আর কে বলতে পারবে। তবে আমাদের উল্লেখিত ভবিষ্য পুরাণের শ্লোকটি আকবরের সময়ের লিখিত না বখতিয়ার খিলজির সময়ে লিখিত বলা মুশকিল। বখতিয়ার খিলজির সঙ্গে এই শ্লোকের কথাগুলি কিন্তু বেশি মেলে। বখতিয়ার সাক্ষাৎ পাপাত্মার রূপ ধরেই এসেছিল ভারতবর্ষে।

ভবিষ্য পুরান বেদের কোন অংশ নয়। কল্কি পুরাণও তাই। জাকির নায়েক এসব গালগল্পকেই মুহাম্মদের আগমনি বার্তার মাধ্যম বলে দাবী করে চরম অবিবেচনার পরিচয় দিয়েছেন। যেখানে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ তাওরাতে নিজের পরিচয়কে প্রমাণ করতে পারেননি সেখানে জাকির কিভাবে হিন্দু পুরাণে মুহাম্মদকে প্রমাণ করবেন?

ইন্টারনেটে সার্চ করে এ সম্পর্কে যতগুলি লেখা পেলাম, দুই পক্ষে কাঁদা ছুড়াছুড়ির মাঝে জাকির নায়েকের অনুসারীদের মিথ্যাচার স্পষ্ট হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ তাওরাতে নিজের নাম খুঁজে না পেয়ে শেষে যে আশ্রয় নিয়েছিলেন (ইহুদীরা তাওরাত বিকৃত করে ফেলেছে) এখানেও দেখলাম অনেকে বলার চেষ্টা করেছেন পুরাণকে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে! তবু জাকির নায়েক কল্কি পুরানে কল্কির সঙ্গে হযরত মুহাম্মদের মিল খুঁজে পেয়েছে! স্বঘোষিত শেষ নবী মুহাম্মদ আসছেন এটা নাকি কল্কি পুরাণে বলা হয়েছে।
 ইমাম মাহেদী যেমন দুনিয়াতে ডজন খানেক এরিমধ্যে জন্মে নিয়েছেন, আরো নিবেন, এই আসা-যাওয়া থামবে না। হিন্দুদের বহু বাবাজি নিজেকে কল্কি পুরাণের কল্কি বলে নিজেকে দাবী করেছেন। আরো করবেন সামনে। কারণ এই পুরাণের সঙ্গে এক-দুই ভাগ যে কোন মানুষের সঙ্গে মিলে যাবে। আর চাপাবাজ শিষ্যরা থাকলে সেটাকেই আকাশে তুলে দিবে। জাকির কল্কিপুরাণের কল্কিকে নবী মুহাম্মদ বলে দাবী করেছেন অথচ বর্ণিত কল্কির সঙ্গে তার কোন মিলই পাওয়া যায় না! কোন কোন ক্ষেত্রে শব্দের অর্থকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই বিষয়ে যত বিতর্ক ইন্টারনেটে দেখলাম তাতে আমার নিজের মত হচ্ছে, জাকির নায়েক কথিত কল্কির সঙ্গে নবী মুহাম্মদের কোন মিলই দেখাতে পারেননি। হিন্দুদের কল্কি অবতার একটা ভাওতাবাজি। ইমাম মাহাদীর মতই এটি ধর্মকে প্রাসঙ্গিক ও চালিয়ে নিয়ে যাবার রাস্তা। জাকির নায়েকের লেকচারের দাবী ও এ সংক্রান্ত জবাবে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংস্থা, ইন্টারনেট ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে মোটামুটি নিচের এই অংশগুলিকে ঘিরেই।-

কল্কি পুরান এ বলা আছে কল্কি অবতার এর পিতা মারা যাবে তার জন্মের পর (1:2:15 Kalki Purna)
হযরত মুহাম্মদের বাবা মারা যান তার জন্মের পূর্বে! বিসমিল্লাতেই ধরা!

➤ কল্কি তার মাতা সুমতির ৪র্থ সন্তান রুপে পৃথিবীতে আসবেন (কল্কি পুরান ২.৩১ )➥ -হযরত মুহাম্মদ গর্ভে থাকাকালে তার পিতার মৃত্যু হয়েছিল তাই সঙ্গত কারণেই তার আর কোন ভাই-বোনের জন্ম হবার কথা নয়। তার মাতা আমিনা আবার বিয়ে করেছেন এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। কল্কির সঙ্গে এখানেও মুহাম্মদ মেলে না। হযরত মুহাম্মদ তার বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিলেন


তিনি জন্ম নিবেন মাসের এক ১২ তারিখে (কল্কি পুরান 2nd অধ্যায় ১৫নং অনুচ্ছেদ)

হযরত মুহাম্মদের ১২ রবিউল আওয়াল জন্মেছেন তার কোন প্রমাণ ইসলামের কোন সূত্রে পাওয়া যায় না। কোন আলেম বা বিশেষজ্ঞই এবিষয়ে একমত নন। তবে ১২ তারিখকে ধরে নেয়া হয়।


কল্কির বাবার নাম হবে “বিষ্ণুযশ” যার অর্থ হবে "ঈশ্বরের গর্ব"। জাকির নায়েক দাবী করেছেন কল্কি নাম নাকি লেখা আছে  বিষ্ণুইয়াসি যার অর্থ সৃষ্টিকর্তার গোলাম। 

➥ র সঙ্গে মুহাম্মদের বাবার নাম আবদুল্লাহ (আল্লার দাস) মিলিয়েছেন। 

হিন্দু পন্ডিতদের চেয়ে জাকির নায়েক সংস্কৃত বেশি বুঝবেন আর জাকির মিয়ার চাইতে কোন হিন্দু পন্ডিত কুরআন বেশি বুঝবেন সেটা আমি দাবী করি না মানিও না। কাজেই জাকির নায়েক এই জায়গায় “তাকিয়া” খেলেছেন সংগতভাবেই। এক জায়গায় দেখতে পেলাম সংস্কৃত সভা না কি একটা সংঘ এই বিষয়ে বিতর্কের আমন্ত্রণে জাকির নায়েক কোন সাড়া দেননি!


কল্কির মায়ের নাম হবে সুমতি

➥ এটাকে জাকির নায়েক আরবী আমেনা বানিয়েছেন। 

আমেনা অর্থ শান্ত আত্মা। আরবী জাকির ভালই জানেন আগেই বলেছি। কিন্তু সুমতি শব্দটি একজন বাঙালী হিসেবে আমার নিজের কাছে তো অচেনা নয়। এর অর্থ কিছুতে ভাল আত্মা হতে পারে না! শরৎচন্দ্রের “রামের সুমতি” নামের শিশুতোষ রচনাটির অর্থ নিশ্চয় রামের শান্ত আত্মা নয়!


বলা আছে কল্কিকে তার গুরু রামদেব বেদ শেখাবেন (কল্কি পুরান, 3/43)

হযরত মুহাম্মদ বেদ জানতেন এটা কি কোথায় পাওয়া যায়? মুসলিমরা গর্ব করে বলেন উনি অশিক্ষিত ছিলেন! তো রামদেব নামের মুহাম্মদের কোন শিক্ষকের নামও তো কখনো শুনিনি!


কল্কি পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রান্তে যাবেন এবং সেখানকার খারাপ লোকদের হত্যা করবেন, এতে খুব কম লোকই অবশিষ্ট থাকবে এবং তাদের মাধ্যমে আবার সত্যযুগ শুরু হবে। (Brahmanda purana (1/2/31/76-106), vayu purana (58/75-110)

এটা কিন্তু ইমাম মাহাদীর সঙ্গে দারুণ মিলে যায়! ঐ যে বললাম ধর্মের রাস্তা খুড়ে রাখা আগামীদিনের জন্য। কিন্তু হযরত মুহাম্মদের সঙ্গে কি এটা মিলে? হযরত মুহাম্মদ মারা যাওয়ার আগে মাত্র ১০ হাজার অনুসারীকে রেখে গিয়েছিলেন। তার ধর্ম তখন পর্যন্ত প্রসার লাভ করেনি। কথিত “সত্য যুগ” কি মুহাম্মদের জন্মের পর আজ অবধিকে কোনমতে বলা যায়?


কল্কি ও তার স্ত্রী নিরামিষভোজী হবেন। (কল্কি পুরান 3/43)

হযরত মুহাম্মদ নিরামিষ ভোজি ছিলেন এমনটা তার শত্রুও বলতে পারবে না! উনার প্রিয় ছিল বকরির ঠাংয়ের রোস্ট। এই ঠ্যাং খেতে গিয়েই বিষক্রীয়ায় শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছিলেন এই আলোচিত-সমালোচিত ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ।


কেন এই মিথ্যাচার? ধর্ম তো বিশ্বাসের জিনিস। কেন ইসলাম ধর্মকে বিজ্ঞানের মধ্যে, অন্যের ধর্মের মধ্যে আবিস্কার করতে হবে? এর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতারণা! প্রতারণা করে অন্যকে ধর্মে আকৃষ্ট করা, স্বধর্মের প্রতি মনোযোগি করে তোলা। নিজ ধর্ম সম্পর্কে অন্যকে আকৃষ্ট করা সম্ভবত একজন ধার্মীকের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু যেটি অধিকারের মধ্যে পড়ে না, বরং পুরোপুরি একটা ক্রাইম সেটি হচ্ছে এইরকম মনগড়া ব্যাখ্যা হাজির করে অন্যের ধর্মের কিতাবকে নিজের ধর্মের বিতর্ক তুলে ধরা। হযরত মুহাম্মদ নিজে তাওরাতকে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে- এরকম অপ্রমাণিত উক্তি করে চরম ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন সমস্ত ইহুদী-খ্রিস্টানদের। তার এই উক্তি, তার কুরআনের এই ভাষ্য আজো পৃথিবীতে এই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সংঘাত, দ্বন্ড, অবিশ্বাস, ঘৃণা, বিদ্বেষ জারি রেখেছে। এটি পৃথিবী ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল উক্তি। আজতক মানবজাতি তার মাসুল দিয়ে যাচ্ছে। জাকির নায়েকদের মত পেশাদার ইসলামজীবীদের যদি এখনি রুখা না যায় তো, তারা এমন তরো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অবিশ্বাস, ঘৃণা ছড়াতে থাকবে। ধর্মের এই আরোপিত বিতর্ক বিভক্ত পৃথিবীকে আরো বিভক্তই করবে। জাকির নায়েকদের ধর্মীয় অধিকার কতটুকু সেটা এখনি নির্ধারণ করে না দিলে সামনের পৃথিবীতে ধর্মীয় সংঘাত আরো বাড়বে। এদের মুখোশ তাই প্রতিনিয়ত খুলে দিতে হবে। মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।


No comments

Powered by Blogger.