মানুষ যদি বানর থেকে আসে তাহলে এখন কার বানর কেন মানুষ হচ্ছে না?
মানুষ যদি বানর থেকে আসে তাহলে এখন কার বানর কেন মানুষ হচ্ছে না?
উত্তরঃ
আমাদের পরিচিত বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন অনেককেই এ প্রশ্নটি করতে শোনা যায় যে, জঙ্গলে গাছের ডালে বা চিড়িয়াখানার খাঁচার রড ধরে ঝুলে থাকা বাঁদর-শিম্পাঞ্জী গুলো থেকেই বুঝি মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এবং তাদের দাবী জীববিজ্ঞানী ডারউইন নাকি এটাই বলে গেছে যে বানর থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষ এসেছে ।যদিও তারা কখনোই বিবর্তনবাদ সম্পর্কে কারো কোন লেখা পড়ে দেখেনি ।শুধুমাত্র আমাদের দেশের বিকৃত মস্তিস্কের প্রানী টাইপের ওয়াজী মোল্লাদের বিকৃত ওয়াজে এই দুই লাইন শুনেই এটা ধরে নিয়েছে সেই মোল্লা বা হুজুরেরা সত্য বলেছে ডারউইন বলেছে মানুষ বানর থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে।
যাহোক, আসলে তো ব্যাপারটা তা নয়। আমরা আধুনিক বানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে, মাঙ্কি থেকে না । মানুষের উৎপত্তি বানর থেকে হলে প্রকৃতিতে এখনও বানর আছে কীভাবে - এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স...
যাহোক, আসলে তো ব্যাপারটা তা নয়। আমরা আধুনিক বানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নই। আমরা আসলে এসেছি বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে, মাঙ্কি থেকে না । মানুষের উৎপত্তি বানর থেকে হলে প্রকৃতিতে এখনও বানর আছে কীভাবে - এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স...
বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষ আর পৃথিবীর বুকে চড়ে বেড়ানো মানুষ এবং অন্যান্য বনমানুষগুলো অনেক অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ (common ancestor) হতে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তিত হয়ে আলাদা আলাদা প্রজাতির ধারা (lineage) তৈরি করেছে। এর মানে কিন্তু এই নয় পৃথিবীতে বিদ্যমান সব শিম্পাঞ্জিগুলো মানুষ হয়ে যাবে বা সব মানুষগুলো শিম্পাঞ্জি হয়ে যাবে। প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনকে একটা বিশাল গাছের সাথে তুলনা করা যায়। একই পূর্বপূরুষ থেকে উদ্ভুত হয়ে বিবর্তনের ওই গাছটির (জাতিজনি বৃক্ষ) বিভিন্ন ডাল পালা তৈরি হয়েছে । এর কোন ডালে হয়তো শিম্পাঞ্জির অবস্থান, কোন ডালে হয়ত গরিলা আবার কোন ডালে হয়ত মানুষ ।

অর্থাৎ, একসময় তাদের সবার এক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিলো, ১.৪ কোটি বছর আগে তাদের থেকে একটি অংশ বিবর্তিত হয়ে ওরাং ওটাং প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। তখন, যে কারণেই হোক, এই পূর্বপুরুষের বাকি জনপুঞ্জ নতুন প্রজাতি ওরাং ওটাং এর থেকে প্রজননগতভাবে আলাদা হয়ে যায় এবং তার ফলে এই দুই প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে তাদের নিজস্ব ধারায়।
আবার প্রায় ৯০ লক্ষ বছর আগে সেই মুল প্রজাতির জনপুঞ্জ থেকে আরেকটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং পরবর্তিতে ভিন্ন ধারায় বিবর্তিত হয়ে গরিলা প্রজাতির উৎপত্তি ঘটায়। একইভাবে দেখা যায় যে, ৬০ লক্ষ বছর আগে এই সাধারণ পুর্বপুরুষের অংশটি থেকে ভাগ হয়ে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির বিবর্তন ঘটে। তারপর এই দু’টো প্রজাতি প্রজননগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন থেকেই একদিকে স্বতন্ত্র গতিতে এবং নিয়মে মানুষের প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে, আর ওদিকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিম্পাঞ্জির সেই প্রজাতিটি ভিন্ন গতিতে বিবর্তিত হতে হতে আজকের শিম্পাঞ্জিতে এসে পৌঁছেছে।
সুতরাং কোন এক সাধারণ পুর্বপুরুষ থেকে দু’টো প্রজাতির উৎপত্তি ঘটলেই যে তাদের একটিকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে হবে বা এক প্রজাতির সবাইকে অন্য প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়ে যেতে হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম প্রকৃতিতে নেই।
মানুষ যদি বানর থেকে বিবর্তিত হবে তাহলে বানরগুলো এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেলো কি করে?
- এ প্রশ্নটি অনেকটা এরকম শোনায় - “যদি আমেরিকান এবং অস্ট্রেলিয়ানরা ইউরোপিয়ানদের থেকে এসে থাকে তবে এখনো ইউরোপিয়ান দেখা যায় কেন?” কিংবা “শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে আসলে এখনও কেন প্রাপ্তবয়স্ক দেখা যায়?”। এ ধরণের হাস্যকর প্রশ্নগুলোর মধ্যেই কিন্তু উত্তর লুকিয়ে আছে। আসলে নতুন প্রজাতি বিদ্যমান প্রজাতি থেকেই উদ্ভব হয়। কোন জনগোষ্ঠি যখন আলাদা হয়ে পড়ে, তখন কালের প্রবাহে তাদের পরিবর্তনগুলো একসময় পুঞ্জীভুত হয়ে আলোচ্য জনগোষ্ঠীকে তাদের মূল জনপুঞ্জ থেকে আলাদা করে ফেলে। তাদের পুর্বসূরী কোন কারণে বিলুপ্ত যেমন হয়ে যেতে পারে, তেমনি আবার বেঁচে থাকাটাও অস্বাভাবিক কোন ব্যাপার নয়। উভচর প্রানী বিবর্তিত হয়ছে জলজ মৎস জাতীয় প্রানী হতে। তার মানে এই নয় যে, সব মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আবার সরিসৃপ বিবর্তিত হয়েছে উভচর প্রানী থেকে, আর স্তন্যপায়ী প্রানী বিবর্তিত হয়েছে সরিসৃপ থেকে। স্তন্যপায়ী প্রানীর বিবর্তন ঘটেছে বলেই এটা মনে করা ঠিক নয় যে, উভচর কিংবা সরীসৃপদের সবাইকে নিমেষেই মারা যেতে হবে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
No comments