Header Ads

Header ADS

ফেরাউনের লাশ নিয়ে মুসলমানদের মিথ্যাচার

ফেরাউনের লাশ নিয়ে মুসলমানদের মিথ্যাচার

Image result for ফেরাউনের লাশের ছবিImage result for ফেরাউনের লাশের ছবি


ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণ সম্পর্কে কুরআনের গোঁজামি।।

অনেকেই এটা শুনে থাকবেন ফেরাউনের লাশ আল্লাহ সংরক্ষণের কথা কুরআনে বলেছে যেটা এখন মিশরের জাদুঘরে রক্ষিত আছে। এটা নাকি কুরআনের একটা অন্যতম প্রমাণ ঐশ্বরিক গ্রন্থ হিসেবে আর এটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে মরিস বুকাইলি নামের একজন খ্রিস্টান ডাক্তার মিশরের এই মমিকে কুরআনে উল্লেখ করা ফেরাউনের লাশ বলে দাবী করায়। এই বুকাইলি একটা আন্তর্জাতিক ফ্রড গ্রুপের প্রডাকশন মাত্র। ফেরাউন সম্পর্কে কুরআনের গোঁজামিল নিয়ে লেখার আগে জানিয়ে রাখি যে, ইয়েমেনের শেখ আব্দুল মাজিদ জিদানী নামের একজন ধনকুবের সৌদি আরবে গড়ে তুলেন
‘Commission on Scientific Signs in the Qur’an and Sunnah’।
এই সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচার করা হয় আধুনিক বিজ্ঞান আসলে
কুরআনের কথারই প্রতিধ্বনি করছে। এই লক্ষে খোলা হয় টিভি চ্যানেল, ওয়েবপেইজ, সাময়িকী এবং মরিস বুকাইলি এবং জাকির নায়েকদের মত ব্যক্তিদের। এরই অংশ হিসেবে হারুন ইয়াহিয়া ,জাকির নায়েক নামের দুজন ইসলামী বক্তাকে দিয়ে কুরআনের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানকে আবিস্কার করে প্রচার করা হয়। কিন্তু কোন মুসলিম এইরকম দাবী করার চেয়ে হাজার গুণ বেশি কাজ করে যখন কোন ইহুদী-খ্রিস্টান ব্যাকগ্রাউন্ডের বিজ্ঞানীরা যদি দাবী করেন কুরআনে বিস্ময়করভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের দাবীগুলোর কথা সেই ১৪০০ বছর আগেই বলে দেয়া হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী অমুসলিম অসৎ বিজ্ঞানী, ধান্দাবাজ ডাক্তার, দার্শনিকদের ভাড়া করা হয় অর্থের বিনিময়ে যারা কুরআনকে বিজ্ঞানসম্মত বলে দাবী করবেন।

 পশ্চিমা অনেক নামজাদা বিজ্ঞানীদের ফ্রি প্রথম শ্রেণীর বিমান টিকিট, ফাইভ স্টার হোটেলে রেখে, ১ হাজার ডলারের বিনিময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞান সেমিনার করার নামে তাদের মুখ দিয়ে বলানো হয় কুরআনের অনেক আয়াত আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়…। তবে সবাই যে অর্থে লোভ এই ধরণের মিথ্যাচার করেন তা নয়, অনেকেই প্রতারণার শিকার হোন।
 যেমন বিজ্ঞানী উইলিয়াম হেয় এ সম্পর্কে বলেছিলেন যে, তিনি জিদানীর ফাঁদে পা দিয়েছিলেন এবং পরে অন্যদের সাবধান করেছিলেন…। 
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ভ্রুণবিদ্যার বিশেষজ্ঞ জেরাল্ড গরিঙ্গার কুরআনে ভ্রুণ সম্পর্কে ১৪০০ বছর আগে আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের কথাই লেখা আছে এই দাবীর জবাবে তিনি জিদানীর কমিশনকে বলেন, কুরআন লেখার ১ হাজার বছর আগে গ্রীক দার্শনিক-বিজ্ঞানী এরিস্টটোলের ভ্রুণ সম্পর্কে যা বলেছিলেন সেটাই কুরআন গ্রহণ করেছিল। বলা প্রয়োজন বুকাইলিবাদের বিশ্বব্যাপী প্রচারণার কুশিলব শেখ আব্দুল মাজিদ জিদানী, ওসামা বিন লাদেনের একজন অন্যতম পৃষ্টপোষক ছিলেন। অন্যদিকে লাদেন বুকাইলিবাদের অন্যতম একজন ভক্ত ছিলেন। এই দুইজনের অর্থে বুকাইলিবাদের বিস্তার ঘটেছিল তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে।

এবার শুরু করি ফেরাউন নিয়ে কুরআনের গোঁজামিলের কথাঃ

 একদম শুরুতেই বলে রাখি মুসা নবীর কোন 
ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। ইতিহাস বলতে যতটুকু আছে তার উৎসও তাওরাত কেন্দ্রিক। তাওরাত ছাড়া এই ইহুদী নবীর আর কোন বিশ্বাস যোগ্য ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে মিশরের ফেরাউনদের কথা ইতিহাসে শুধু নয় আধুনিক মিশরেও তাদের হাজার হাজার প্রমাণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মিশরের রাজাদের বলা হতো ফেরাউন। কিন্তু বেশির ভাগ মুসলমান ফেরাউনকে একজন ব্যক্তি হিসেবে জানে। অত্যাচারি কোন শাসককে আমাদের
রাজনীতিবিদরাও ফেরাউনের শাসন বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ইতিহাসে রামসিস নামের একজন ফেরাউনের কথা জানা যায় যিনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে উনার মৃত্যুর পর তার নাম ধারণ করে আরো কয়েকজন মিশর শাসন করেছিলেন। তো এইসব ফেরাউনদের নিয়ে বহু কিংবদন্তি, গল্পগাথা আর মিথ প্রচলিত ছিল। যেমন পৃথিবীতে ছোট-বড় বন্যা প্রাচীনকালে প্রচুর
হয়েছে। সেই ভয়াবহ বন্যাকে ঘিরে নানা রকম কাহিনী, উপকথা, মিথ তৈরি হয়েছিল। 
নূহের প্লাবণ সেরকমই একটি কাহিনী। নূহ নবী চরিত্রটি আরো পূর্বে একদমই এলেবেলে ধরণের ছিল। দক্ষিণ মেসোপটেমীয় পুরাণ অনুযায়ী দেবতারা পৃথিবীকে যখন প্লাবিত করে ধ্বংস করতে
সিদ্ধান্ত নিলেন তখন সেকথা জলের দেবতা নলখাগড়া বনের কাছে ফাঁস করে দেয়। নলখাগড়া আবার এক ব্যক্তিকে কথাটা জানিয়ে দেয় এবং ব্যক্তিটি তখন একটি নৌকা বানিয়ে জোড়ায় জোড়ায় পশুপাখিসহ সেখানে আশ্রয় নেয়। 
(তথ্যসূত্র: পৃথিবীর ইতিহাস: প্রাচীন যুগ, ফিওদর করোভকিন, পৃষ্ঠা-৯২)।

এই গল্পই কালক্রমে মুখে মুখে বদলে গিয়ে নবী নূহের রূপ লাভ করেছিল আরো বহু শতাব্দি পরে। তাওরাত ঘুরে সেটা কুরআনেও এসেছে। এই আসা যাওয়ার মধ্যে গল্পে চরিত্র ও বর্ণনায় ঘটেছে পার্থক্য। মিশরের ফেরাউন নিয়ে ঠিক এরকম মিথ ও গল্প শতাব্দি থেকে শতাব্দি ঘুরে বেরিয়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। সুদূর মিশরের ফেরাউনদের সম্পর্কে গল্প আরব দেশেও প্রচলিত ছিল।
তবে মুসা ও ফেরাউনের কাহিনী কিভাবে ছড়িয়ে ছিল তা বলার আগে আরেকটি বিষয় অবগত করতে চাই, কোন প্রাচীন উপকথার যদি সামান্যতম ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকেও তবু সেটি সত্য নয়। যেমন ট্রয় নগরির ধ্বংসাবস্থা আবিস্কার হলেই বা ট্রয় সত্যিই আগুনে পুড়ে গিয়েছিল সেটা প্রমাণ হলেই হোমারের রচনার সবটাই ঐতিহাসিক কোন কাহিনী নয়। চরিত্রগুলো বেশির ভাগই কাল্পনিক, কবি কল্পনায় চরিত্রগুলো কথা বলেছে কবির চাহিদা অনুযায়ী। কারণ ট্রয় নগরি পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবার পর এই শহরকে নিয়ে যুগে যুগে কবিরা মহাকাব্য রচনা করে গেছেন। যেমন কুরুক্ষেত্রে দুই রাজ বংশের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধটির ঐতিহাসিক ভিত্তি থাকলেও চরিত্রগুলো ফুটে উঠেছিল কবি কল্পনায়। তাই
মহাভারতের বেশির ভাগ চরিত্রই কাল্পনিক। কাল্পনিক বলেই কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। ট্রয় বা কুরুক্ষেত্রে নাম ইতিহাসে আছে বলেই এসবকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মিথ ইতিহাস হয়ে যায় না।
ইহুদীদের কোন নবীরই কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে বলে কোন প্রমাণ নেই। 

একইভাবে ইসলামী ইতিহাসের একমাত্র সোর্স হচ্ছে হাদিস যা লোক মুখে শুনে লেখা হয়েছে। হাদিস কোন শিলালিপি বা তাম্র লিপি দেখে লেখা হয়নি। মুহাম্মদের নাযিল করা কুরআনের আয়াত যা
বলা হয়েছে খেজুর পাতায়, হাড় বা চামড়ায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল তার একটিরও নির্দশন কি আমরা আজ খুজেঁ পাই? পৃথিবীর কোন জাদুঘরে নবীর হুকুমে যে খেজুর পাতায়, পশুর চামড়ায় কুরআনের বাণী লেখা হয়েছিল সেগুলো কোথায় গেলো? মুহাম্মদের পাগরি, লাঠি, জোব্বা যদি এখনো দেখানো হয় যে এগুলো মুহাম্মদ ব্যবহার করেছিলেন, তাহলে কুরআনের সেই আদি
কপিগুলো কোথায়? নিশ্চিত তা ধ্বংস করা হয়েছিল! ইসলামের ইতিহাসের ভিত্তি হচ্ছে হাদিসগ্রন্থ। প্রফেসর হিট্টির মত ইতিহাসবিদরা তাকে নিয়ে লিখেছেন হাদিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। আর এই হাদিসগুলো লোক মুখে শোনা অতিরঞ্জিত আর নিছক গল্পগাথা হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। কেননা এসব হাদীসগুলি সংকলিত হয়েছিল মুহাম্মদের মৃত্যুর ২৩০ বছর পরে ।

যাক, মুসার কথায় আসি। প্রথমেই যদি আমরা মুসার জন্ম প্রাকাল্যে যে ঘটনা তাকে খেয়াল
করি, আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি ভারতবর্ষের শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও শৈশবের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়! একই কাহিনী সামান্য এদিক-সেদিক মাত্র! আগে একটা লেখায় দেখিয়েছিলাম আর্য জাতি তাদের ধর্মীয় মিথগুলোকে যেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেখানকার স্থানীয় বিশ্বাস ও প্রকৃতিকে ধারণ করে তাদের মিথগুলোয় বদলে দিয়েছিল শুধু চেহারা, পরিবেশ আর পোশাকে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে মুসা নবী ভারতবর্ষে ভগবান কৃষ্ণ হয়ে গেছেন! এই গল্প কাহিনীর নায়ক যিনি মুসা তার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই কিন্তু “মুসার শত্রু ফেরাউনের” প্রমাণ নাকি মুসলমানদের হাতের মুঠোয়! মিশরের
জাদুঘরে কাচেঁর জারে যে ফেরাউন মমি রক্ষিত তাকে মুসাকে অনুসরণ করা ফেরাউন বলে সারা দুনিয়ার মুসলমান বিশ্বাস করেন। এই বিশ্বাসের উৎস কুরআনের এই আয়াতটি:
- ﻭَﺟَﺎﻭَﺯْﻧَﺎ ﺑِﺒَﻨِﻲ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﺍﻟْﺒَﺤْﺮَ ﻓَﺄَﺗْﺒَﻌَﻬُﻢْ ﻓِﺮْﻋَﻮْﻥُ ﻭَﺟُﻨُﻮﺩُﻩُ ﺑَﻐْﻴًﺎ ﻭَﻋَﺪْﻭًﺍ
ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻛَﻪُ ﺍﻟْﻐَﺮَﻕُ ﻗَﺎﻝَ ﺁﻣَﻨْﺖُ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺁﻣَﻨَﺖْ ﺑِﻪِ ﺑَﻨُﻮ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴﻞَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻣِﻦَ
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ – ﺁﻟْﺂﻥَ ﻭَﻗَﺪْ ﻋَﺼَﻴْﺖَ ﻗَﺒْﻞُ ﻭَﻛُﻨْﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﻔْﺴِﺪِﻳﻦَ – ﻓَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧُﻨَﺠِّﻴﻚَ ﺑِﺒَﺪَﻧِﻚَ
ﻟِﺘَﻜُﻮﻥَ ﻟِﻤَﻦْ ﺧَﻠْﻔَﻚَ ﺁﻳَﺔ -
(তরজমা), আর আমি বনী ইসরাইলদেরকে সমুদ্র পার করে দিলাম। অতঃপর ফেরাউন ও তার দলবল বাড়াবাড়ি ও শত্রুতাবশতঃ তাদের পিছু নিল। অতঃপর যখন সে ডুবতে শুরু করল সে বলল: বনী ইসরাইলগণ যে সত্ত্বার উপর ঈমান এনেছে আমিও সেই সত্ত্বার উপর ঈমান আনলাম যিনি
ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাম। এখন(এমন কথা বলছ)! এর আগে তুমি আমার নাফরমানী করেছ এবং তুমি ছিলে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি কারীদের অন্তর্ভুক্ত। আজ আমি তোমার দেহকে উদ্ধার করব(বাঁচিয়ে দেব) যেন তুমি তোমার
পরবর্তীদের জন্যে নিদর্শন হয়ে থাক। (সুরা ইউনুস: ৯০-৯২ আয়াত)।

Yunus 10:92
فَٱلْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ ءَايَةًۚ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلنَّاسِ عَنْ ءَايَٰتِنَا لَغَٰفِلُونَ
‘সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল’।

Al-Isra' 17:103
فَأَرَادَ أَن يَسْتَفِزَّهُم مِّنَ ٱلْأَرْضِ فَأَغْرَقْنَٰهُ وَمَن مَّعَهُۥ جَمِيعًا
অতঃপর সে তাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করার ইচ্ছা করল; তখন আমি তাকে ও তার সাথে যারা ছিল সকলকে ডুবিয়ে দিলাম।

প্রথমে খেয়াল করুন ফেরাউনের কোন নাম কুরআনে উল্লেখ নেই। কুরআনের ২৭টি সুরায় ৭৪ বার ‘ফেরাউন’ নামটি উল্লেখ করা হলেও কোথাও মুসার পিছু নেয়া ঠিক কোন ফেরাউন পানিতে ডুবে মরেছিল তা কুরআন বলতে পারেনি।এমনকি ফেরাউন নামে কেউ মারা গেছিল কিনা সে বিষয়ে আল্লায় নিজেও শিওর নন বা কনফিউজডে ছিলেন।
#Al-Isra' 17:102

قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ بَصَآئِرَ وَإِنِّى لَأَظُنُّكَ يَٰفِرْعَوْنُ مَثْبُورًا
সে বলল, ‘তুমি জান যে, এ সকল বিষয় কেবল আসমানসমূহ ও যমীনের রবই নাযিল করেছেন প্রত্যক্ষ প্রমাণ হিসেবে। আর হে ফির‘আউন, আমি তো ধারণা করি তুমি ধ্বংসপ্রাপ্ত।

 কুরআন তথা আরবের লোকজন মিশরের বিখ্যাত রাজা রামসিসের সম্পর্কে নানা রকম গল্প ও কিংবদন্তির কথা জানত। এই জানা তাদের প্রতিবেশী ইহুদীদের ছড়ানো গাল-গল্প হতে ইন্দন জুগিয়েছিল। রামসেস এমনিতে এত জনপ্রিয় রাজা ছিলেন যে তার নাম ধারণ করে আরো কয়েকজন মিশরীয় ফেরাউন হয়েছিলেন আগেই বলেছি। মুসার পিছু নেয়া কথিত ফেরাউন বলে মিশরের জাদুঘরে রক্ষিত মমিটি কিন্তু সাগরের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়নি। মিশরের জাদুঘরে রক্ষিত মমিটির শরীর যে লিননের কাপড়ে মুড়ে রাখা হয়েছে সেখানে প্রাচীন মিশরীয় ভাষাতেই মমিটি
সম্পর্কে বলা আছে। এই রাজার মৃত্যুদেহকে নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই মিশরীয়রা নানা রকম আদিভৌতিক গাল-গল্প ছড়াতে থাকে। প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম অনুযায়ী শবদেহকে মমি করে পিড়ামিডে সংরক্ষিত করার নিময় ছিল। শুধু রাজা-বাদশাহ নয়, উচ্চ শ্রেণীর নাগরিকদের দেহ মমি করে রাখা হতো। এই মমিকৃত দেহগুলোর পরিচয় জানা গেছে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা হায়ারোগ্লিফিক পাঠ উদ্ধারের পর। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য তিন ফেরাউনের নাম জানা যায়- রামেসিস , ইমহোটেপ, তুতেনখামেন। কুরআনের আল্লাহ মুসার শত্রু, তার বণি ইসরাইলদের শত্রু, তার দ্বিনের শত্রু ঠিক কোন ফেরাউন তার নাম কি সেটা আল্লাহ বলতে পারেননি! আসল ঘটনা হচ্ছে প্রাচীন মিশর ত্যাগ করে আসা ইহুদীরা তাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে একটা গৌরবময় গল্প নিজেদের
মধ্যে বিশ্বাস করত। প্রতিবেশী হিসেবে আরবরা ইহুদীদের এইসব গল্প সম্পর্কে সচেতন ছিলো। কুরআনে ফেরাউনের লাশ সংগ্রহ করে রাখার কথা অভিনব কোন বিষয় নয়। তখনকার আরবরাও জানত মিশরের পিড়ামিডে ফেরাউনদের লাশ সংগ্রহিত করে রাখা হয়। কিন্তু হায়ারোগ্লিফিক ভাষা অতি সাম্প্রতিককালে পাঠোদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন ফেরাউনের নামই জানা যায়নি।

 ইহুদীরাও সেই ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদের সময় তাদের কথিত নবী মুসার শত্রু ফেরাউনের নাম বলতে পারেনি। তারা শুধু নাজত সেই ফেরাউনের লাশ শিররে এখনো রক্ষিত আছে। লাশ পঁচেনি গলেনি এতটুকু। মমিকৃত লাশ যে পঁচে না সেটা মিশরের বাইরের লোকও জানত। সেকথাই কুরআনের সুরা ইউনুসে বলা হয়েছে। আশ্চর্য যে মুসলমানরা না বুঝেও একটা ফেরাউনের মমিকে আল্লাহর ওয়াদা পূরন হিসেবে দেখিয়ে কুরআনকে অভ্রান্ত প্রমাণ করতে চায় যা একটা চালাকি। সবচেয়ে বড় যে মিথটা ছিল যে মিশরে রক্ষিত ফেরাউন লাশটি ৬২ ফুট! মুসলমানরা এটাই এখনো বিশ্বাস করে। কিন্তু মিশরের জাদুঘরে রাখা মমিটি মাত্র ৬ ফুটের কাছাকাছি! এই মমিটি ১৮১৮ সালে মিশরের পিড়ামিডের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। মোটেই পানির নিচ থেকে নয়। মমির গায়ে লেখা তথ্য থেকে জানা যায় রাজবংশই তাদের মৃত রাজাকে অন্যসব রাজাদের মতই তখনকার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে মমি করে রাখে। মমিটি কখনই সাগর থেকে উঠানো হয়নি। আল্লাহ কি তাহলে নিজে লাশটি তুলে মমি করে পিড়ামিডে রেখে দিয়েছিলেন নাকি? নইলে তিনি কুরআনে কিভাবে বলেন-“আজ আমি তোমার দেহকে উদ্ধার করব(বাঁচিয়ে দেব) যেন তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্যে নিদর্শন হয়ে থাক”! কুরআনের এইসব কাহিনী তাওরাত থেকে ধার করা। কিন্তু আল্লাহর এতবড় শত্রুর নামটা তিনি কেন অপ্রকাশিত করে গেলেন?
 যেখানে আবু লাহাবের নাম ধরে একটা সুরা লেখা হয়! মিশরের পিড়ামিডে রাজবংশের সদস্যদের
মমি করে রাখা একটি প্রথা। প্রায় তিন হাজার বছর আগের একটা লাশ সমুদ্রের নিচে অবিকৃত থাকবে সেটা জীব বিজ্ঞানে হৈ চৈ ফেলে দেয়ার মত ঘটনা। নতুন করে জীব বিজ্ঞান লিখতে হতো। মিশরের জাদুঘরে রাখা ফেরাউনের লাশ নিয়ে তাই যে গল্পটি প্রচলিত চাঁদে আজান ও চাঁদের ফাটল দেখে নভচারীদের মুসলমান হয়ে যাওয়ার মতই একটি মাথামোটা ইসলাম গল্প।
                         

                                  কৃতজ্ঞতায়ঃসুসুপ্ত পাঠক।

           

No comments

Powered by Blogger.