Header Ads

Header ADS

ইসলামের নবী মুহাম্মদের জন্মস্থান কি আসলেই বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায়?

 ইসলামের নবী মুহাম্মদের জন্মস্থান কি আসলেই বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায়?

আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে আসছি যে নবি মুহাম্মদ বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহন করেন ৫৭০ খ্রিঃ ,এবং এটাই মুসলিম মহলে প্রতিষ্ঠিত এবং সমস্ত ইসলামিক কিতাব সহ গুগল ,উইকিপিডিয়ায় এটাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ,কিন্তু আসলেই কি তিনি বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায় জন্মেছিলেন  এবং মক্কায় ৫৩ বছর কাটানোর পরে মদীনায় হিজরত করেছিলেন?

এ বিষয়ে কুরান হাদীস এবং সীরাতে কি বলে?

আজ আমরা কুরান হাদীস এবং সীরাত থেকে দেখব যে আসলেই কি মুহাম্মদে বর্তমান সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহন করে মদীনায় হিজরত করেছিলেন কিনা এবং কুরান হাদীস এবং সীরাতের বর্ননার সাথে সেসব স্থানের ভৌগলিক অবস্থা এবং দুরত্ব দেখব যে আসলেই কি সেই ১৪০০ বছর আগের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেটা কোনভাবে সম্ভব হবে কিনা ?

মুহাম্মদের জন্মের আগেঃ
প্রথমেই আমরা দেখব মুহাম্মদে জন্মেছিলেন কোথায় এবং তার জন্মকে কেন্দ্র করে জন্মের পূর্বেই যেসকল ঘটনার বর্ননা পাওয়া যায় সীরাত এবং হাদীসে সেটা আসলে কি ছিল এবং সেখানে বর্নিত স্থান গুলো বর্তমানে কোথায় এবং কত দুরত্বে আছে ।

ইসলামের মত অনুসারে মুহাম্মদে ৫৭০ সালের ২৯ জুন মক্কার কুরাইশ গোত্রে জন্ম গ্রহন করেছিল ।তার এই জন্মকে কেন্দ্র করে জন্মের আগে থেকেই নানাবিধ গল্প বা অলৌকিক কাহিনিও পাওয়া যায় যেগুলো নাকি তার আগমন উপলক্ষে ঘটেছিল ।তার মধ্যে একটি হচ্ছে সে তার মাতা আমিনার গর্ভে থাকাকালীন সময়ে আমিনা এক রাতে স্বপ্নে দেখলেন সিরিয়ার বুশরা শহর থেকে একটা আলো বেরিয়ে এসে বুশরার দুর্গকে আলোকিত করেছে ।

(আল তাবারী, ভলিউম- ৫, পৃষ্ঠাঃ২৬৯-২৭০)

ইবনে সাদের বর্ননায় পাওয়া যায়ঃইবনে সাদ হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মা বলেছেন, যখন তাঁর জন্ম হয়েছিলো, তখন আমার শরীর হতে এক জ্যোতি বের হয়েছিলো, যাতে শামদেশের অট্টালিকাসমূহ আলোকিত হয়েছিলো।, কিসরা-প্রাসাদের চৌদ্দটি সৌধচূড়া ভেঙে পড়ে; প্রাচীন পারসিক যাজকমণ্ডলির উপাসনাগারগুলোতে যুগ যুগ ধরে প্রজ্জ্বলিত-হয়ে-আসা অগ্নিকুণ্ডগুলো নির্বাপিত হয়ে যায়; বাহিরা পাদরিগণের সরগম গির্জাগুলো নিস্তেজ ও নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে; — এসব বর্ণনা হচ্ছে ইমাম বায়হাকি, তাবারি এবং অন্যান্যদের।

তো উপরোক্ত বর্ননা থেকে আমরা দুটি স্থানের সন্ধান পেলাম । একটা হচ্ছে মক্কা আরেকটি হচ্ছে সিরিয়ার বুশরা।

উপরের বর্ননায় বলা হয়েছে সিরিয়ার বুশরা শহর থেকে একটা আলো বেরিয়ে এসে বুশরার দুর্গকে আলোকিত করেছে এবং সেটা মুহাম্মদের মাতা আমিনা দেখেছেন ।

এখন আমরা দেখে নিই সিরিয়ার বুশরা থেকে মক্কার দুরত্ব কত?

এখানে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আমরা দেখতে পেলাম সিরিয়া থেকে মক্কার দুরত্ব বিমান পথে ১২৮৭ কিঃমিঃ এবং সড়ক পথে ১৯৯০ কিঃমিঃ

 


                                                                  

তো পৃথিবী যেহেতু গোল সেহেতু  এই দুরত্ব থেকে স্বভাবতই কোনভাবেই কোন আলোর ঝলকানি কারো পক্ষে দেখা সম্ভব না।সাধারন আমাদের ঢাকা থেকে খুলনার দুরত্ব ২৭১ কিঃমিঃ ,অথচ এই সামান্য দুরত্ব থেকেই খুলনায় কোন আলোর ঝলকানি দিলে সেটা ঢাকা থেকে দেখা সম্ভবনা ।তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায় এই বিশাল দুরত্বের মাঝে বুশরার আলোর ঝলকানি কিভাবে মক্কা থেকে দেখলো? প্রশ্নটা রেখে সামনে এগিয়ে দেখা যাক আমাদের জন্য সামনে কি হাতছানি দিচ্ছে।

সুরা ফীল সমাচারঃ
আমরা জানি সুরা ফীল কুরানের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ন সুরা ।এর সাথে মুসলমানদের একটি পৈশাচিক আনন্দ লুকিয়ে রয়েছে ।কেননা এই সুরাটি নাজিল হয়েছিল মুসলমানদের হেডকোয়ার্টার ক্বাবা শরীফ আক্রমন  তথা দখলের হাত থেকে রক্ষা নিয়ে ।
কিভাবে আল্লায় অমুসলিমদের হাত থেকে তথা ইয়েমেনের বাদশা ও তার হস্তী বাহিনীর হাত থেকে  ক্বাবা রক্ষা করেছিল আল্লায় তার ছোট ছোট আবাবিল পাখিদের মাধ্যমে সেই বর্ননা দিয়েই আল্লায় এই সুরা নাজিল করেছিল।

তো আগেই আমরা কুরান থেকে সুরা ফীলের আয়াত ও তার বর্ননা দেখে নিবঃ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ
আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? [ সুরা ফীল ১০৫:১ ]
أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ
তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেননি? [ সুরা ফীল ১০৫:২ ]
وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ
তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী, [ সুরা ফীল ১০৫:৩ ]
تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ
যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল। [ সুরা ফীল ১০৫:৪ ]
فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولٍ
অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন। [ সুরা ফীল ১০৫:৫ ]

অর্থাৎ উক্ত আয়াতের মাধ্যমে এটাই বুঝানো হয়েছে যে ইয়েমেনের বাদশা আবরাহা তার সৈন্যবাহিনি নিয়ে মক্কা আক্রমন করতে যায় এবং আল্লায় তার আবাবিল পাখি দ্বারা ক্বাবা রক্ষা করেন।
আবরাহা ছিল ইয়েমেনের প্রথমে গভর্নর এবং পরে স্বাধীন রাজা হিসাবে ইয়েমেন শাষন করেন।আবরাহার শাষনকাল ছিল ৫২৫  - ৫৭০ পর্যন্ত।নাজ্জাশির সেনাপতি হিসাবে ২৫ বছর বয়সে সে শাষনভার গ্রহন করে এবং পরে সে ৭০ বছর বয়সে মক্কা আক্রমন কালে তার হস্তীবাহিনী হারাম শরীফের কাছে ওয়াদীহে মোহাসসাবে ধ্বংস্প্রাপ্ত হয় ।তার পুরো নাম আবরাতাতুল আশরাম,যাকে নাককাটা আবরাহা বলেও ডাকা হতো ।কেননা কোন এক যুদ্ধে তার নাক ও গাল কেটে যায় ।
তো ইসলামিক স্কলারদের দাবী অনুসারে এই আবরাহার ক্বাবা আক্রমনের কারন নাকি ছিল জেলাসি বা হিংসা থেকে । ক্বাবার জনপ্রিয়তা দেখে সে হিংসায় সহ্য করতে না পেরে সেরকম আরেকটি ক্বাবা নির্মান করে তার রাজ্যের সানা নামক একটি যায়গায় ।এবং সে ঘোষনা দেয় এখন থেকে সবাই খানায় ক্বাবায় তাওয়াফ না করে তার নবনির্মিত ক্বাবায় যেন সবাই তাওয়াফ করে ।
 তো আবরাহা খানায় ক্বাবা ধ্বংসের জন্য যে কারনে জ্বলে উঠেছিলেনঃ
 তাদের মধ্যে বনি কেনানের এক ব্যক্তি কোন প্রকারে ওই ক্বাবার সেবায় নিযুক্ত হয় ।কিন্তু কোন এক রাতে সে ঐ ঘর ( নব নির্মিত ক্বাবা)র মধ্যে পায়খানা করে পালিয়ে গেলে সেই ক্ষোভে আবরাহা ক্বাবা ( মক্কার) জ্বালিয়ে দিতে ঔদ্বত হয়।

আবার অপর এক বর্ননায় পাওয়া যায় যে, আরবরা এক স্থানে আগুন জ্বালিয়েছিল তার অগ্নি শিখা বাতাসে উড়ে গিয়ে ঐ নব নির্মিত ক্বাবায় লাগে । এবং এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে লোকেদের ঐ নতুন ক্বাবা তাওয়াফ করতে কুন্ঠাবোধ দেখা দেয়।আর আবরাহা এই খবর শুনে ক্রোধে জ্বলে উঠে খানায় ক্বাবা ধ্বংসের জন্য ঔদ্বত হয়ে সে তার হস্তীবাহিনী নিয়ে ক্বাবা  ধ্বংসের জন্য রওনা হয়।আবরাহা তার বাহিনীসহ কাবা ধ্বংসের জন্য যাত্রা করে মক্কা হতে কিছু দূরে অবস্থিত ‘মোগাম্মাম’ নামক স্থানে পৌঁছে একজন নেতাকে নির্দেশ দেয় যেন সে আরবদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দেয় এবং প্রথমে আরবদের পশু পাল ধরে আনতে বলে। ইতোমধ্যেই যেসব আরব গোত্র আবরাহার গতিরোধ করেছিল তাদেরকে সে পরাজিত করে। ঐ সময় কাবার সর্দার ছিলেন মুহাম্মদের  দাদা আবদুল মোত্তালেব। আবরাহা বাহিনী মক্কা অবরোধকালে তার দু’শ উট লুট করে নিয়ে যায়।
যেসব আরব গোত্র তার গতিরোধ করেছিল আবরাহা তাদেরকে পরাজিত করে হারাম শরীফের নিকটবর্তী ‘ওয়াদীয়ে মোহাস্সাব’ নামক স্থানে সৈন্য ও হস্তি বাহিনীসহ অবস্থান করে। আবরাহার নির্দেশে হস্তি বাহিনীকে কাবার দিকে পরিচালিত করা হলে ওরা অগ্রসর না হয়ে থেমে যায়। কোরেশগণ বায়তুল্লাহ শরীফের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না করে আবদুল মোত্তালেবের সঙ্গে মক্কার একটি পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং কাবা রক্ষার দায়িত্ব আল্লাহর উপর সমর্পণ করেন। তিনি আবরাহার মক্কায় আগমনের এবং তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে আবরাহার নিকট গমন করেন এবং তাঁর অভিযোগ জানান। আবরাহা তাকে সাদরে স্বাগত জানিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমরা আপনাদের কাবা ধ্বংস করার জন্য এসেছি অথচ আপনি সে সম্পর্কে কিছুই বলছেন না, আপনার উট ফেরত চাচ্ছেন।’ আবদুল মোত্তালেব জবাবে বলেন, ‘উট আমার, আমি সেগুলোর মালিক। এ জন্য সেগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি এসেছি। কাবার ব্যাপার হচ্ছে, এর মালিক অপর কেউ, তিনিই এর হেফাজত করবেন।’ এতে আবরাহা স্তম্ভিত হয়ে তাঁর উটগুলো ফেরত দেয়।

Image result for আবাবিল পাখি
এ কথাবার্তার পর আবদুল মোত্তালেব তাঁর কতিপয় সঙ্গীসহ খানা-ই-কবায় আগমন করেন এবং দোয়া করতে থাকেন। এই সময় তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন। কবিতার মর্ম হচ্ছে; ‘হে আল্লাহ! বান্দা তার নিজের ঘর রক্ষা করে থাকে, তুমিও তোমার ঘর রক্ষা কর।’ আবদুল মোত্তালেব দোয়া করে তার সাথী সঙ্গীগণসহ পর্বতে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বর্ণিত আছে, দ্বিতীয় দিন ভোরে আবরাহা বাহিনী কাবা ধ্বংসের জন্য অগ্রসর হয় এবং সঙ্গে আনা হাতিগুলোও অগ্রসর হয়। হাতিগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ হাতিটি সকলের আগে আগে চলছিল। কাবা গৃহের অতি সন্নিকটে উপস্থিত হয়েই মাহমুদ নামের হাতিটি হঠাৎ আপন সৈন্যগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাদেরকে পদদলিত করে পশ্চাৎ দিকে ধাবিত হতে লাগল। অন্যান্য হাতিও তাদের প্রধান সেনাপতি মাহমুদের অনুসরণ করে। হস্তি চালকরা প্রাণপণ চেষ্টা করেও ওদেরকে কাবামুখী করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। আবরাহা বিফল মনোরথ হয়ে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করতে লাগল। কোরেশগণ পাহাড়ের উপর হতে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে সমুদ্রের দিক হতে সবুজ বর্ণের ঘাড় বিশিষ্ট একদল কৃষ্ণ বর্ণের পাখির আবির্ভাব ঘটল। ওরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে উড়ে আবরাহার সৈন্যদের উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রস্তরকণা বর্ষণ করতে লাগল।
Image result for আবাবিল পাখি

প্রতিটি পাখি (আবাবীল) তার চঞ্চুতে একটি এবং দুই পায়ে দুইটি, এই তিনটি প্রস্তর খণ্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। ঐ প্রস্তর খণ্ডের এক একটির উপর কাবাগৃহ আক্রমণকারী এক একটি সৈনিকের নাম লেখা ছিল। যে পাথরে যার নাম ছিল, সেই পাথরই তার মস্তকে পতিত হয়েছিল। প্রস্তরখণ্ড মস্তকে পতিত হয়ে শরীর ভেদ করে অপরদিক দিয়ে নির্গত হয়েছিল। এভাবে আবরাহার সমস্ত সৈন্য ধ্বংস হয়ে যায়। পরে একইভাবে আবরাহারও পতন ঘটে বলে বর্ণিত আছে।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, আবরাহা বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা কত ছিল, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারও কারও মতে সৈন্য সংখ্যা ছিল চল্লিশ হাজার। মাহমুদ নামক হাতিটি আবরাহার বিশেষ সোয়ারী ছিল। অবশ্য প্রাচীন আরব কবিদের রচনায় আবরাহার সৈন্যসংখ্যা ষাট হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কবির মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে জারারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বলা হয়ে থাকে, ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল আরিয়াত সত্তর হাজার সৈন্য নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল। এ জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছেন যে, আরব কবির বর্ণনায় আশ্চর্যের কিছু নেই। কেননা সৈন্য সংখ্যা উক্ত কবির মতে সঠিক। কারণ আবরাহা ছিল আরিয়াতের নায়েব ও হত্যাকারী, সে ইয়েমেনে দশ হাজার সৈন্য রেখে ষাট হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কায় এসেছিল। এই ষাট হাজর সৈন্যের মধ্যে কেউ রক্ষা পায়নি, সকলেই নিহত হয়েছিল। কেউ কেউ মুমূর্ষ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলেও শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
তথ্যসূত্রঃ ( https://bit.ly/2vzZAda )


তো এই ছিল আরবের মক্কার ক্বাবা আক্রমন এবং আবরাহার থেকে ক্বাবা ধ্বংসের হাত  থেকে রক্ষার ইতিহাস ,যেটাকে কেন্দ্র করে সুরা ফীল নাজিল হয়েছে ।
তো উপরোক্ত বর্ননার ভিত্তিতে যে প্রশ্নগুলি জন্ম নেয় এবং যে প্রশ্নগুলির উত্তরেই বলে দেয় যে ঐ সমস্ত হাতী নিয়ে  ক্বাবা আক্রমন এবং তার হাত থেকে আল্লার ক্বাবা রক্ষার গল্পটা ছিল নিছকই গল্প কিংবা কিচ্ছা কিংবা আরব্য রজনীর গল্পই মাত্র,কোন সত্য বা বাস্তবে কোন এরুপ কিছু নয় ,অথবা এই আক্রমন হয়েছিল ইয়েমেনের খুবই নিক্টস্থ বা কাছাকাছি কোন অঞ্চলের মাঝেই যেখানে ইয়েমেন থেকে হাতী নিয়ে খুব সহজেই যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল।

কেননাঃ
            আমরা জানি যে, ইয়েমেনের রাজধানী সানা  থেকে মক্কার দুরুত্ব হচ্ছে ১০৩৪ কিঃমিঃ।
যেখানে এই সময়ের আধুনিক প্রযুক্তির বাসে যেতেই সময় লাগে ১৪ ঘন্টা ।
যেহেতু ঐ ১৪০০ বছর আগে হেটে যাওয়া অথবা ঘোড়া ছাড়া অন্য কোন উপায়ে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিলনা সেহেতু সেখানে তাদের হেটে যেতে সময় লাগবে মিনিমাম ১০ দিন।

অথচ তারা সেখানে নাকি হাতি নিয়ে গিয়েছিল আক্রমন করতে ।
কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছেন যে মক্কা এবং ইয়েমেনের ভৌগলিক অবস্থান কিরুপ?
হাতী হচ্ছে একটা তৃনভোজী প্রানী ,আর ইয়েমেন এবং মক্কা হচ্ছে বালুকা মরু অঞ্চল ,যেখানে নেই কোন তৃনের সমারোহ এবং নেই কোন পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা ।তাহলে সেখানে তারা হাতী নিয়ে এই লম্বা মরুর পথ কিভাবে পাড়ি দিল ?
আপনি কি জানেন যে ,একটা হাতি ১৪ ঘন্টার বেশি পানি ছাড়া চলতে পারেনা এবং সর্বোচ্চ একটি হাতী ৪ দিনের বেশি পানি ছাড়া  বাচতে পারেনা । ( https://africageographic.com/blog/elephants-dig-water/ )
তাহলে সেখানে ইয়েমেন থেকে মক্কায় কিভাবে হাতি নিয়ে গেল?
তাছাড়া আরো মেজর আরেকটি কারন হচ্ছে ইয়েমেন এবং মক্কার যাতায়াতের পথে রয়েছে অসংখ্য নুড়ি পাথরে ভরপুর বালুকা ,পাথুরে রাস্তা ।কোন হাতী এরকম রাস্তায় চলতে পারেনা ।কারন হাতির পায়ে কোন ক্ষুর নেই গরু কিংবা ঘোড়ার মত ।যারফলে হাতির পায়ের নিচে যেখানে একটা বরই এর বিচি পড়লেই হাতি হাটতে পারেনা ,সুয়ে পড়ে রাস্তার মাঝে ,সেখানে ওই পাথরের মধ্যে দিয়ে তারা হাতী নিয়ে কিভাবে গেল?

যেখানে ইয়েমেনের ২০০০ বছরের মধ্যেও কোথাও কেউ কোনদিন হাতি পালন করেছে বলে সেখানে কোন রেকর্ড নেই ।কেননা সেখানে নেই পর্যাপ্ত পানি এবং তৃন বা ঘাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ,তাহলে তারা হাতী পেল কোথায়?একটা  হাতির একদিনে ২০০ লিটার পানির দরকার হয়, অথচ ইয়েমেন থেকে মক্কায় পানির ব্যবস্থা কি?
যেখানে মানুষেই পানির অভাবে তৃষ্ণার্ত হয়ে  , গরমে ডিহাইড্রেশনের কারনে মারা যায়,সেখানে  তারা কিনা হাতী নিয়ে গিয়েছিল ? আজব (!)
এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলে থাকেন যে আবরাহা আবিসিনিয়া থেকে ৫টি মতান্তরে ১১ টি হাতি নিয়ে এসেছিল ।
যাহোক, যদি আবরাহা হাতি আবিসিনিয়া থেকে নিয়েও আসে তাতেও অনেক অকাট্য প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায় ,যার উত্তর আপনি কোনভাবেই মেলাতে পারবেননা ।
উপরোক্ত ভৌগলিক এবং প্রাকৃতিক বিষয় গুলো বিবেচনা এবং যৌক্তিকভাবে চিন্তা করলে উত্তর আসবে একটাই যে হাতি নিয়ে মক্কা আক্রমনের ইতিহাস একটা গাল গল্প বৈ কিছুই নয় কিন্তু এতসবের পরেও  আমাদের এটা মেনে নিতে ই হবে যে আবরাহা মক্কায় হাতি নিয়েই আক্রমন করেছিল কারন তারপক্ষে কিছু প্রমানও পাওয়া যায় । আর সেটা হচ্ছে বেলাল ।
আব্রাহা ইয়েমেন থেকে মক্কায় গিয়ে আক্রমন যে করেছিল সেটার একটা প্রমান হচ্ছে হজরত বেলাল ,
কেননা বেলালের জন্মস্থান মক্কায় হলেও সে ছিল মুলত আবিসিনিও বংশভুত ।আব্রাহার হামলার সময়ে তার পিতা রাবাহ  এবং মাতা  হামামাহ ছিলেন একজন প্রাক্তন আবিসিনিয় রাজকুমারী, যাকে আমুল-ফিল এর ঘটনার সময় আটক করে দাসী করে রাখা হয়। দাস হিসেবে জন্মানোয়, বিলাল (রা:) কেও তার মনিব উমাইয়া ইবন খালাফ এর জন্য কাজ করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন বলে বিলাল (রা:) একজন ভাল দাস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার কাছেই আরবের পুতুলগুলোর ঘরের চাবি থাকতো। কিন্তু বর্ণবাদ এবং আরবের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সেসময় তিনি সমাজের উচুস্তরে যেতে পারেননি।
উপরোক্ত বেলালের ঘটনার বিবেচনা করলে বুঝা যায় যে আব্রাহার হস্তী বাহিনির ঘটনা ঘটেছিল কিন্তু বর্তমান মক্কা এবং ইয়েমেনের দুরত্ব এবং ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক অবস্থান  এবং চিত্র বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে যে এই দুরত্বে এবং এই পরিবেশে কোনভাবেই হাতী নিয়ে মক্কায় আক্রমন করতে যাওয়া সম্ভব নয় ।তাহলে এই প্যারাডক্সের সমাধা কি হতে পারে ?
চলুন আরো কিছু বিষয় দেখে নিই সেগুলো আমাদের কি সমাধান দেয় এই প্যারাডক্স / রহস্যের ।

কুরানে বর্নিত মক্কার ভৌগলিক অবস্থা / পরিবেশ কেমনঃ

এখন আমরা দেখব মুহাম্মদে যে মক্কায় জন্মেছে সেই মক্কার সম্পর্কে কুরানে কি ধরনের বর্ননা পাওয়া যায় ।সেই অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থান কেমন ছিল এবং কি কি প্রাকৃতিক ফসলাদি ,পশু ,এবং মানুষের কাজের ব্যবস্থা কেমন ছিল?

কুরানে যে ফল গুলোর বর্ননা পাওয়া যায় সেগুলো কি কি সেটা একটু দেখে নেওয়া যাকঃ



কুরানে বর্নিত মোট ৬ টি ফলের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। ফল গুলো হচ্ছেঃ খেজুর,জলপাই,আঙ্গুর,ডুমুর,আনার ও কলা

এছাড়াও কুরানে বর্নিত মক্কায় ফলের বাগান,শস্যক্ষেত,ঝর্না,জঙ্গল ইত্যাদির বর্ননা পাওয়া যায়।

উপরের ফল গুলোর নাম দেখে এবং মক্কার ভৌগলিক অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই এতক্ষনে মনে মনে এক তিল্লি হেসে নিয়েছেন যে মক্কার যে ভৌগলিক অবস্থা তাতে কিভাবে এই ধরনের ফল সেখানে জন্মে ?

মক্কা সম্পূর্ন একটা পাথুরে পাহাড় বেস্টিত মরু অঞ্চল সেখানে এই আধুনিক যুগে এসে কৃত্রিম পানির ব্যাবস্থা করেও তেমন একটা গাছপালা জন্মানো সম্ভব হয়নি যেখানে সেখানে এই ধরনের ফল এবং ফসল কিভাবে কুরানে এলো?

মক্কার ১৪০০ বছরের ইতিহাসে কোথাও এই ধরনের ফল এবং বর্নিত শস্যক্ষেত,ফলের বাগান ,জঙ্গল ইত্যাদি কোথাও পাওয়া যায়নি ,ইভেন এখনো দেখা যায়না কোথাও ।বর্তমান সোউদি সরকারে বিপুল টাকা খরচ করে কিছু গাছ পালা লাগিয়েছে মক্কা এলাকায় যেখানে পরিচর্জার জন্য লোক রাখা হয়েছে সকাল বিকাল দুইবেলা মেশিনের সাহায্যে পানি দেওয়ার জন্য ।পানি না পেলেই সেগুলো মারা যাবে ।তাহলে সেই ১৪০০ বছর আগে কিভাবে এই ধরনের ফল ও ফসলাদি সেখানে জন্মাবে ।

প্রশ্নটা নিশ্চয়ই এড়িয়ে যেতে পারেননি আপনিও ।

চলুন আমরা দেখে নিই এই ফল গুলো এবং উপরে আলোচিত পরিবেশের কথা কুরানের কোন কোন সুরার কোন কোন্ আয়াতে বলা হয়েছে?

২৩:১৯ فَاَنۡشَاۡنَا لَکُمۡ بِهٖ جَنّٰتٍ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ ۘ لَکُمۡ فِیۡهَا فَوَاکِهُ کَثِیۡرَۃٌ وَّ مِنۡهَا تَاۡکُلُوۡنَ ﴿ۙ۱۹﴾فانشانا لکم بهٖ جنت من نخیل و اعناب ۘ لکم فیها فواکه کثیرۃ و منها تاکلون ﴿ۙ۱۹﴾

তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগানসমূহ সৃষ্টি করেছি। তাতে তোমাদের জন্য প্রচুর ফল থাকে। আর তা থেকেই তোমরা খাও। আল-বায়ান

দেখুন এখানে খেজুর এবং আঙ্গুরের বাগানের কথা বলা হয়েছে , অথচ মক্কার যে ভৌগলিক পরিবেশ তাতে সেখানে আঙ্গুরের বাগান তো দুরের কথা সাধারন ঘাষপাতাও জন্মানো সম্ভব না । আর খেজুর ??

খেজুরের কথা দেখে হয়তো বলতে পারেন যে খেজুর তো সৌদিতে পাওয়া ই যায়,যারা হজ্জ করতে যায় তারা তো সৌদি থেকে আসার সময় খেজুর নিয়েই আসে ।যদি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন ,কেননা খেজুর মক্কা অঞ্চলে হয়না ,মদীনা অঞ্চলে হয়।খেজুর গাছ জন্মানর জন্য যে পরিবেশ দরকার সেটা মক্কায় নেই , আছে মদীনায় ।আর এই সুরাটা মাক্কী সুরা এবং উক্ত আয়াত মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যেই নাজিল হয়েছিল মক্কায় থাকা কালীন সময়ে মুহাম্মদে।

যাহোক সামনে এগিয়ে দেখা যাকঃ সুরা ইয়াসিন(৩৩-৩৫)

৩৬:৩৩ وَ اٰیَۃٌ لَّهُمُ الۡاَرۡضُ الۡمَیۡتَۃُ ۚۖ اَحۡیَیۡنٰهَا وَ اَخۡرَجۡنَا مِنۡهَا حَبًّا فَمِنۡهُ یَاۡکُلُوۡنَ ﴿۳۳﴾و ایۃ لهم الارض المیتۃ ۚۖ احیینها و اخرجنا منها حبا فمنه یاکلون ﴿۳۳﴾

আর মৃত যমীন তাদের জন্য একটি নিদর্শন, আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তা থেকে শস্যদানা উৎপন্ন করেছি। অতঃপর তা থেকেই তারা খায়। আল-বায়ান

৩৬:৩৪ وَ جَعَلۡنَا فِیۡهَا جَنّٰتٍ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ وَّ فَجَّرۡنَا فِیۡهَا مِنَ الۡعُیُوۡنِ ﴿ۙ۳۴﴾و جعلنا فیها جنت من نخیل و اعناب و فجرنا فیها من العیون ﴿ۙ۳۴﴾

আর আমি তাতে খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান তৈরী করেছি এবং তাতে কিছু ঝর্নাধারা প্রবাহিত করি। আল-বায়ান৩৬:৩৫ لِیَاۡکُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖ ۙ وَ مَا عَمِلَتۡهُ اَیۡدِیۡهِمۡ ؕ اَفَلَا یَشۡکُرُوۡنَ ﴿۳۵﴾لیاکلوا من ثمرهٖ ۙ و ما عملته ایدیهم افلا یشکرون ﴿۳۵﴾

যাতে তারা তার ফল খেতে পারে, অথচ তাদের হাত তা বানায়নি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? আল-বায়ান

অর্থাৎ এখানে উপরোক্ত তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে আল্লায় মৃত পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করে তাতে শস্য উতপন্ন করে , খেজুর এবং আঙ্গুরের বাগান জন্মায় এবং প্রবাহিত করে ঝর্নাধারা যা তারা ( কুরাইশরা/ মক্কাবাসী) খায় ,যেগুলো তারা তাদের নিজেদের হাতে সৃষ্টি করেনি।

অথচ বর্তমান মক্কার অবস্থাটা একটু দেখেন তো সেখানে কোন ফসল জন্মায় কিনা ?

সেখানে কোন ফসল তো দুরের কথা সামান্য ঘাশপাতাও জন্মায়না মক্কা অঞ্চলে ।যারা সৌদিতে গেছেন তারা নিশ্চয় এই দৃশ্য নিজের চোখেই দেখে আসছেন। সেখানে কোন ঝর্নাধারা তো দুরের কথা সামান্য একটা খাল কিংবা নদীও নেই ।

তাহলে কি কুরানের এই বর্ননার সাথে সৌদির মক্কার কোন মিল খুজে পাচ্ছেন?

না পেলে সামনে চলেন দেখি কিছু পাওয়া যায় কিনা কোথাও কিছু।

(সুরা আবাসা ২৪-৩২)

৮০:২৪ فَلۡیَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ اِلٰی طَعَامِهٖۤ ﴿ۙ۲۴﴾فلینظر الانسان الی طعامهٖ ﴿ۙ۲۴﴾

কাজেই মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। 

৮০:২৫ اَنَّا صَبَبۡنَا الۡمَآءَ صَبًّا ﴿ۙ۲۵﴾انا صببنا الماء صبا ﴿ۙ۲۵﴾

নিশ্চয় আমরা প্রচুর পরিমাণে পানি বর্ষণ করি। 

৮০:২৬ ثُمَّ شَقَقۡنَا الۡاَرۡضَ شَقًّا ﴿ۙ۲۶﴾ثم شققنا الارض شقا ﴿ۙ۲۶﴾

তারপর যমীনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি। আল-

৮০:২৭ فَاَنۡۢبَتۡنَا فِیۡهَا حَبًّا ﴿ۙ۲۷﴾فانۢبتنا فیها حبا ﴿ۙ۲۷﴾

অতঃপর তাতে আমরা উৎপন্ন করি শস্য

৮০:২৮ وَّ عِنَبًا وَّ قَضۡبًا ﴿ۙ۲۸﴾و عنبا و قضبا ﴿ۙ۲۸﴾

আঙ্গুর ও শাক-সবজি, 

৮০:২৯ وَّ زَیۡتُوۡنًا وَّ نَخۡلًا ﴿ۙ۲۹﴾و زیتونا و نخلا ﴿ۙ۲۹﴾

যায়তূন ও খেজুর বন,

৮০:৩০ وَّ حَدَآئِقَ غُلۡبًا ﴿ۙ۳۰﴾و حدائق غلبا ﴿ۙ۳۰﴾

ঘনবৃক্ষ শোভিত বাগ-বাগিচা, 

৮০:৩১ وَّ فَاکِهَۃً وَّ اَبًّا ﴿ۙ۳۱﴾و فاکهۃ و ابا ﴿ۙ۳۱﴾

আর নানান জাতের ফল আর ঘাস-লতাপাতা।

৮০:৩২ مَّتَاعًا لَّکُمۡ وَ لِاَنۡعَامِکُمۡ ﴿ؕ۳۲﴾متاعا لکم و لانعامکم ﴿۳۲﴾

তোমাদের আর তোমাদের গৃহপালিত পশুগুলোর ভোগের জন্য। 

সুরা আবাসার ২৪-৩২ আয়াতের বর্ননা শুনে কি আকাস থেকে পড়লেন??

হ্যা সেটাই পড়ার কথা ,কেননা উপরে মক্কা সম্পর্কে যে বর্ননা গুলো আমরা পাইলাম তার সাথে সৌদি আরবের মক্কার কোন মিল ই নাই ।

উপরের আয়াত গুলোতে মক্কার বর্ননার মধ্যে বলা হয়েছে মক্কায় তারা( মক্কাবাসী) তাদের খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করে দেখুক যেখানে তিনি প্রচুর পরিমানে পানি বর্ষন ( বৃষ্টি) করে থাকে, জমিতে বিদীর্ন / ফাটল (চাষাবাদ) করে থাকে, তারপর তাতে শস্য বা ফসল উতপন্ন করে যারমধ্যে আছে আঙ্গুর এবং শাক সবজি, যয়তুন, খেজুর গাছ, ঘনবৃক্ষে পরিপূর্ন উদ্যান / বাগান/ শোভিত বাগ বাগিচা, নানাজাতের ফল, ঘাস এবং লতাপাতা  যেগুলো তাদের গৃহপালিত পশুদের খাইয়ে থাকে। এবার আপনারা একটু মক্কার অবস্থার সাথে উক্ত বর্ননার একটু মিলিয়ে দেখেন তো সেখানে কোথাও এই ধরনের ঘন গাছপালার বাগান বা জঙ্গল , ঘাসপাতা , আঙ্গুর শাকসব্জি , খেজুর, যয়তুন এবং গৃহপালিত চতুস্পদ জন্তু আছে নাকি??

হারিকেন ধরিয়েও কোথাও এরকম চিত্র সৌদি আরবের মক্কায় কোথাও খুজে পাবেননা ।

আবার আমরা সুরা আনয়ামের ১৪১ নাম্বার আয়াত থেকে পাইঃ

৬:১৪১ وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّ غَیۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّ النَّخۡلَ وَ الزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُکُلُهٗ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِهٍ ؕ کُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ اٰتُوۡا حَقَّهٗ یَوۡمَ حَصَادِهٖ ۫ۖ وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۙ 

আর তিনি (আল্লাহ) যিনি লতাগুল্ম বিশিষ্ট আর লতা-বিশিষ্ট নয় এমন উদ্যানরাজি, খেজুর গাছ ও বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য, একই ধরনের ও আলাদা ধরনের যায়তুন ও ডালিম সৃষ্টি করেছেন। যখন ফল ধরে তখন ফল খাও, আর ফসল তোলার দিন (নির্ধারিত ওশর ও অনির্ধারিত দানের মাধ্যমে) হক আদায় কর, অপচয় করো না, নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। 

সারা সৌদি আরবের কোথাও কি এই ধরনের লতাবিশিষ্ট কোন ফসল জন্মে কোথাও ?

কোথাও কি আনার বা ডালিম ফল জন্মায়?

কোনদিন শুনছেন ?

একটু খোজ নিয়ে দেখেন তো কোথাও সেটা খুজে পান কিনা ?

ডালিম গাছ তো দুরের কথা সারা সৌদি আরব খুজে একটা ডালিমের পাতাও খুজে পাবেননা ।তাহলে ?

খটকা লাগেনা ?

এরপরেও কি মনে হয় যে এই সৌদি আরবের মক্কায় ই মুহাম্মদে জন্মেছে ?

নাকি ভাবছেন যে এগুলো মক্কার কথা বলেনি অন্য যায়গার কথা বলেছে বা সারা পৃথিবির কথা বলেছে ?

যদি এরকম ভেবে থাকেন তাহলে আপনার এই ভাবনায় এক বালতি ঠান্ডা পানি সেই কুরান থেকেই ঢেলে দেই যেখানে বলা হয়েছে মুহাম্মদকে সারা পৃথিবির জন্য নয় বরং আরবী ভাষাভাষির লোকেদের জন্য এবং মক্কাবাসীর জন্য ই তাকে সতর্ক করতে পাঠানো হয়েছে। ফলে কুরানে যা কিছু আছে ,যাদের উদ্দেশ্যে আছে তার সবটাই মক্কাবাসীদের জন্য , কোন চীন জাপান রাশিয়া আমেরিকা ভারত বাংলাদেশের লোকেদের জন্য না।

দেখুনঃ

১৪:৪ وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهٖ لِیُبَیِّنَ لَهُمۡ ؕ فَیُضِلُّ اللّٰهُ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَهۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۴﴾و ما ارسلنا من رسول الا بلسان قومهٖ لیبین لهم فیضل الله من یشاء و یهدی من یشاء و هو العزیز الحکیم ﴿۴﴾

আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তার কওমের ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়, সুতরাং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ দেখান। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

৬:৯২ وَ هٰذَا کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ مُبٰرَکٌ مُّصَدِّقُ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ لِتُنۡذِرَ اُمَّ الۡقُرٰی وَ مَنۡ حَوۡلَهَا ؕ وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ وَ هُمۡ عَلٰی صَلَاتِهِمۡ یُحَافِظُوۡنَ ﴿۹۲﴾و هذا کتب انزلنه مبرک مصدق الذی بین یدیه و لتنذر ام القری و من حولها و الذین یؤمنون بالاخرۃ یؤمنون بهٖ و هم علی صلاتهم یحافظون ﴿۹۲﴾

আর এটি একটি কিতাব, আমি তা নাযিল করেছি, বরকতময়, যা তাদের সামনে আছে তার সত্যায়নকারী। আর যাতে তুমি সতর্ক কর উম্মুল কুরা (মক্কা) ও তার আশ-পাশে যারা আছে তাদেরকে। আর যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে তারা এ কিতাবের প্রতি ঈমান আনে এবং তারা তাদের সালাতের উপর যত্নবান থাকে। আল-বায়ান

৪২:৭ وَ کَذٰلِکَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ قُرۡاٰنًا عَرَبِیًّا لِّتُنۡذِرَ اُمَّ الۡقُرٰی وَ مَنۡ حَوۡلَهَا وَ تُنۡذِرَ یَوۡمَ الۡجَمۡعِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ ؕ فَرِیۡقٌ فِی الۡجَنَّۃِ وَ فَرِیۡقٌ فِی السَّعِیۡرِ ﴿۷﴾و کذلک اوحینا الیک قرانا عربیا لتنذر ام القری و من حولها و تنذر یوم الجمع لا ریب فیه فریق فی الجنۃ و فریق فی السعیر ﴿۷﴾

আর এভাবেই আমি তোমার ওপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে ‘একত্রিত হওয়ার দিন’ এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোন সন্দেহ নেই, একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জ্বলন্ত আগুনে। আল-বায়ান

দেখুন উপরের তিনটি আয়াত থেকে আমরা স্পস্টভাবেই দেখতে পেলাম যে আল্লায় প্রত্যেক স্বজাতির ভাষাভাষির মধ্যেই একজন পয়গম্বর পাঠিয়েছেন যাতে তাদেরকে পরিস্কারভাবে বুঝাতে পারে ।তো যেহেতু কুরান আরবী ভাষায় নাজিল হয়েছে  এবং আরবী মক্কা অঞ্চলের মানুষের ভাষা ছিল সেহেতু এর দ্বারা স্পস্ট করেই বুঝা যাচ্ছে মুহাম্মদকে আরববাসীর জন্য ই পয়গম্বর করে পাঠিয়েছিল এবং সেটা ৬;৯২ এবং ৪২;৭ এ স্পস্ট করেই বলা হয়েছে মুহাম্মদকে মক্কা ও তার আশেপাশের  আরবী ভাষাভাষীর লোকেদেরকে সতর্ক করতে পাঠানো হয়েছিল ।

সুতরাং কুরানে যা বর্ননা করা হয়েছে তা আরবী ভাষাভাষি ও মক্কার লোকেদের জন্যই এবং মক্কা ও তার আশপাশের অবস্থা নিয়েই বর্ননা করা হয়েছে ।

সুতরাং উপরে আলোচিত কুরানে বর্নিত মক্কার যে বর্ননা আমরা পেলাম তা কোনভাবেই বর্তমান সৌদি আরবের মক্কার কোন বর্ননা যে নয় সেটা আমরা বর্তমান সৌদি আরবের মক্কার ভৌগলিক অবস্থা , পরিবেশ এবং সেখানের মানুষের কৃষিকাজের স্বভাব বৈচিত্র থেকেই বুঝতে পারি ।

হাদীস এবং সীরাতে যেমন ভৌগলিক অবস্থানের বর্ননা আছেঃ
তো এবার আমরা কিছু হাদীস এবং সীরাতের আলোকে মুহাম্মদের যুদ্ধের বর্ননা থেকে সেই স্থান গুলো এবং সেখানের দুরত্ব গুলো নিয়ে আলোচনা করবো ।

আমরা জানি মুহাম্মদ মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার পরে সেখানে  মুহাম্মদের ১০ বছরের মদীনা জীবনে প্রত্যক্ষ ২৭ টী ,মতান্তরে ১০০ টি যুদ্ধ করেছিল ,যেগুলোর মধ্যে প্রথম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছিল বদর যুদ্ধ ।

এই বদর নামক স্থান এবং  সেখানের দুরত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই।

মক্কা থেকে ৩২১ কিঃমিঃ দূরে মদীনার কাছাকাছি একটি যায়গা হচ্ছে বদর ,সেখানেই প্রথম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয় মুসলমানদের সাথে মক্কার কুরাইশদের সাথে ।


সীরাতে ইবনে ইশাকের বর্ননা অনুসারে পাওয়া যায় আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন সঙ্গীসহ  বিশাল একটি বানিজ্য ফেরত কাফেলা  সিরিয়া থেকে মক্কায় আসার খবর পেয়ে মুহাম্মদ তার দলবল নিয়ে সেখানে তাদেরকে আক্রমনের জন্য বদর নামক স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

আবু সুফিয়ান মুহাম্মদের আক্রমনের খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং তাদের মালামাল রক্ষা করার জন্য মক্কার কুরাইশদেরকে খবর পাঠান তারা যেন এসে তাদের মালামাল মুসলমানদের আক্রমন থেকে ্রক্ষা করে।

আবু সুফিয়ানের  কথা অনুযায়ী দমদম নামক এক ব্যাক্তি মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের খবর পাঠালে তারা নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধা সবাই ছুটে আসে বদর প্রান্তে তাদের মালামাল রক্ষা করার জন্য ।

পাঠকের বুঝার সুবিধার্থে আমি নিচে ইবনে ইশাকের বর্নিত বদরের এই ঘটনাটুকু নিচে হুবুহু তুলে ধরছিঃ

>> বদর যুদ্ধঃ

নাখলা আক্রমনের অল্প কিছুদিনের পরেই ইসলামের ইতিহাসের প্রথম রতক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয় যেটার নাম বদর যুদ্ধ।

কি ছিল সেই যুদ্ধের কারন??

এটা ছিল মুহাম্মদের মদীনায় যাওয়ার ১৮ মাস পরের ঘটনা ।ইতিহাসে তা বিখ্যাত বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত ।তারাইখটি ছিল ১৫ মার্চ ৬২৪ সাল ,১৯ শে রমজান,মতান্তরে ১৭ ই রমজান হিজ্রী দ্বিতীয় বর্ষ ।

মুসলমানদেরকে এই যুদ্ধের  কারনটা জিজ্ঞেস করলে চোখ বন্ধ করে বলে দেয় যে এটা ছিল কুরাইশরা মুসলমানদের সাথে শত্রুতা বসে অন্যায়ভাবে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার  জন্য মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের ওপর জোর জবরদস্তি আক্রমন চালানো।

কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস মুসলমানরা জেনে বা না জেনে বুঝে বা না বুঝে দৃড়ভাবে বিশ্বাস করেন যে  মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা কখনোই আক্রমনাত্মক যুদ্ধ করেনি ,তারা আত্মরক্ষামুলক যুদ্ধ করেছেন ।তারা কখনোই আগ বাড়িয়ে কারো সাথে আগে থেকে যুদ্ধ করেননি অন্যায়ভাবে।।তারা দৃড়ভাবে বিশ্বাস করে যে মুসলমানদের সমস্ত যুদ্ধ ছিল কুরাইশ ওঁ অন্যান্য অমুসলিমদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের যাবতীয় নিষ্ঠুরতা,সংঘর্ষ ও যুদ্ধের কারন শুধুই আত্মরক্ষা।তাদের এই বিশ্বাসের উতস যে শত শত বছরের মিথ্যা ও অপপ্রচারনার ফসল তা অতি সহজেই বোঝা জায় আদি উৎসের নিবেদিত প্রান ইসলাম বিশ্বাসীদেরই রচিত ইতিহাসে ।


মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বরননায়ঃ

নবী মুহাম্মদ জানতে পারলেন যে আবু সুফিয়ান  বিন হারব ৩০-৪০ জন সঙ্গী সহকারে কুরাইশদের বিশাল এক বানিজ্য বহর নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছেন ।যে বানিজ্য বহরে রয়েছে প্রচুর অর্থ এবং বানিজ্য সামগ্রী।

মুহাম্মদ্দ ব্বিন মুসলিম আল জুহরী> আসিম বিন উমার বিন কাতাদা ,আব্দুল্লা বিন আবু বকর এবং  ইয়াজিদ বিন রুমান এবং অন্যান্য স্কলারদের বর্ননায়ঃ

তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বদর যুদ্ধের যে কাহিনীগুলো আমই ( ইবনে ইশাক)  জেনেছি তারই ভিত্তিতে এই বদর যুদ্ধের উপখ্যান রচনা করছি।

>> খন আল্লার নবী জানতে পারলেন যে আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে বিশাল এক বানিজ্য কাফেলা নিয়ে মক্কায় ফিরছেন তখন তিনি মুসলমানদের ডেকে পাঠান এবং ঘোষনা করেন এই সেই কুরাইশদের ধন সম্পদ সমৃদ্ধ বানিজ্য বহর ।যাও তাদেওর আক্রমন করো ,সম্ভবত আল্লাহ এটি তোমাদের শিকার রুপে দান করবেন ।

তারা তার ডাকে সাড়া দেয় ।কিছু লোক আগ্রহের সাথে ,কিছু লোক অনিচ্ছায় ।কারন আল্লার নবী যে যুদ্ধে যেতে পারেন তা তাদের ধারনায় ছিলনা বা চিন্তা করেননাই।

আবু সুফিয়ান হিজাজের নিকটবর্তী হলে প্রতিটি আরোহীর কাছ থেকে তিনি খবর সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন ।উতকন্ঠিত আবু সুফিয়ান কিচু আরোহীর মাধ্যমে জানতে পান যে মুহাম্মদ তার অনুসারীদের আহ্বান করেছেন যে তারা যেন তার কাফেলায় আক্রমন করে।

এই খবরটি জেনে আবু সুফিয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং দমদম বিন আমর আল গিফারি নামক এক ব্যাক্তিকে নিয়োগ করেন মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা তাদের বানিজ্য বহরে আক্রমন করতে অপেক্ষা করছে সেই খবর মক্কার কুরাইশদেরকে জানানোর জন্য তাকে মক্কায় পাঠান এবং তাকে আদেশ করেন যে সে যেন কুরাইশদের তাদের মালামাল রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন ।দমদম দ্রুত বেগে মক্কার উদ্দেশ্যে ধাবিত হয় ।

মক্কায় এসে দমদম উঠের পিঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে "হে কুরাইশ উটের কাফেলা উটের কাফেলা ,আবু সুফিয়ান ও তার বানিজ্য কাফেলায় আপনাদের যে সম্পদ আছে তা মুহাম্মদ ও তার অনুসারীরা লুটের অপেক্ষায় আছে ।

লোকজন দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহন করে এবং বলে মুহাম্মদ ও তার সহচররা  মনে করেছে কি যে এটা তাদের ইবেন হাদরামীর কাফেলা আক্রমনের মতোই হবে ??

আল্লাহর কসম তারা শিঘ্রই টের পাবে যে এবার  সেরুপ হবেনা ।

প্রত্যেকুটি লোক নিজে অংশগ্রহন করে এবং পরিবারের না পারলে পরিবরতে অন্য কাউকে পাঠিয়ে দেয় ।সবাই অংশ গ্রহন করে ।আবু লাহাব বিন আবদ আল মুত্তালিব ছাড়া কোন বিশিষ্ট লোকই অংশ গ্রহনে বিরত ছিলনা ।আবু লাহাব নিজে অংশ গ্রহন করতে পারেনি বলে সে তার পরিবর্তে আল আস বিন হিশাম বিন মুগীরকে পাঠান ।আল আস তার কাছে ৪০০০ দিরহামের ঋনী ছিল ।তাই আবু লাহাব আস কে পাঠিয়ে ছিলেন এই শর্তে যে তিনি এই কাজের বিনিময়ে তার ঋন মওকুফ করে দিবেন ।

অন্যদিকে আবু সুফিয়ান সতর্কতার হেতু তার কাফেলার আগে আগে অগ্রসর হয়ে এক জলাশয়ের নিকটে আসেন ।সেখানে তিনি মাজদি বিন আমর নামক এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করেন যে সে কোন কিছু দেখছে কিনা ?

জবাবে মাজদি বলেন দুজন আরোহী পাহাড়ের ওপরে এসে থেমেছিল এবং চামড়ার থলিতে করে পানি নিয়ে ফিরে গিয়েছিল।এছারা সন্দেহজনক আর কিছু দেখেনি ।আরোহীরা যেখানে থেমেছিল আবু সুফিয়ান সেখানে গমন করেন এবং কিছু উটের লাদি কুড়িয়ে তা চূর্ন করে তাতে খেজুরের বিচির সন্ধান পান ।

তিনি বলেন হে আল্লা এ যে দেখি মদীনার পশু খাদ্য ।তিনি ততক্ষনাত তার সঙ্গিদের কাছে ফিরে যান এবং তার যাত্রার গতিপথ পরিবর্তন করে বদরকে বামে ফেলে বড় রাস্তার পরিবর্তে সমুদ্র তীরবর্তী পথে যথাসম্ভব দ্রুত গতিতে রওনা হন।

মুহাম্মদের যে দুইজন সহযোগী ঐখানে উট থামিয়ে আবু সুফিয়ানের কাফেলার সন্ধান করছিল তারা ছিল আদি ইবনে আল জাগাবা এবং  বাছবাছ ইবনে আমর ।

আল তাবারীর অতিরিক্ত বর্ননায়ঃ

৮ঃ৪১ যে দিনটিতে দুই সেনাদল পরসপরের সম্মুখীন হয়েছিল সেটা ছিল ১৭ই রমজান।মুহাম্মদ এবং মুর্তিপুজক কুরাইশদের মধ্যে বদর এবং অন্যান্য যুদ্ধ কিসের প্ররোচনায় হয়েছিল?

উরওয়য়া বিন আল জুবায়ের এর মতে তা ছিল ওয়য়াকিব আল আব্দ আল্লাহ আল তামিমি কতৃক আমর বিন আল হাদরামীর খুনের ঘটনা ।

বদর যুদ্ধের অনুসঙে উরওয়া বিন আল জুবায়ের উমাইয়া খলিফা আবদ আল মালিক বিন মারওয়ান কে যা লিখেছিলেন তাহল ( আপাত দৃষ্টিতে মনেহয় ইবনে ইশাক এই চিঠির বিষয়ে অবহিত ছিলেননা) "আপনি আবু সুফিয়ানের ও তার বানিজ্য কাফেলা অভিযানের পারিপার্শ্বিকতা জানতে চেয়ে আমার কাছে লিখেছেন ।আবু সুফিয়ান বিন হারব প্রায় ৭০ জন আরোহী নিয়ে সমস্ত কুরাইস গোত্রের প্রতিনিধি রুপে সিরিয়া থেকে ফিরছিলেন ।সিরিয়াতে তারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল এবং তারা সকলেই একত্রে তাদের অর্থ ও বানিজ্য সম্পদ নিয়ে  ফিরে আসছিলেন ।আল্লার নবী এবং তার সহকারীরা এই খবরটি জানতে পারেন ।এটি ছিল কুরাইশদের আক্রমন ,নাখলায় ইবনে আল হাদরামীকে খুন ও কিছু কুরাইশের বন্দি করে নিয়ে আসার পরের ঘটনা ।যে বন্দীদের মধ্যে ছিল আল মুগীরার এক ছেলে ও তাদের মওলা ইবনে কেইসান ।

যারা সেই ঘটনার জন্য দায়ী তারা হলেন আবদ আল্লাহ বিন জাহশ এবং ওয়য়াকিদ  ও তাদের সাথে ছিল আল্লার নবীর আরো কিছু অনুসারি ,যাদেরকে আল্লার নবী জাহশের সহযোগী হিসাবে পাঠিয়ে ছিলেন ।ঐ ঘটনা কুরাইশদের করে ক্রোধান্বিত  এবং তা আল্লার নবী ও কুরাইশদের মধ্যে যুদ্ধ ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটায়।ঐ ঘটনাটি ঘটেছিল আবু সুফিয়ানের সিরিয়া রওনা হবার পূর্বেই ।পরবর্তীতে আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গী কুরাইশ অশ্বারোহীরা সমুদ্র উপকূলবর্তী পথে সিরিয়া থেকে ফেরত আসে ।

যখন আল্লার নবী তাদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন তিনি তার সহকারীদের ডেকে পাঠালেন এবং বললেন যে ওদের সাথে আছে প্রচুর ধন সম্পদ এবং স্বল্পসংখ্যক জনবল ।মুসলমানেরা আবু সুফিয়ানের ও তার অশ্বারোহী ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে রওনা হয়নি ।

তারা চিন্তাও করেনি যে এটি একটি সহজ লুণ্ঠন অভিযান ছাড়া আর কিছু হতে পারে ।তারা ধারনাও করতে পারেনি যে কুরাইশদের সাথে তাদের বড় ধরনের কোন যুদ্ধ হতে পারে ।

এই সম্পর্কে ঐশী বানী নাজিল হয়ঃ

وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتِيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللّهُ أَن يُحِقَّ الحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ

আর যখন আল্লাহ দু'টি দলের একটির ব্যাপারে তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, সেটি তোমাদের হস্তগত হবে, আর তোমরা কামনা করছিলে যাতে কোন রকম কন্টক নেই, তাই তোমাদের ভাগে আসুক; অথচ আল্লাহ চাইতেন সত্যকে স্বীয় কালামের মাধ্যমে সত্যে পরিণত করতে এবং কাফেরদের মূল কর্তন করে দিতে, [ সুরা আনফাল ৮:৭ ]

আবু সুফিয়ান যখন জানতে পারেন যে তাকে পাকড়াও করার জন্য মুহাম্মদ ও তার সহচরেরা মাঝপথে পাকড়াও করার জন্য রওনা হয়েছে তখন সে মক্কায় খবর পাঠায় কুরাইশরা যেন তাদের কাফেলার মালামাল মুহাম্মদের হাত থেকে রক্ষা করে।

কুরাইশরা খবর পেয়ে তাদের মালামাল রক্ষা করতে ছুটে আসে ।এতে প্রায় মক্কার ৯৫০ জন কুরাইশরা এসেছিল ।


>> তথ্য সূত্র ও পাদটীকাঃ

সহি বুখারী ,ভলিউম ৫, বই ৫৯,হাদীস নাম্বারঃ২৮৬ এবং ২৮৭,

১. মুহাম্মদ ইবনে ইশাক( ৭০৪-৭৬৮) লেখক সিরাত রাসুল আল্লাহ ,সম্পাদনা ইবনে হিশাম ( মৃত্যুঃ ৮৩৩ ) ইংরেজি অনুবাদঃ A GUILLAUME,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস,করাচী-১৯৫৫ ,

ISBN 0-19-636033-1,পৃষ্ঠা: (Leiden) ২৮৯-২৮৬

২. আল ওয়াকিদি  (৭৪৮-৮২২) লেখকঃ কিতাব আল মাগাজী।

ed. Marsden Jones,লন্ডন ১৯৬৬,পৃষ্ঠাঃ 

৩.আল তাবারী(৮৩৮-৯২৩) লেখকঃ তারিক আল রাসুল ওয়াল মুলুক ,ইংরেজী অনুবাদঃ W MONTOGOMERY WATT AND M.V McDONALD নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস ,১৯৮৭ ভলিউম ৭,পৃষ্ঠা (Leiden)১২৮৪-১৩০৮

৪. মুহাম্মদ ইবনে সা'দ (৭৮৪-৮৪৫) লেখকঃ কিতাব আল তাবাকাত আল কাবির ,অনুবাদঃ এস মাইনুল হক ,প্রকাশক-কিতাব ভবন নয়া দিল্লী-২০০৯,

৩য় সংস্করন,ভলিউম ২, পার্ট- ১,পৃষ্ঠাঃ ২৬

তো উপরে বর্নিত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা জানতে ও বুঝতে পারলাম যে আবু সুফিয়ান ৩০-৪০ জন সঙ্গীসহ বিশাল এক বানিজ্য কাফেলা নিয়ে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরে আসার খবর পেয়ে মুহাম্মদ তাদের মালামাল লুট করে নিয়ে আসার পরিকল্পনা মাফিক তার সাহাবী ও আনসারদের নিয়ে বদরের হিজাজ নামক স্থানে আশ্রয় নেন ।আবু সুফিয়ান মুহাম্মদের আক্রমনের খবর পেয়ে দমদম নামক এক ব্যাক্তিকে মক্কায় খবর পাঠান তারা যেন তাদের মালামাল রক্ষা করতে ছুটে আসে ।মক্কাবাসী দমদমের থেকে খবর পেয়ে তাদের মালামাল রক্ষা করতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ছুটে আসে । তারপরে সেখানে এক পর্যায়ে যুদ্ধ সংঘটিত হলে এক পর্যায়ে মুহাম্মদের মুসলমান বাহিনি বিজয়ী হয় এবং কুরাইশরা পরাজিত হয়।

তো কুরাইশদের খবর পেয়ে মক্কা থেকে ছুটে আসা নিয়েই আমার যে প্রশ্নের উদ্বেগ হয়েছে এবং যেই প্রশ্নের কারনেই আমার মূলত এই আলোচনাটা এখানে টানা হয়েছে সেটা হচ্ছে যে, মক্কা থেকে বদরের দুরত্ব হচ্ছে ৩২১ কিঃমিঃ , যেখানে আসা যাওয়ার বা চলাচলের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল তখন উট এবং ঘোড়ার সাহায্যে চলাচল করা ,কেননা সেই ১৪০০ বছর আগে সেখানে কোন দ্রুত চলাচলের যানবাহন ছিলনা ।একটা উট সারাদিনে চলতে পারে মাত্র ৩০ কিঃমিঃ ,বর্তমানে সেনাবাহিনীর কাজে ব্যাবহারের জন্য স্পেশাল ব্রীডে সৃষ্ট উট গুলো চলতে পারে ৩৫-৩৮ কিঃমিঃ ,কিন্তু সাধারন উট গুলো মরুভূমিতে চলতে পারে সারাদিনে ৩০ কিঃমিঃ । এবং সেখানে মরুভুমিতে দিনের বেলায় সূর্যের প্রখর তাপের কারনে দিনের বেলা চলাচল করা যায়না , রাতের বেলায় চলতে হয়।

তাহলে পাঠক ভাবেন তো এই ৩২১ কিঃমিঃ রাস্তা পাড়ি দিয়ে বদর থেকে মক্কায় গিয়ে কেউ একজন কুরাইশদের খবর দেওয়া এবং তার খবর পেয়ে তাদের ছুটে আসতে বদর প্রান্তে কতদিন সময় লাগতে পারে ? একদিনে যদি ৩০ কিঃমিঃ যাইয় তাহলে এই ৩২১ কিঃমিঃ পথ তাদের আসতে যেতে কমপক্ষে ২০ দিন সময় লেগেছিল ।এখন মুহাম্মদ ও তার দল কি এই ২০ দিন ধরে সেখানে অপেক্ষা করছিল তাদের ছুটে আসার জন্য ??? এটা কি অদৌ সম্ভব ?? কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বরং এটা ১০-১৫ কিঃমি" এর মধ্যে হলে সেটা সম্ভব হতো ।যাহোক আমি আগেই সিদ্ধান্তে না গিয়ে এবার মদীনা সম্পর্কে হাদিস থেকে কিছু আলোচনা করতে চাই।


গ্রন্থঃ সুনানে আন নাসায়ী( ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

হাদীস নাম্বারঃ ২৯১

১৮৩/ মুহরিম মহিলা ঋতুমতি হলে কি করবে ?

২৯১। ইসহাক ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) নিয়তে বের হলাম। যখন আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌঁছলাম, আমার হায়য আসল। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট আসলেন, তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হল? তোমার কি হায়য হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ এমন একটি ব্যাপার যা আল্লাহ্‌ তা’আলা আদম কন্যাদের জন্য অবধারিত করেছেন। অতএব তুমি হাজ্জের (হজ্জ) সকল আহকাম আদায় কর তবে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিণীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী দিলেন।

সহিহ, সহিহ আবূ দাউদ হাঃ ১৫৬৩, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ২৭৮৩


পরের হাদীসটিতে দেখুনঃ

গ্রন্থঃসহি মুসলিম ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

হাদীস নাম্বারঃ২৭৯৬

 আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) বলেন, যিলকদ মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রওনা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) পালন ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্যে ছিল না। আমরা মক্কার নিকটবর্তী হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে বায়তুল্লাহ এর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার পর ইহরাম ভঙ্গ করবে। আযেশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন কেউ আমাদের জন্য গরুর গোশত নিয়ে এল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম এ কি? বলা হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সহধর্মিনাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন।

ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) বলেন, আমি এই হাদীস কাসিম ইবনু মুহাম্মাদের নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (আমরাহ) তোমার নিকট হাদীসটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন।

উপরের আলোচ্য হাদিসটিতে বলা হয়েছে নবি মুহাম্মদ তার স্ত্রীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী দিলেন।এবং সেই গরুর মাংস কেউ একজনে নিয়ে এলো।

তো পাঠক ভাবুন তো মদীনায় কি কোন গরু আছে ?সেখানে কি কেউ কোন দিন গরু কুরবানী দেয়? সেখানের যে পরিবেশ তাতে কি সেখানে গরু পালন করা যায়? 


এবার আমরা সহি মুসলিম ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এর একটি হাদীস দেখব যেখানে এক কৃষকে সিরিয়া থেকে মদীনার বাজারে সবজি নিয়ে আসছেন বিক্রি করার জন্য

হাদীস গ্রন্থঃ সহী মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদীস নাম্বারঃ৬৭৬০

হাদীসের মানঃ সহি 

 


কি পাঠক মাথা ঘুরান্টি মারতেছে ?

হ্যা ,যারা সিরিয়া এবং মদীনার দুরত্ব কত সেটা জানেন তাদের মাথা ঘুরান্টি ই দেওয়ার কথা ,কেননা মদীনা থেকে সিরিয়ার দুরত্ব ১৬৪৮ কিঃমিঃ 

তো ভাবুন তো এই ১৬৪৮ কিঃমিঃ দূর থেকে কি কেউ সবজি নিয়ে আসতে পারে বিক্রি করার জন্য ? সেখানের যে আবহাওয়া তাতে একদিনের মধ্যে সব্জি শুকিয়ে মচমচে পটেটো চিপ্স হয়ে যাবে।তারপরে আবার সেই ১৪০০ বছর আগের যে যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল তাতে এটা কিভাবে সম্ভব ?




প্রখ্যাত সাহাবীদের মধ্যে অধিকাংশের কবর কেন ইরাক সিরিয়ায়ঃ 
এছাড়াও আরো যে দুটি বিষয় আমাকে আরো বেশি ভাবায় সেটা হচ্ছে মুহাম্মদের খুব কাছের এবং ঘনিষ্ঠ সাহাবীগনের মধ্যে প্রখ্যাত অনেক সাহাবিদের কবর ই সিরিয়ায় পাওয়া যায়সৌদি আরবের মক্কা মদিনায় নয় ।যেমনঃ খালিদ ইবেন আল ওয়ালিদ ,মুয়াবিয়া,Owais al-Qarani,Hujr ibn Adi ইত্যাদি সহ প্রায় ১৬০ থেকে ১৭০ জন সাহাবীদের কব্বর পাওয়া যায় সিরিয়ায় অথচ তাদের জন্মস্থান হচ্ছে মক্কায়।তারা মক্কায় জন্ম গ্রহন করেও কেউই তাদের জন্মভূমিতে তাদের শেষ সমাধি বাবা মায়ের পাশে না দিয়ে কেন সেই সূদুর সিরিয়ায় দিতে বলবে । এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খালিদ আল ওয়ালিদ এবং মুয়াবিয়া ।

খালিদ ইবনে আল ওয়ালিদের মুহাম্মদের খুব আস্থাভাজন সাহাবী ছিলেন এবং খুবই প্রিয় ব্যাক্তি ছিলেন । মুহাম্মদ যে ১০ জন ব্যাক্তির অগ্রিম জান্নাতের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন এই খালিদ ইবনে আল ওয়ালিদ।

তো যিনি  মদীনায় বাস করলেন তার কবর কিভাবে মদীনা থেকে এত দুরের সিরিয়ায় এলো? মদীনা থেকে সিরিয়ার দুরত্ব কত সেটা নিশ্চয় জানা আছে ,১৯৯০ কিঃমিঃ 



কিভাবে এত দূরে তার কবর এলো মদীনা থেকে সিরিয়ায়?

আরেকজন গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তি হলেন মুয়াবিয়া ।যেখানে মুহাম্মদ মক্কা বিজয়ের পরে মদীনাকে রাজধানী করে সেখান থেকেই রাস্ট্র পুরিচালনা করলেন সেখানে মুয়াবিয়া কেন  সেই মদীনা ছেড়ে সিরিয়ায় এসে রাস্ট্র পরিচালনা করলেন ?

 


আরো যে বিষয়টি আমাকে চরমভাবে নাড়া দেয় সেটা হচ্ছে মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পরে মদীনাকে ক্যাপিটাল ঘোষনা করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখান থেকেই রাস্ট্র পরিচালনা করেন এবং তিনি মারা যাবার পরে চার খলিফা রাস্ট্র পরিচালনা করেন সব মিলিয়ে প্রায় ৩৯ বছর ।অথচ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের এই ৩৯ বছরের রাস্ট্র পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা গুরুত্বপূর্ন সেটার কোন অস্তিত্ব ই  খুজে পাওয়া যায়না কোথাও ,অর্থাৎ তাদের ব্যবহৃত মুদ্রা ব্যাবস্থা ।

মদীনায় তারা কোন মুদ্রা ব্যবস্থা দিয়ে রাস্ট্র পরিচালনা করেছে তার কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়না ।সর্বপ্রথম যে মুদ্রা পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে মুয়াবিয়ার সময়ে ব্যবহৃত মুদ্রা ব্যবস্থা ৬৯৩ খ্রিস্টাব্দের এবং তারপরে পাওয়া যায় আব্দেল আল মালেকের ৬৯৭ খ্রিস্টাব্দের এবং সেটা তারা সিরিয়া থেকেই পাওয়া যায়।

তো উপরোক্ত আলোচনা ও বর্ননার আলোকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি যে মুহাম্মদে বর্তমান সৌদির মক্কায় জন্ম গ্রহন করেননি ।এই মক্কা মুহাম্মদের জন্মস্থান সেই মক্কা নয় যেই মক্কার কথা আমরা কুরান হাদীস এবং সীরাতে পেলাম । মুহাম্মদ জন্মেছিল সিরিয়ার বুশরার আশেপাশের হয়তো ১৫-২০ কিঃমিঃ এর মধ্যে কোন যায়গায় যেখানে মক্কা মদীনা নামক কোন যায়গা ছিল যেটাকে ধ্বংস করে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের খাতিরে সৌদি আরবের মরুভূমিতে পাওয়া জমজমকে কেন্দ্র করে মক্কা বানানো হয়েছে যেখানে আজ মুসলিমরা হজ্জ করতে যায়।




  













No comments

Powered by Blogger.