ক্বাবা আক্রমনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ক্বাবা আক্রমনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

৬৮৩ সালে হযরত আব্দুল্লা ইবনে জুবায়ের (রঃ) এর সময় ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া কর্তৃক মক্কা আক্রমণের সময় কাবা শরীফ আগুনে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর হযরত আব্দুল্লা ইবনে জুবায়ের কাবা শরীফ পুরোপুরি ভেঙে বর্তমান কাঠামোয় নির্মাণ করেন এবং বর্ধিত অংশ হাতিম নির্মাণ করেন।
৬৯২ সালে উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান তখন জেনারেল হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে পাঠান মক্কার আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা)-কে পরাজিত করে খিলাফতের প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চিহ্ন করতে। খুব নৃশংস এই মক্কার অবরোধ স্থায়ী হয় ছয় মাস! আব্দুল্লাহ (রা) মারা যাবার পর অবরোধ শেষ হয়। আব্দুল্লাহর (রা) দুই পুত্র কাবার পাশেই লড়াইরত অবস্থায় মারা যান। এই আক্রমণের সময় পাথর নিক্ষেপ করে কাবা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এরপর আব্দুল মালিক আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইরের বানানো অতিরিক্ত অংশ ধ্বংস করে কাবার কুরাইশি ঘনক আকৃতি ফিরিয়ে আনেন।
৯৩০ সালের হজ্বের সময় কার্মাতিয়রা মক্কায় সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। হাজীদের খুন করে লাশ জমজম কূপে ফেলে দেয়। এরপর তারা ‘কালো পাথর’ চুরি করে নিয়ে যায়। তারা একটা উপাসনালয় বানায় (‘মসজিদ আল দিরার’) যেখানে কালো পাথর স্থাপন করা হয়। এর মূল হোতা ছিল তাদের নেতা আবু তাহির। তার উদ্দেশ্য ছিল মক্কা থেকে হজ্ব বাতিল করা, কিন্তু সেটি সফল হয়নি। হজ্ব চলতে থাকে কালো পাথর ছাড়াই। ২৩ বছর পর, ৯৫২ সালে আব্বাসীয় খলিফা বিশাল টাকা দিয়ে সেই পাথর ফিরিয়ে আনেন। যে কার্মাতিয় ফিরিয়ে দিয়ে যায়, সে কুফার এক মসজিদে শুক্রবার দিন পাথরটি বস্তাবন্দি করে ছুড়ে মেরে যায়, সাথে থাকে একটা চিরকুট, “ক্ষমতা দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম, ক্ষমতা দেখিয়েই ফেরত দিলাম আমরা।” এই ছুঁড়ে মারার ফলে সাত টুকরা হয়ে যায় পাথরটি।
উল্লেখ্য, একাদশ শতকে ফাতিমীয় খলিফা আল হাকিমের পাঠানো এক লোক কাবার সামনে এসে কালো পাথর ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করে। এই পাথরের প্রতি কারো কারো এত ক্ষোভের কারণ বোধগম্য না। আবার কেউ কেউ বলেন ইয়াজিদের আক্রমণের সময় যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তখনই হজরে আসওয়াদ উত্তাপে পুড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এবং আব্দুল্লা ইবনে জুবায়ের রূপার পাতি দিয়ে টুকরা গুলোকে জোড়া লাগান। পরে দ্বিতীয়বার কার্মাতিয়দের দ্বারা ভাঙনের ঘটনা ঘটে।
প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ১৬২৯ সালে বন্যা হয়ে যায় মক্কায়, তখন কাবার দেয়াল ধসে যায়। বন্যা শেষে গ্রানাইট পাথরে নতুন করে কাবা বানানো হয়। ওসমানী সম্রাট চতুর্থ মুরাদের আমলে তখন মসজিদ পুরোটা সুন্দর করে আবার বানানো হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সেই একই মূল গঠন আছে। এরপর নানা সময়ে সৌদি রাজবংশের সহায়তায় এর উন্নয়ন কাজ চলছেই। কিং ফাহাদের সম্প্রসারণেরপর এখন চলছে কিং আব্দুল্লা সম্প্রসারণের কাজ।
কিন্তু কাবা শরীফের ভিতরে সবচেয়ে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে ১৯৭৯ সালে ১৪০০ হিজরির প্রথম দিনে। ঘটনার হোতা ছিল জুহাইমান আল-ওতাইবি, সৌদি আরবের নাজদের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। সে হঠাৎ করেই তার শ্যালক মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-কাহতানিকে ঘোষণা করে বসে ‘ইমাম মাহদি’ হিসেবে, আর চার পাঁচ শ' সহযোগী ছিল, সাথে ছিল প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ ! তারা ভিতর থেকে গেইট বন্ধ করে দেয় এবং প্রায় ৫০ হাজার হাজিকে জিম্মি করে সৌদি রাজবংশের বিলুপ্তি দাবি করে এবং ইমাম মাহ্দীর খেলাফত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায়, নতুবা হারাম শরীফ উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। হারাম শরীফের ভিতরে যেহেতু রক্তপাত নিষিদ্ধ, তাই তাদের উপর সশস্ত্র আক্রমণ করা হবে কি না এই বিতর্ক শুরু হয়। সবশেষে সিদ্ধান্ত হয় আক্রমণ করা হবে।

প্রথমে পাকিস্তানি ন্যাশনাল ফোর্স আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু এরা আক্রমণ করে সুবিধা করতে না পারায় ফ্রান্স সরকারের সাহায্য প্রার্থনা করে সৌদি সরকার। ফ্রান্স সরকার শক্তিশালী এক কমান্ডো গ্রুপ প্রেরণ করে। । সব মিলিয়ে দুই সপ্তাহ শেষে, বেঁচে থাকা সন্ত্রাসীরা সবাই আত্মসমর্পণ করে। দুই সপ্তাহ হারাম শরিফে কোনো নামাজ হয়নি, মক্কাও ছিল ফাঁকা। এ ঘটনায় মারা যায় ২৫৫ জন আর ৫৬০ জন আহত হয়। মিলিটারি থেকে মারা যায় ১২৭ জন আর ৪৫১ জন আহত হয়।
( https://www.bbc.com/bengali/news-42124824 )


এছাড়াও হজ্জ্ব চলা অবস্থায় ক্রেন ভেঙ্গে পড়ে ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মসজিদ আল হারামের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত একটি ভ্রাম্যমাণ ক্রেন ভেঙে পড়ে যার ফলে ১১৮ জন মারা যান এবং ৩৯৪ জন আহত হন।[৩][৪][৫] এদের অধিকাংশই হজ্জের উদ্দেশ্যে মক্কা এসেছিলেন। শহর এসময় হজ্জের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এখানে সারা বিশ্ব থেকে মুসলিমরা জড়ো হচ্ছিলেন।[৬][৭][৮]
রিপোর্ট অনুযায়ী চল্লিশজন বাংলাদেশি,[৯] পনেরজন ভারতীয়, দশজন মালয়েশীয়, পনেরজন ইরানি, বেয়াল্লিশজন ইন্দোনেশীয়[১০][১১][১২][১৩] এবং একান্নজন পাকিস্তানি[১৪] এতে আহত হয়েছেন। এগারোজন পাকিস্তানি, এগারোজন ভারতীয় ও দুইজন ব্রিটিশ নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।[১৫] আধুনিক ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়াবহ ক্রেন দুর্ঘটনা। ইতিপূর্বে ২০০৮ সালে নিউ ইয়র্কে সংঘটিত ক্রেন দুর্ঘটনাটি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল এবং এতে ৭ জন মারা যায়।
https://bit.ly/38uSwgE
৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ইয়েমেনের বাদশা আবরাহা ক্বাবা আক্রমনের সময় নাকি আল্লায় তার আবাবিল পাখি দ্বারা আবরাহার হাত থেকে ক্বাবা রক্ষা করেছেন ।
অথচ যেসময়ে ক্বাবার মধ্যে ছিল ৩৬০টা মুর্তিতে ভরপুর ।
অথচ মুহাম্মদে মক্কা বিজয়ের পরে যখন ক্বাবা থেকে সকল মুর্তি ভেঙ্গে ফেলে দেন তখনের পর থেকে যতবার ক্বাবায় আক্রমন হয়েছে ততবারই আল্লায় ক্বাবা রক্ষা থেকে তার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ।
হা হা
No comments