Header Ads

Header ADS

মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে কি বলেছিলেন হকিংস?

মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে কি বলেছিলেন হকিংস?


Related image



স্টিফেন হকিং এর মতে, "মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের কোন ভূমিকা নেইমহাবিশ্ব পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম নীতি অনুসরণ করে স্বতস্ফুর্তভাবে তৈরি হয়েছেমহাবিশ্বের উৎপত্তি এবং অস্তিত্বের ব্যাখ্যায় ঈশ্বরের আমদানি একেবারেই অযথা" বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক স্টিফেন হকিং দাবি করেছেন, ঈশ্বর বলে কিছু নেই

তিনি জানান, ঈশ্বর যে নেই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হিসেবে তিনি দাখিল করতে পারেন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা 
হকিং বলেন, যত দিন মানুষ বিজ্ঞানের খবর রাখত না, তত দিন যে যে বিষয়ের উৎপত্তির কারণ বুঝতে পারত না, সে সব কিছুর মূলেই ঈশ্বরের হাত রয়েছে বলে মনে করতকিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক রহস্যের কারণ এবং তার ব্যাখ্যা জানতে পেরেছেতাই ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাসও ক্রমেই কমেছে

> নাস্তিকরা যখন জিজ্ঞেস করে ঈশ্বর আছে বলে যে দাবী করছো, করো দেখি তার প্রমাণ”, তখন আস্তিকেরা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, “ঈশ্বর নেই এটা দেখি কেমন করে প্রমাণ করতে পারো?”

সেইন্ট লুকের সপ্তদশ অধ্যায়ে বলা আছে, “ঈশ্বরের সাম্রাজ্য রয়েছে মানুষেরই ভেতরে

পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্ন সম্ভবত নিজের অস্তিত্ত্ব নিয়েঃ আমরা কোথা থেকে এসেছি, কোথায় যাবো, আমাদের জীবনের তাৎপর্য কী? সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এসেছেপ্রাচীন গ্রীস থেকে শুরু করে হিন্দু ধর্ম, ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্ম, চীনা এবং জাপানী ধর্মগুরুরা, ইনকা এবং মায়ান সভ্যতার মানুষগুলো - সবাই নিজেদের মতো করে মানুষ এবং বিশ্বসৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছেএখনো আফ্রিকা কিংবা আমাজনের জঙ্গলে বিভিন্ন গোত্র পাওয়া যাবে যারা বিভিন্ন গাছপালা কিংবা চাঁদ-সূর্যকে তাদের ঈশ্বর মনে করে এবং তারা তাদের এই বিশ্বাস এর জন্যে জীবন দিতেও প্রস্তুত!

ধর্ম, দর্শন এবং বিজ্ঞান এই তিনটি শাখাই আসলে ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বেড়ায় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর আগে সকল পদার্থ এবং শক্তি ছিল পুঞ্জীভূত অতপর বিগব্যাং ও সর্বব্যাপী সর্বদিকে মহাবিশ্বের স্থান ও শক্তি বিকিরণ এখনকার দিনে আমরা যে মহাবিশ্ব দেখতে পাই তা মূলত এই বিশাল সৃষ্টির একটা অংশ মাত্র আমরা এখন দেখি সর্পিলাকার গ্যালাক্সী, উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সী, অসম্পূর্ণ-অনিয়মিত গ্যালাক্সী এবং উজ্জ্বল নীল বর্নের গ্যালাক্সীযদিও আমরা গ্যালাক্সীগুলার উৎপত্তি, বিকাশ ও চলাচল এক শতাব্দীর চেয়েও কম সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে চলেছি তবু আমরা বলতে পারি এগুলোর অতীত ও ভবিষ্যত আর এর জন্য দরকার সৃজনশীল ভাবনা ও পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান

> আমাদের সৃষ্টিকর্তা কে? বিজ্ঞান কি প্রমাণ করতে পেরেছে স্রষ্টা বলতে কেউ নেই
আমাদের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, সেটা থাকার কোনো দরকারও নেই৷ মহাবিশ্ব পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রানুসারেই চলে, এখানে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছুর প্রয়োজন নেই৷ স্টিফেন হকিং সেটা ব্যাখ্যা করেছেন তার বইতে 'কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ' অথবা A Brief History of time 

> মৃত্যুর পরে মানুষের কী হয় আপনার মতে?
মৃত্যুর পরে আমাদের শরীর পচে গলে মাটিতে মিশে যায়৷ যেহেতু আমি মানে হচ্ছে, আমার মগজ, যেখানে আমার সব স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে, আবেগ ভালোবাসা সব কিছুর কেন্দ্র যেটা, সেই মগজে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেই আমার অস্তিত্ব সেখানেই শেষ৷ সেই মগজ যখন মাটিতে মিশে যায়, তখন সেটা জৈব সারে পরিণত হয়৷ যেই সার কোনো গাছের বেড়ে ওঠায় কাজে লাগে৷ তাই মৃত্যুর পরে আমাদের কী হয়, সেটার সঠিক উত্তর হচ্ছে, আমরা-আমাদের শরীর প্রকৃতিতে ফিরে যাই৷

ঈশ্বরের ধারণা মানুষের অজ্ঞতা থেকে শুরুমানুষ যখন কোন ঘটনার ব্যাখ্যা জানে না,কার্যকারণ সূত্র কি সেটা জানে না- তখন একজন কল্পিত ঈশ্বর বা কল্পিত কারণ কল্পনা করে নিয়ে নিজেকে প্রবোধ দিতে চেয়েছেমানুষ যখন অসহায়-দুর্বল অবস্থায় পড়ে এবং সেখান থেকে বেরনোর পথও সে খুঁজে পায় না তখনই সে কাল্পনিক ঈশ্বরে নির্ভর করে মানসিক বল পেতে চায়মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনেও এটি দেখা যায়যখন মানুষ কোন কিছু না জানে, তখন বলে ফেলে আল্লাহ বা ঈশ্বর  জানেযখন অসহায়, দুর্বল এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন শেষ ভরসা হিসাবে ইশ্বরকে জপ করা আরম্ভ করে দেয়হঠাৎ চমকে উঠলে, ভয় পেলে- বলে ওঠে হায়! আল্লাহ!” বা ওহ! মাই গড!” কিংবা রাম! রাম!” ইত্যাদি

"আমাদের আগেই বুঝে রাখা দরকার যে, জগতের যা কিছু আমরা দেখতে পাই, সব কিছুর একটি কারণ আছেএই কারণকে প্রশ্ন করতে করতে আপনি পেছনের দিকে এগিয়ে গিয়ে অবশ্যই প্রথম কারণের  (First Cause) সম্মুখীন হবেন এবং এই প্রথম কারণকেই স্বতঃসিদ্ধভাবে 'ঈশ্বর' হিসেবে ধরে নেওয়া হয়(বার্ট্রান্ড রাসেল তার বিখ্যাত 'why I am not a Christian'  প্রবন্ধে প্রথম কারণ সম্বন্ধে বলেন)

ঈশ্বর বিশ্বাসীদের যুক্তির মতে,
. যার শুরু আছে, তার পেছনে একটি কারণ রয়েছে
. আমাদের আজকের এই মহাবিশ্বের একটি উৎপত্তি আছে
. সুতরাং এই মহাবিশ্বের পেছনে একটি কারণ আছে
সেই কারণটিই হলো 'ঈশ্বর'
যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন তাহলে তার তো একটা শুরু থাকবেপ্রথমে তার নিজেরই অস্তিত্বে আসতে হবেনাহলে তিনি সৃষ্টি করবেন কীভাবে? তাহলে স্রষ্টার অস্তিত্বে আসার আগে কী ছিল? স্রষ্টা কীভাবেই বা অস্তিত্বে এলেন? এগুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং যৌক্তিক প্রশ্ন
বিজ্ঞানের মতে, হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্ব (Uncertain principle) অনুযায়ী সামান্য সময়ের জন্য শক্তি (যা E=mc2 সূত্রের মাধ্যমে শক্তি ও ভরের সমতূল্যতা প্রকাশ করে) উৎপন্ন ও বিনাশ ঘটতে পারে - স্বতঃস্ফুর্তভাবে - কোন কারণ ছাড়াইএগুলো সবগুলোই পরীক্ষিত সত্য 
M-থিওরী অনুসারে কোয়ান্টাম জগতের ফ্লাকচুয়েশনের কারণে আমাদের মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে শূন্য থেকে, এবং আমাদের মহাবিশ্বের সাথে আরো প্রায় ১০^৫০০ মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছেএই মহাবিশ্বের একেকটির একেক রকম পদার্থবিজ্ঞান, যেমন কোনোটার হয়তো মাত্রার সংখ্যা দুইশ, ইলেকট্রন হয়তো একটা ফুটবলের মতো, হয়তো মানুষগুলো মাথার উপর ভর করে হাঁটে (যদি মানুষ থেকে থাকে আর কি)আমরা এখন মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলছি এর মানে ঘটনাক্রমে আমাদের মহাবিশ্বের পদার্থবিজ্ঞান মানুষ সৃষ্টির অনুকুল!
কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন হচ্ছে ভ্যাকুয়াম (শূন্য) থেকে খুবই স্বল্প সময়ের জন্যে শক্তির তৈরি হওয়াশূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই ধারণা আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছিলোহকিং এর মতে, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন এর মাধ্যমে শূন্য থেকে বস্তু তৈরি হতে পারেপদার্থবিজ্ঞানের সূত্র মেনেই প্রাকৃতিকভাবে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে অনিবার্যভাবেই শূন্য থেকে মহাবিশ্ব উদ্ভুত হয়েছে
তার নতুন বই গ্রাণ্ড ডিজাইন’ (বিজ্ঞানী লিওনার্ড ম্লোডিনোর সাথে যুগপৎ ভাবে লেখা, এবং এই সপ্তাহেই প্রকাশিতব্য) -এ খুব চাঁচাছোলা ভাবেই বলেন
অভিকর্ষ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবীস্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টিহওয়ার কারণ থেকেই মহাশূন্যে অনেক কিছুর অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি আমরামহাবিশ্বে আমাদের অস্তিত্ব থাকার কারণ হচ্ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো কিছু সৃষ্টিহওয়ার এই নিয়মএ কারণেই মহাবিশ্ব টিকে আছেমহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য কোন প্রয়োজন নেই ঈশ্বরের
কসমোলজিস্ট অধ্যাপক লরেন্স ক্রস বিষয়টিকে এভাবে বলেছেন বিজ্ঞান আসলে প্রতিদিনই ঈশ্বরকে হত্যা করছে, বিজ্ঞান শুধু একজন ঈশ্বর-আল্লাহ-ভগবানের নয়, বরং ইতিহাসে হাজারো ঈশ্বর - আল্লাহ্ - ভগবানের কবর খুঁড়ে চলেছেএ প্রসঙ্গে ইউটিউবে তাঁর একটি বিতর্ক সিরিজ আছে দারুন আগ্রহসঞ্চারী(আগ্রহীরা এখানে দেখে নিতে পারেন একটি পর্ব - এখানে )আগ্রহ উদ্দীপক হচ্ছে, বিজ্ঞান প্রতিদিন ঈশ্বরকে হত্যা করছে এই বক্তব্যটিও এক ধরনের দার্শনিক বক্তব্যকেননা, এর পালটা প্রশ্ন যদি করা হয়, ঈশ্বর যদি নাইই থাকেন তাহলে তাঁকে হত্যা করা যায় কিভাবে? প্রকৃত অর্থে, বিজ্ঞান হত্যা করছে মানুষের ঈশ্বরবোধকে, মানুষের ঈশ্বর চেতনাকেবিজ্ঞান হাজার হাজার ঈশ্বরের উপস্থিতিকে ধ্বংস করেছে কেবল একটি কাজ করে, সেটি হচ্ছে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করেসূর্য দেবতার তাই মরন ঘটেছে যখন বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পেরেছে সূর্য আসলে পৃথিবীর দূরতম একটি জ্যোতিষ্ক ব্যতীত আর কিছুই নয়বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করেছে আকাশ একটি শুন্যস্থান, তার কোনও স্তম্ভ দরকার নেই দাড়িয়ে থাকার জন্যে, আর তার উপরে কোনও ঢাউস তখত বা বাদশাহী সিংহাসন নেই, তাই আল্লাহ্ আর তাঁর কথিত "দোস্ত" মুহাম্মদের বিবরণে যে আরশ এর বর্ণনা আমরা পাই, তা বাস্তবত অনুপস্থিত, নেহাতই কৌতুককর
খুব সংক্ষেপে বিজ্ঞান সম্পর্কে বলতে গেলে এভাবেই বলা যায়, প্রকৃতির তথা বস্তুজগতের নিয়ত পরিবর্তনের নিয়ম বা কার্যকরণ সূত্র সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞানআবার, বিজ্ঞানের একটি বিশেষ কর্মপদ্ধতিও আছে, যার মূল হলো যুক্তি ও প্রমাণএবারে সে আলোকেই দেখি আল্লাহ-ভগবান, ভুত-প্রেত, জ্বিন-পরী, দেব-দেবী, শয়তান-খোক্ষস এসব বিজ্ঞানের অন্তর্ভূক্ত বিষয় কিনা? খুব ছোট করে এর উত্তর হলো নাবিজ্ঞান সে সমস্ত বিষয়েরই আলোচনা যা প্রমাণিত, বা যুক্তিতে অনুশীলনযোগ্যসেই বৃষ্টির ঘটনাতেই আবার আসিবৃষ্টি কেন হয়?
বিজ্ঞানের একজন ছাত্রকে লিখতে হবে পানিচক্রের কথাগাছ থেকে টুপ করে আপেলটি কেন নীচে পড়লো? এরো উত্তরে বলতে হবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথাচন্দ্র-সূর্য গ্রহণ কেন হয়? এখানে বলতে হবে চন্দ্রের উপর পৃথবীর ছায়া বা সূর্য ও পৃথবীর মাঝখানে চন্দ্রের অবস্থানের কথাই বলতে হবেমানব শিশুর জন্ম কিভাবে হয়? এর উত্তরে বলতে হবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে সৃষ্ট ভ্রূণের কথাএভাবে বিজ্ঞানের সমস্ত শাখাই, পদার্থ, রসায়ন, উদ্ভিদ, প্রাণিবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান সমস্ত কিছুই এভাবে কার্যকরণ সূত্র বের করে গিয়েছে বা বের করার চেষ্টায় লিপ্ত
বিজ্ঞানের কোন শাখায় কোন অতিপ্রাকৃত কারণের কোন স্থান নেইএকজন হিন্দু ধর্মালম্বী বিশ্বাস করতে পারে যে রাহুর গ্রাসের কারণেই গ্রহণ হয়, কিন্তু
বিজ্ঞানের ক্লাসে সে যদি সে তত্ত্ব জানায়, তবে তাকে কি বলা হবে? একজন বিশ্বাসী মুসলমান ভাবতেই পারে যে আল্লাহর নির্দেশে আযরাইল এসে জান কবজ করাতেই অমুক মারা গেছেকিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র তার পরীক্ষার খাতায় সে কথা লেখলে শূণ্য ছাড়া কিছু পাবে না
কেননা, কোন মানুষ কি বিশ্বাস করে না করে, তার সাথে বিজ্ঞানের কোন যোগাযোগ নেই
ধর্মীয় বিশ্বাসের সমালোচনা এবং এর বুৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যায় নব-নাস্তিক্যবাদীরা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে থাকেনধর্মের গ্রহণযোগ্য বিকল্পের তালিকায় তারা বিজ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেননব-নাস্তিক্যবাদীদের মতে, বিশ্বজগত ব্যাখ্যায় জ্ঞানলব্ধ বিজ্ঞানই একমাত্র(কিংবা সর্বোত্তম) পন্থাকোনো বিশ্বাসকে তখনই জ্ঞানতাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করা সম্ভব, যখন এর সপক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণ উপস্থিত থাকেনব-নাস্তিক্যবাদীরা এই বলে উপসংহার টানেন যে, বিজ্ঞান ঈশ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার বদলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকার দাবির প্রতি সমর্থন জানায়তাদের দাবি অনুযায়ী, বিজ্ঞান ধর্মকে জৈবিক বিবর্তনের একটি পণ্য হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারেউপরন্তু, ইহজাতিক নৈতিকতাবোধ এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে ধর্মবিশ্বাসের গন্ডীর বাইরেও উপভোগ্য জীবনযাপন করা সম্ভব

বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম আগন্তুকচলচ্চিত্রটিআগন্তুক”-কের মূলচরিত্র মনোমোহন মিত্রকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ”আপনি ধর্ম বিশ্বাস করেন?” মনোমোহন মিত্রের উত্তর ছিল এ রকম, “ যা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে, আমি তা বিশ্বাস করি নাআর প্রচলিত ধর্ম তা করেই, ফলে আমি ধর্মও বিশ্বাস করি নাপরক্ষণেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “ আর ঈশ্বর?”মনোমোহন মিত্র যা বলেছিলেন তার সারমর্ম করলে দাঁড়ায় এ রকম যে, “ এই পৃথিবীতে এতো বিভেদ এতো বৈষম্য; একদিকে প্রযুক্তির এতো অভাবনীয় উন্নতি-অন্যদিকে অসংখ্য মানুষের এতো কষ্টকর জীবনএইসব দেখে দেখে পরম করুণাময় ঈশ্বরের প্রতিও বিশ্বাস রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে

যদি মনোমোহন মিত্রের মাধ্যমে আমরা সত্যজিৎ রায়ের ঈশ্বরভাবনাকে মেলাতে চেষ্টা করি তবে সত্যজিৎ রায় যে ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন সেটা বলা যায়সেই সাথে এটাও বলা যায় যে, তিনি প্রচলিত কোনো ধর্মকেই বিশ্বাস করতেন নাধর্ম অবিশ্বাসী অথচ ঈশ্বরে বিশ্বাস- কথাটা একটু খটকা লাগে
তাই যদি ঈশ্বরে বিশ্বাসটা না থাকে , তবে সব প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাসের বা ধর্মের আচার-রীতিনীতিরও প্রয়োজন পড়ে নাকিন্তু স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ কিংবা সত্যজিতের মতো মানুষেরা ঈশ্বরে বিশ্বাসের উর্ধ্বে উঠতে পারেননিতাই সাধারণ মানুষ অলৌকিক ঈশ্বরে বিশ্বাসের বিমূর্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসবেন সেটা আশা করা খুব কঠিন
মানুষ নিজে যেটা সমাধান করতে পারছেন না কিংবা মানুষ নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত হয়ে যখন নিতান্ত অসহায়, তখন অলৌকিক কেউ তাঁকে সাহায্য করবে, এটা ভাবতে কার না-ভাললাগেঈশ্বর কিংবা অলৌকিক শক্তির প্রতি মানুষের বিশ্বাসের মূল কথাই হয়ত এটাআর এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, মানুষের অসহায়ত্বের প্রতি তথাকথিত সহায়ক ঈশ্বরের এ ধারণাকে পূঁজি করেই প্রচলিত সব ধর্মবিশ্বাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মধ্যেযদিও কালে কালেএক ঈশ্বর থেকে অন্য ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রতি জোরজবরদস্তি হয়েছে কিন্তু মানুষের দৈবিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস কিন্তু সহজাত

[] নাস্তিকতা কি একটি বিশ্বাস?
> আপনি নাস্তিক নাকি ধর্মবিদ্বেষী?
সম্প্রতি একজন বলেছেন, “ঈশ্বর আছে বলাতে যেমন বিশ্বাস, নেই বলাতেও তেমনি বিশ্বাস
অর্থাৎ নাস্তিকতাকে তিনি একটি বিশ্বাস হিসেবে গণ্য করেছেন বা করেনএই ভুলটি অনেকেই করেন যে, নাস্তিকতাকে একটি বিশ্বাস বা আরেকটি ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টাসেই বিষয়েই লিখছিএই কথাটির উত্তর আগে অসংখ্যবার লিখেছি, এখন আবারো লিখছি

ইংরেজিতে Believe, Trust, Faith এই তিনটি শব্দের অর্থ আগে জেনে নেয়া যাক
Believe (অনুমান, বিশ্বাস, বিশেষভাবে প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেয়া)
1. accept that (something) is true, especially without proof.
2. hold (something) as an opinion; think.
যেমন, ভুতে বিশ্বাস করাএলিয়েনে বিশ্বাস করা
Trust (আস্থা)
1. firm belief in the reliability, truth, or ability of someone or something.
কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণার আলোকে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা করাযেমন আমি আমার অমুক বন্ধু সম্পর্কে আস্থাশীল যে, সে টাকা ধার নিলে আমাকে ফেরত দেবে
Faith (বিশ্বাস, ধর্মবিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পরিপূর্ণ বিশ্বাস)
1. complete trust or confidence in someone or something.
2. strong belief in the doctrines of a religion, based on spiritual conviction rather than proof.
যেমন, ইসলাম বিশ্বাস করাহিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করাআল্লাহ ভগবান ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখা

সন্দেহ, অবিশ্বাস, প্রশ্ন করা, এগুলো হচ্ছে জ্ঞানের ভিত্তিবিশ্বাস হচ্ছে তার বিপরীতবিশ্বাস থেকে জ্ঞান সৃষ্টি হয় নাজ্ঞান সৃষ্টি হয় সন্দেহ আর অবিশ্বাস থেকে

বিশ্বাস হচ্ছে সোজা কথায় যুক্তিহীন কোন ধারণা, অনুমান, প্রমাণ ছাড়াই কোন প্রস্তাব মেনে নেয়াতথ্য প্রমাণ পর্যবেক্ষন এবং অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয় মানুষের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত নয়যখনই কোন কিছু যুক্তিতর্ক পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা লব্ধজ্ঞান হয়ে উঠবে, তা আর বিশ্বাস থাকবে না
যেমন ধরুন, পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণে তৈরিএটা মানুষের বিশ্বাস নয়, এটা পরীক্ষালব্ধ ফলাফল; এবং কে এতে বিশ্বাস করলো কে করলো না, তাতে এই তথ্যের কিছুই যায় আসে নাএটা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্যআমরা কেউ বলি না পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রন, এই কথা আমি বিশ্বাস করি”; এটা বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নই নয়বা ধরুন, পৃথিবী গোল, এটা আমি বিশ্বাস করি নাআমি মেনে নিই উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের আলোকেএটা এখন আর অনুমান বা বিশ্বাস নেই, এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্যবা ধরুন বিবর্তনবাদএটা কোন অনুমান নয়বর্তমানে এটি পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সত্য

বিশ্বাস সেটাই করতে হয়, যাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বা যার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নিধরুন কেউ ভুতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে এলিয়েন পৃথিবীতেই আছে, কেউ জ্বীন পরী, কেউ আল্লা ভগবান, কেউ জিউস কালী ইত্যাদিএগুলো বিশ্বাসের ব্যাপার, কিন্তু আমরা আলোতে বিশ্বাসী নই়, আমরা সুর্যে বিশ্বাসী নই, আমরা চেয়ার টেবিলে বিশ্বাসী নইকারন এগুলো বিশ্বাস অবিশ্বাসের উর্ধ্বেআমরা বলি না অমুক লোক সুর্যে বিশ্বাসী, তমুক লোক চেয়ার টেবিলে বিশ্বাস করেআমরা বলি মুসলিমরা আল্লায় বিশ্বাসী, হিন্দুরা শিব বা দুর্গায়, কেউ শাকচুন্নীতে বিশ্বাস করে, কেউ বিশ্বাস করে আমাদের চারপাশে জ্বীন পরী ঘুরে বেড়ায়

নাস্তিকতা হচ্ছে ঈশ্বরে অবিশ্বাসঅর্থাৎ ঈশ্বর প্রসঙ্গে শূন্য বিশ্বাসন্যুল বিশ্বাসবিশ্বাসের অনুপস্থিতিঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক প্রস্তাবকে বাতিল করা
Atheism, in general, the critique and denial of metaphysical beliefs in God or spiritual beings. As such, it is usually distinguished from theism, which affirms the reality of the divine and often seeks to demonstrate its existence.
অর্থাৎ এটা ঈশ্বর নেই, তাতে বিশ্বাস করা নয়বরঞ্চ ঈশ্বর আছে, সেই প্রস্তাবকে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে বাতিল করা এবং সেই বিশ্বাসের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরাঈশ্বর নেই, সেটা বিশ্বাস করা আর ঈশ্বর আছে, এই প্রস্তাবনাকে প্রমাণের অভাবে বাতিল করা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়নাস্তিকতা কোন বিশ্বাস বা ধর্ম নয়, বরঞ্চ নাস্তিকতা হচ্ছে অবিশ্বাসসেই বিশ্বাসে আস্থাহীনতা

যেমন ধরুন, স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা একজনার শখঅন্য আরেকজনার নয়যার নয়, তার ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি না যে, স্ট্যাম্প কালেকশন না করা হচ্ছে তার শখবা ধরুন কেউ টিভিতে কোন চ্যানেল দেখেযখন কোন চ্যানেল আসছে না, কোন সিগান্যাল আসছে না, সেটাকে আমরা আরেকটি চ্যানেল বলতে পারি নাসেটা হচ্ছে সিগন্যালের অনুপস্থিতিশূন্য সিগন্যালযেমন আলো হচ্ছে সাতটি রঙের মিশ্রণআলোর অনুপস্থিতিকে আমরা অন্ধকার বলিসেটাকে আরেক রকমের আলো বলি নাবা আরেকটি রঙ বলি না
প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ নানা ধরণের প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেমানুষের স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসু মন, কৌতূহলী মনে নানা জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছেযেমন ধরুন, বৃষ্টি কেন হয়, ফসল কীভাবে জন্মায়, মানুষ জন্মে, পৃথিবী কোথা থেকে এলো, কিভাবে এলো, ইত্যাদিকিছু বিষয় মানুষ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে জানতে পেরেছে, কিছু কিছু বিষয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে, উপযুক্ত তথ্যের অভাবে বুঝতে পারে নিধীরে ধীরে মানুষ আরও জ্ঞান অর্জন করেছে, আরও বেশি জেনেছে

আর যেগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতে পারেনি, সে সময়ের জ্ঞান যে পর্যন্ত পৌছেনি, সেগুলো সম্পর্কে মানুষ ধারনা করেছে, কল্পনা করেছেযেমন, যখন মানুষ জানতো না বিদ্যুৎ কীভাবে চমকায়, তাদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই এই সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য ছিল না, তাই যখন কেউ প্রস্তাব করে এটা ভয়ঙ্কর কোন দেবতার কাজ, সেই প্রস্তাবই অন্য কোন যৌক্তিক প্রস্তাবের অনুপস্থিতির কারণে টিকে গেছেঅজ্ঞানতা, জানতে না পারার হতাশা, অজ্ঞতা একধরনে হীনমন্যতায় রুপ নিয়েছে এবং ধীরে ধীরে অজ্ঞানতার অন্ধকার একপর্যায়ে দেবতা, ঈশ্বর, ভুত নামক কল্পনা দিয়ে তারা ভরাট করে দিয়েছেযেমন তারা ধরে নিয়েছে, বিদ্যুৎ চমকানো হচ্ছে দেবতা জিউসের ক্রোধপরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞান উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সহকারে বের করেছে, বিদ্যুৎ কীভাবে চমকায়তার পেছনে কোন দেবদেবী ঈশ্বর আল্লাহর হাত আছে কিনাসেই সব অপ্রমাণিত বিশ্বাসের সমষ্টিই হচ্ছে আজকের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোআধুনিক ঈশ্বরগুলোপুরনো অনেক প্রবল প্রতাপশালী দেবতা ঈশ্বর এবং ধর্মবিশ্বাসই সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, আধুনিক ধর্মগুলোও একসময় বিলুপ্ত হবে

নাস্তিকতা এই প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধেতারা তা অস্বীকার করেপ্রশ্নবিদ্ধ করেবাতিল করেএটি কোন ভাবেই আরেকটি বিশ্বাস বা ধর্ম নয়বরঞ্চ ধর্ম বা বিশ্বাসের অনুপস্থিতিএকটি যৌক্তিক অবস্থানএখন প্রশ্ন হচ্ছে, নাস্তিকরা কী প্রমাণ করতে পারবে যে, ঈশ্বর বলে কিছু নেই?
না, এটা নাস্তিকদের দায় নয়যে ঈশ্বরের প্রস্তাব উত্থাপন করবে, তা প্রমাণের দায় তার ওপরই বর্তায়সে সম্পর্কে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ হাজির না করতে পারলে সেটা বাতিল করে দেয়াই যৌক্তিক সিদ্ধান্তসেই প্রস্তাব যত জোর গলাতেই উত্থাপন করা হোক না কেনসেটা অপ্রমাণ করার দায় নাস্তিকদের নয়যেমন কেউ যদি দাবী করে, বৃহস্পতি গ্রহে মানুষ রয়েছে, বা সে নিজেই ঈশ্বরএই মহাবিশ্ব সে নিজেই সৃষ্টি করেছেবা তার বাসার পুকুরের ব্যাঙটিই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে! এরকম প্রস্তাবের প্রমাণ তাকেই করতে হবেঅন্যরা বৃহস্পতি গ্রহে গিয়ে তার প্রস্তাব অপ্রমাণ করবে নাবা সে যে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে নি, তা অপ্রমাণ করবে নাযতক্ষণ সে তার প্রস্তাবের সপক্ষে উপযুক্ত তথ্য এবং যুক্তি উপস্থাপন করতে না পারছে, শুধু মৃত্যুর পরেসব প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে দাবী করছে, তার বা তাদের দাবীকে আমলে নেয়ার প্রয়োজন নেইআর তা প্রমাণ করতে পারলে, বা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলে, আগামীকাল পৃথিবীর সমস্ত যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা দল বেঁধে আস্তিক হতে কোন বাধা নেই

বিশ্বাস হচ্ছে একটি প্রমাণহীন ধারণাপ্রমাণসহকারে যেসব ধারণা সেগুলো হতে পারে প্রতিষ্ঠিত সত্য, নতুবা বৈজ্ঞানিক সত্য, নতুবা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকিন্তু, আমরা কখনই বলি না যে, আমি অভিকর্ষ তত্ত্বে বিশ্বাসীবা আমি বিগ ব্যাং এ বিশ্বাসীকারণ এগুলো প্রমাণ নির্ভর, বিশ্বাস নির্ভর নয়
বিজ্ঞান মানুষকে সর্বোত্তম শিক্ষা দিয়েছেসেটা হল,প্রশ্ন করার শিক্ষাউত্তর খোজার আকাঙ্ক্ষা এর স্বাভাবিক ফলাফল
ধর্মীয় বিশ্বাস, রাজনৈতিক বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, আইনকানুন, প্রথা, নিয়ম, নৈতিকতা, সবকিছুই যুক্তিতর্ক, তথ্য প্রমাণ এবং অর্জিত জ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা এবং যাচাইযোগ্যএতে বিশ্বাস আহত হলে হবে  বিশ্বাস যদি এতই ঠুনকো হয়ে থাকে, অল্প আঘাতেই যদি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়, তবে তা মমি করে জাদুঘরে পাঠালেই হয়সভ্য সমাজে যুক্তিহীন মিথ্যা বিশ্বাসের কোন স্থান থাকতে পারে না

সকল বিশ্বাসকেই যদি সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়, তাহলে গোলাম আজম বা বাঙলা ভাইয়ের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে, আবার হিটলারের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবেসকল বিশ্বাসকে সম্মান করা শুধু বোকামি নয়, বিপদজনকও বটেআমি কেন তা করবো? তাদের বিশ্বাসকে আমি কেন যাচাই করে দেখবো না? তাদের বিশ্বাসকে আঘাত কেন করবো না? তা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কেন তা যে মিথ্যা তা বলবো না? কেন আমার যুক্তি তুলে ধরবো না? আমি শুধু সেই বিশ্বাসকেই সম্মান জানাবো, যা যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনায় যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হবেযুক্তিহীন বিশ্বাস মাত্রই ক্ষতিকর এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য ভয়ংকরবিশ্বাস ভিত্তিক সমাজ কুসংস্কারের আখড়ায় পরিণত হয়, মানুষকে ক্রমশ মধ্যযুগে টেনে নিয়ে যায়, যার প্রমাণ বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায়
সমস্যা হচ্ছে, বিশ্বাস যদি যুক্তিতর্ক, তথ্য প্রমাণ এবং পর্যবেক্ষণ দ্বারা সত্য প্রমাণিত হয়, তখন তা আর বিশ্বাস থাকে নাসেটা সত্য হয়ে ওঠেতাই প্রতিটি বিশ্বাসকে আঘাত করা জরুরী, যাচাই বাছাই আলাপ আলোচনা সমালচনা জরুরীমিথ্যা হলে তা খারিজ করা এবং সত্য হলে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা জরুরী
আমি একটি মুসলিম প্রধান দেশে জন্মেছি৷ যেমন ডকিন্স জন্মেছেন একটি খ্রিষ্টান সমাজে৷ তাকে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন করা হয়, আপনি কেন শুধু খ্রিষ্ট ধর্মের পিছনে লেগে থাকেন? ক্রিস্টোফার হিচেন্সকেও হাজার হাজার বার জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনার মত নাস্তিকেরা এত খ্রিষ্ট বিরোধী কেন?
আগে জানা প্রয়োজন, ধর্ম আসলে কী? চুম্বকের ধর্ম যেমন আকর্ষণ করা, মানুষের ধর্ম তেমনি বিশ্বমানবতা, মানুষের প্রতি প্রেম এবং ভালোবাসা৷ এরকম হলে কোনো আপত্তি ছিল না৷ কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্টত্বের লড়াই শুরু হয়৷ কার ঈশ্বর সত্য, কার ধর্ম সত্য এই সব কোন্দলে এই পর্যন্ত কোটি কোটি মানুষের জীবন চলে গেছে, অনেক রক্ত ঝরেছে৷ তাই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো মানব ধর্মের এবং মানবতার বিরুদ্ধে৷

আমাদের কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই, সেটা থাকার কোনো দরকারও নেই৷ মহাবিশ্ব পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রানুসারেই চলে, এখানে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছুর প্রয়োজন নেই৷ স্টিফেন হকিং সেটা ব্যাখ্যা করেছেন তার বইতে৷
মৃত্যুর পরে আমাদের শরীর পচে গলে মাটিতে মিশে যায়৷ যেহেতু আমি মানে হচ্ছে, আমার মগজ, যেখানে আমার সব স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে, আবেগ ভালোবাসা সব কিছুর কেন্দ্র যেটা, সেই মগজে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেই আমার অস্তিত্ব সেখানেই শেষ৷ সেই মগজ যখন মাটিতে মিশে যায়, তখন সেটা জৈব সারে পরিণত হয়৷ যেই সার কোনো গাছের বেড়ে ওঠায় কাজে লাগে৷ তাই মৃত্যুর পরে আমাদের কী হয়, সেটার সঠিক উত্তর হচ্ছে, আমরা-আমাদের শরীর প্রকৃতিতে ফিরে যাই৷
খ্রিষ্ট ধর্মের বয়স যখন ১৫০০ বছর ছিল, সে সময়ে সেটা ভয়াবহ মৌলবাদী এবং নিপীড়ক হয়ে উঠেছিল৷ সে সময়ে ক্রুসেডাররা পৃথিবী জুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, উইচ হান্টের নামে নারীদের পুড়িয়ে মেরেছে, বিজ্ঞানী দার্শনিক সাহিত্যিক যারাই ধর্মে অবিশ্বাস করেছে, তাদের হত্যা করেছে৷ সে সময়টাকে জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্ধকার যুগ বলে৷

যেসব নাস্তিক যেই সমাজে জন্মেছে, যেই ভাষায় কথা বলেছে, সেই সমাজের শক্তিশালী ধর্মটি নিয়েই বেশি আলাপ করবে৷ এটাই স্বাভাবিক৷ ভারতের নাস্তিকরা যেমন হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার, ইংল্যান্ডের নাস্তিকরা খ্রিষ্ট ধর্মের, তেমনি মুসলিম সমাজ থেকে আসা নাস্তিকেরা ইসলামের বিরুদ্ধে বেশি সোচ্চার৷
আমি একজন নাস্তিক (Atheist), একজন ধর্ম, ধর্মবাদ ও আস্তিক্যবাদ বিরোধি (Anti-theist) এবং একজন ধর্মনিরপেক্ষ (Secularist) মানুষএই বিষয়গুলো দ্বারা আসলে কী বোঝায়? একই সাথে এই তিন ধরণের হওয়াও বা কীভাবে সম্ভব?
চেষ্টা করছি সেটা সহজভাবে বুঝিয়ে বলতে- যদিও এগুলো মাঝে মাঝে গোলমেলে মনে হয়এগুলো প্রতিটি বিষয়ই আলাদা হলেও, একটি অন্যটির পরিপূরক হতে পারে; আবার একই সাথে, কিছু ক্ষেত্রে একটি আরেকটির মতবিরোধীও হতে পারেতাই বিষয়গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা থাকা জরুরী
নাস্তিকতা বা নাস্তিক্যবাদ হচ্ছে একেবারেই ব্যক্তিগত বিষয় একজন স্বতন্ত্র মানুষের কাছে যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই হচ্ছে নাস্তিক্যবাদঈশ্বর বা ঈশ্বরগণ বা দেবতা বা অলৌকিকত্বে বিশ্বাস সাধারণত ধর্মগুলোর মৌলিক বিষয়- সে কারণে নাস্তিক্যবাদ এবং নিধর্ম বা ধর্মহীনতা প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করে

- প্রমাণ এবং যুক্তির ওপর নির্ভর করে একজন মানুষ তার জীবন যাপন করতে পারে এই হাইপোথিসিসের ওপর যে, ঈশ্বর বলে কিছু নেই
- একজন মানুষ তার জীবন কীভাবে যাপন করবেন, বা অন্যদের সাথে কীরকম আচরণ করবেন, সেই সম্পর্কে নাস্তিক্যবাদ তাকে কোন নির্দেশনা বা পরামর্শ দেয় নানাস্তিক্যবাদ শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা যে ক্ষতিকর হতে পারে তা বলে
- নাস্তিকদের নৈতিকতা কোথা থেকে আসবে, সেই পুরনো প্রশ্ন থেকে অনেক নাস্তিকই বর্তমান সময়ে নিজেদেরকে মানববাদী বা মানবতাবাদী বলে পরিচয় দেননৈতিকতার প্রশ্নে ম্যাট ডিলাহুন্টি এর মন্তব্যটি গুরুত্বপুর্ণ-

আমার কাজের ফলাফল সম্পর্কে যৌক্তিক পর্যালোচনা"

ধর্ম, ধর্মবাদ ও আস্তিক্যবাদ বিরোধি (Anti-theist/এণ্টাইথিয়েস্ট) হচ্ছে পুরোপুরি সামাজিক বিষয় বলা যায় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে একজন মানুষ ধর্মের বিরোধিতা করতে পারেনএণ্টাইথিয়েজম হচ্ছে যুক্তিপ্রমাণের ওপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা ধারণা যে, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো একই সাথে মিথ্যা ও ক্ষতিকর, এবং সমাজে এর প্রভাব যতটা সম্ভব কমানো জরুরি
- একদল মনে করেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক, বাদানুবাদ করে, যুক্তি প্রমাণ তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে সমাজে ধর্মের প্রভাব কমানো যায়
- একদল মনে করেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে জোরপুর্বক এই ধারণা জনগণের মধ্যে ঢোকানো যায়এরকম হলে সেই রাষ্ট্রকে আমরা নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্র বলতে পারিপৃথিবীতে কয়েকটি নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্র ছিল যারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নাস্তিকতা প্রচার করতে চেয়েছিলবহু প্রখ্যাত নাস্তিকই এই ধরণের বলপ্রয়োগের মাধ্যমে নাস্তিকতার ধারণা মানুষের মাঝে ঢোকানো নিয়ন্ত্রণবাদী রাষ্ট্রের সমালোচনা করেন
- একজন এণ্টাইথিয়েস্টের অধিকার হচ্ছে, ধার্মিকদের ধর্মমুক্ত করাকোন কোন এণ্টাইথিয়েস্টমনে করেন, এটি তাদের কর্তব্যও বটেএই কারণেই এই ধরণের এণ্টাইথিয়েস্টদেরকে নাস্তিক্যবাদ প্রচারকও বলা যেতে পারেস্ট্রিট এপিস্টেমোলোজিস্টরা হচ্ছে বিশেষভাবে সেই মানুষেরা, যাদের আসলে এই কাজের প্রশিক্ষণই দেয়া হয়স্ট্রিট এপিস্টেমোলোজি হচ্ছে, বিভিন্ন আড্ডায় আলোচনায় সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে নানা দার্শনিক আলোচনা এবং যুক্তিতর্কের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ধর্ম বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি করা
- সকল এণ্টাইথিয়েস্টই কোন না কোন প্রকারে নাস্তিক হতে পারেন, তবে সকল নাস্তিকই কিন্তু এণ্টাইথিয়েস্ট নয়প্রচুর সংখ্যক নাস্তিক আছেন যারা ধর্মকে পাত্তা দেন না, অথবা তারা মনে করেন ধর্ম মিথ্যা হলেও ভাল কিছুর প্রেরণা হতে পারে বা তারা ধর্মকে আসলে বিশ্বাস করতে চানএদেরকে ফেইথিয়েস্টও বলা হয়ফেইথিয়েস্ট হচ্ছে তারা যারা মনে করেন, বিশ্বাসের সমালোচনা করা উচিত নয়

[] নাস্তিকবাদ (Atheism):
> কেন আপনি নাস্তিক? ধর্মকে কেন বিশ্বাস করেন না?
> নাস্তিকতা কী? নাস্তিক হতে হলে কি অন্য ধর্মকে আঘাত করাটা জরুরি?

নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয়, বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিতবিশ্বাসকে খণ্ডন নয়, বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্য
“Atheism” শব্দের অর্থ হল নাস্তিক্যবাদ বা নিরীশ্বরবাদএইথিজমশব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক এথোসশব্দটি থেকেশব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি অন্ধবিশ্বাসকে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে

নাস্তিক্যবাদ (ইংরেজি ভাষায়: Atheism; অন্যান্য নাম: নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতাবাদ) একটি দর্শনের নাম যাতে ঈশ্বর বা স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয়না এবং সম্পূর্ণ ভৌত এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া হয়আস্তিক্যবাদ এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা যায়নাস্তিক্যবাদ বিশ্বাস নয় বরং অবিশ্বাস এবং যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতবিশ্বাসকে খণ্ডন নয় বরং বিশ্বাসের অনুপস্থিতিই এখানে মুখ্যইংরেজি এইথিজম’(Atheism) শব্দের অর্থ হল নাস্তিক্য বা নিরীশ্বরবাদএইথিজম শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক এথোস’ (ἄθεος) শব্দটি থেকেশব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি অন্ধবিশ্বাস কে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে
দিনদিন মুক্ত চিন্তা, সংশয়বাদী চিন্তাধারা এবং ধর্মসমূহের সমালোচনা বৃদ্ধির সাথে সাথে নাস্তিক্যবাদেরও প্রসার ঘটছেঅষ্টাদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম কিছু মানুষ নিজেদের নাস্তিক বলে স্বীকৃতি দেয় 

নিরীশ্বরবাদঃ
 
(সংস্কৃত: निरीश्वरवाद, nir-īśvara-vāda, আক্ষরিক অর্থে ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সংক্রান্ত ধারণা”, “ঈশ্বরহীনতা সংক্রান্ত মতবাদ”) বা ঈশ্বর বা দেবতার অস্তিত্বে অবিশ্বাস হিন্দু দর্শনের একাধিক মূলধারার ও ব্যতিক্রমী ধারার শাখায় সুপ্রাচীন কাল থেকে স্বীকৃত হয়েছেভারতীয় দর্শনের তিনটি শাখা বেদের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করেছেএই তিনটি শাখা হল জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও চার্বাকএগুলিকেই নাস্তিকদর্শন বলা হয়

নাস্তিকরা কোনো বিশেষ মতাদর্শের অনুসারী নয় এবং তারা সকলে বিশেষ কোনো আচার-অনুষ্ঠানও পালন করে নাঅর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ, যে-কোনো মতাদর্শে সমর্থক হতে পারে, নাস্তিকদের মিল শুধুমাত্র এক জায়গাতেই, আর তা হল ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অবিশ্বাস করা

নাস্তিকশব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থটি আমাদের জানা প্রয়োজননাস্তিকশব্দটি ভাঙলে দাঁড়ায়, নাস্তিক + কন বা নাস্তি + নাস্তিশব্দের অর্থ হল নাই, অবিদ্যমাননাস্তিশব্দটি মূল সংস্কৃত হতে বাংলায় এসে বা কনপ্রত্যয় যোগে নাস্তিক হয়েছে, যা তৎসম শব্দ হিসাবে গৃহীতন আস্তিক = নাস্তিক, যা নঞ তৎপুরুষ সমাসে সিদ্ধ এবং আস্তিকের বিপরীত শব্দআরও সহজ করে বলা যায়, না + আস্তিক = নাস্তিকখুবই পরিষ্কার যে, সংগত কারণেই আস্তিকের আগে নাপ্রত্যয় যোগ করে নাস্তিক শব্দটি তৈরি করা হয়েছেআস্তিকরা যে ঈশ্বর/আল্লাহ/খোদা ইত্যাদি পরমসত্ত্বায় বিশ্বাস করে এ তো সবারই জানাকাজেই নাস্তিক হচ্ছে তারাই, যারা এই ধরনের বিশ্বাস হতে মুক্ততাই সংজ্ঞানুযায়ী নাস্তিকতা কোনো বিশ্বাস নয়, বরং বিশ্বাস থেকে মুক্তিবা বিশ্বাসহীনতা

ইংরেজিতে নাস্তিকতার প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘Atheist’সেখানেও আমরা দেখছি “theist” শব্দটির আগে ‘a’ প্রিফিক্সটি জুড়ে দিয়ে Atheist শব্দটি তৈরি করা হয়েছেনাস্তিকতা এবং মুক্তচিন্তার উপর বহুল প্রচারিত গবেষণাধর্মী একটি ওয়েব সাইটে শব্দটির যে সংজ্ঞা আছে -– Atheism is characterized by an absence of belief in the existence of gods. This absence of belief generally comes about either through deliberate choice, or from an inherent inability to believe religious teachings which seem literally incredible. It is not a lack of belief born out of simple ignorance of religious teachings. সহজেই অনুমেয় যে, “absence of belief” শব্দমালা চয়ন করা হয়েছে বিশ্বাস হীনতাকে তুলে ধরতেই, উলটোটি বোঝাতে নয়

Gordon Stein তাঁর বিখ্যাত ‘An Anthology of Atheism and Rationalism’ বইয়ে নাস্তিকতার (Atheism) সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “When we examine the components of the word ‘atheism,’ we can see this distinction more clearly. The word is made up of ‘a-’ and ‘-theism.’ Theism, we will all agree, is a belief in a God or gods. The prefix ‘a-’ can mean ‘not’ (or ‘no’ ) or ‘without’. If it means ‘not,’ then we have as an atheist someone who is not a theist (i.e., someone who does not have a belief in a God or gods). If it means ‘without,’ then an atheist is someone without theism, or without a belief in God”. (Atheism and Rationalism, p. 3. Prometheus, 1980)আমরা যদি atheist শব্দটির আরও গভীরে যাই তবে দেখব যে, এটি আসলে উদ্ভুত হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘a’ এবং ‘theos’ হতেগ্রিক ভাষায় ‘theos’ বলতে বোঝায় ঈশ্বরকে, আর ‘a’ বলতে বোঝায় অবিশ্বাস বা বিশ্বাসহীনতাকেসেজন্যই Michael Martin তাঁর “Atheism: A Philosophical Justification” বইয়ে বলেন, “According to its Greek roots, then, atheism is a negative view, characterized by the absence of belief in God.

চিরন্তন ও স্বয়ম্ভু সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে সাংখ্য দর্শনের যুক্তি নিম্নরূপ:
যদি কর্মের অস্তিত্বকে মান্যতা দেওয়া হয়, তবে ব্রহ্মাণ্ডের নৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবে ঈশ্বরের কল্পনা অপ্রয়োজনীয়কারণ, যদি ঈশ্বর কর্মের ফলদাতা হন, তবে তিনি তা কর্ম ব্যতিরেকেই করতে পারেনআবার যদিও তিনি কর্মের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকেন, তবে কর্মই নিজের ফলদাতাসেক্ষেত্রে ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই

যদি কর্মের অস্তিত্ব অস্বীকারও করা হয়, তাহলেও ঈশ্বরকে কর্মের ফলদাতা বলা যায় নাকারণ, ফলদাতা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে হয় আত্মকেন্দ্রিক নয় নিঃস্বার্থএখন ঈশ্বরের উদ্দেশ্য নিঃস্বার্থ হতে পারে নাকারণ, স্বার্থহীন হলে তিনি দুঃখময় জগত সৃষ্টি করতে পারেন নাযদি তাঁর উদ্দেশ্য আত্মকেন্দ্রিক হয়, তবে মনে করতে হবে ঈশ্বরের ইচ্ছা রয়েছেকারণ, ইচ্ছা ব্যতিরেকে চালিকাশক্তি বা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় নাতাছাড়া যদি ধরা হয় ঈশ্বরের ইচ্ছা রয়েছে, তাহলে সেটি কর্মের দায়বদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা থেকে ঈশ্বরের চিরন্তন স্বাধীনতার ধারণার পরিপন্থীতাছাড়া সাংখ্যের মতে, ইচ্ছা হল প্রকৃতির গুণএটি ঈশ্বরের মধ্যে বিকশিত হচ্ছে, তা ধারণা করা যায় নাসাংখ্যের মতে, বেদের প্রমাণও এই ধারণাকে সমর্থন করে
বিপরীত যুক্তি ছাড়াও যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ঈশ্বরের কিছু অপূর্ণ ইচ্ছা রয়েছে, তবে তা তাঁকে অন্যান্য লৌকিক অভিজ্ঞতার মতোই দুঃখ দেবেএই ধরনের পার্থিব ঈশ্বর সাংখ্যের উচ্চতর আত্মা ধারণার থেকে কিছুমাত্র উন্নত নন

তাছাড়া ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেইতিনি দৃশ্যমান ননএমন কোনো সাধারণ পদ্ধতি নেই, যার মাধ্যমে তাঁর অস্তিত্বের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়বেদের প্রমাণ থেকে জানা যায়, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা হল প্রকৃতি, ঈশ্বর নন
এই কারণে সাংখ্য দর্শন মনে করে, বিভিন্ন বিশ্বতত্ত্ব-সংক্রান্ত, তত্ত্ববিদ্যা-সংক্রান্ত ও পরমকারণমূলক যুক্তি দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় নাশুধু তাই নয় সাধারণভাবে যে ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান, অন্তর্যামী, করুণাময় সৃষ্টিকর্তা মনে করা হয়, তাঁরও কোনো অস্তিত্ব নেই

এই পর্যন্ত মহাবিশ্বের কোন কাজে, কোন ঘটনায় কোন অলৌকিক বা ব্যাখ্যাতীত শক্তির প্রমাণ মেলে নিসবকিছুই নিতান্ত লৌকিক এবং বিজ্ঞানের সূত্রে ঘটেছেকোথাও কোন অদৃশ্য অদ্ভুত রহস্যময় কিছুর অস্তিত্ব নেই
একজন মুক্তমনা প্রথা-রাষ্ট্র-ধর্ম-লিঙ্গ-জাতীয়তাবাদ-যৌনরুচি-বর্ণ সবকিছুর উর্ধ্বে মানুষকে স্থান দেবে, মানুষের পক্ষে কথা বলবে
মোটাদাগে নাস্তিক্যবাদ হচ্ছে যুক্তিপ্রমাণহীন কিছু দাবীকে অস্বীকার করার দর্শন, সে সম্পর্কে অনুসন্ধান-পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কোন তত্ব বাতিল করার প্রজ্ঞাযখন একজন নাস্তিক কোন ধর্মদর্শনকে বাতিল করবে, যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে তা ভুল প্রমাণ করবে, স্বাভাবিকভাবেই সেই ধর্মটিও প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচিত হবে

[] অজ্ঞেয়বাদ (Agnosticism):
অজ্ঞেয়বাদ (ইংরেজি: Agnosticism) একটি দর্শন, যা বিভিন্ন মৌলিক প্রশ্ন বা ধর্মীয় দাবি, যেমন ঈশ্বর-এর অস্তিত্ব, ইত্যাদির সত্যতাকে মনে করে অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয়, তথাপি জীবনযাপনের জন্য অগুরুত্বপূর্ণঅজ্ঞেয়বাদ আস্তিকতাবাদ হতে তো বটেই, নাস্তিকতাবাদ হতেও ভিন্ন, কেননা নাস্তিকতাবাদ সরাসরি ঈশ্বরের অস্তিত্বহীনতা দাবী করে, যেখানে অজ্ঞেয়বাদ এই দাবীর প্রশ্নেও সমান সন্দিহানদার্শনিক উইলিয়াম রোয়ের মতে, সাধারণ অর্থে, অজ্ঞেয়বাদ অর্থ ঈশ্বরে বিশ্বাস অথবা ঈশ্বরে অবিশ্বাস যেখানে নাস্তিকতাবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেঅজ্ঞেয়বাদে যারা বিশ্বাস করেন তাদের সাথে, যারা মৌলিক প্রশ্নের উত্তরকে অজ্ঞাত কিন্তু হয়তো অজ্ঞেয় নয় মনে করেন, তারাও নিজেদের অজ্ঞেয়বাদী দাবী করেন ও শেষের দর্শনটিকেও অজ্ঞেয়বাদেই আলোচনা করা হয়সাধারণভাবে সকল অজ্ঞেয়বাদী ধর্ম সংক্রান্ত বিশ্বাসের ব্যাপারে সংশয়ী হন

[] সংশয়বাদ (Skepticism):
সংশয়বাদ (ইংরেজি ভাষায়: Skepticism) শব্দটি অনেক বৃহৎ পরিসরে ব্যবহৃত হয়যেকোন কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাবকেই সংশয়বাদ বলা যেতে পারেসাধারণ্যে বহুল প্রচলিত কোনো ধারণাকে সন্দেহ করা অর্থে সংশয়বাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকেকোনো কিছুর নিদর্শন পেলে তাকে বিনা বাক্য ব্যায়ে মেনে না নিয়ে বরং সেই নিদর্শনটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করাই সংশয়বাদযারা সংশয়বাদের প্রতি আস্থা রাখেন বা সংশয়বাদ চর্চা করেন তাদেরকে সংশয়বাদী বলা হয়চিরায়ত দর্শন থেকেই সংশয়বাদের ইংরেজি প্রতিশব্দ, স্কেপ্টিসিজম শব্দটি এসেছেপ্রাচীন গ্রিসে কিছু দার্শনিক ছিলেন যারা কোনো কিছুকেই নিশ্চিত বলে ঘোষণা দিতেন না বরং সব কিছুতেই তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতেনদার্শনিকদের এই ধারাটিকে তখন Skeptikoi বলা হতোতাই Skeptikoi দার্শনিক ধারার দার্শনিকদের বৈশিষ্ট্যকেই স্কেপ্টিসিজম হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে থাকে

[] র্ম-নিরপেক্ষতাবাদ (Secularism):
ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজম হচ্ছে পুরোপুরি রাজনৈতিক মতাদর্শএই মতাদর্শ যা মনে করে, ধর্ম এবং রাষ্ট্র হবে আলাদা এবং বিচ্ছিন্নরাষ্ট্র এবং ধর্ম একে অন্যয়ের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে না, বা নিয়ন্ত্রণ করবে নারাষ্ট্র হবে ধর্মহীন এবং নাগরিকের ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সে নাক গলাবে না ( যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে )

কোন ধর্মীয় আচরণ বা রীতি বা প্রথা যদি ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত আলোচনা এবং যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সঠিক বা বৈধ বলে প্রমাণ করা যায়, তাহলে সেটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের আইন বা নিয়ম বলে গণ্য হতে পারে
অন্যদিকে, কোন ধর্মীয় আচরণ বা রীতি বা প্রথা যদি রাষ্ট্রের কোন প্রচলিত সেক্যুলার আইনের লঙ্ঘন করে, বা ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত যুক্তিতর্ক ও আলোচনায় সঠিক বা বৈধ বলে মনে না হয়, তাহলে সেই ধরণের ধর্মীয় রীতি বা আচরণ নিষিদ্ধ হতে পারে
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে সকল ধর্মের বা কোন ধর্মেরই নয় এমন মানুষকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সম্পূর্ণ অনুমতি দেয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই রীতি বা আচরণ দেশের প্রচলিত সেক্যুলার আইনের লঙ্ঘন করে
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কখনই কোন ধর্ম বা নাস্তিকতাকে রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে নাগরিকের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে নাধার্মিক, ধর্মপ্রাণ, নিধার্মিক, ধর্মহীন বা নাস্তিক সকলেই নিজেদের ইচ্ছামত ধর্ম গ্রহণ করতে পারে, পালন না করতে পারে, গ্রহণ বা বর্জন করতে পারেরাষ্ট্র মানুষের ধর্মবিশ্বাস বিষয়ে মাথা ঘামাবে না

শিশুদের এই অধিকার অবশ্যই দেয়া প্রয়োজন যে, তারা সবগুলো ধর্ম সম্পর্কে জানবে এবং নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তারা যেন নিজেদের পছন্দ করা ধর্মটি পালন করতে পারেবিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, শিশুদের সবগুলো প্রধান ধর্ম এবং নাস্তিক্যবাদ সম্পর্কে অবহিত করা, শিক্ষা দেয়া, এবং নিরপেক্ষভাবে শিশুদের সেই বিষয়গুলো বুঝে শুনে বেছে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়াএটি হচ্ছে, কোন বিশেষ ধর্ম বা নাস্তিক্যবাদের একাধিপত্য বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মান্তরকরণ রুখে দেয়ার জন্যবা কোন ধর্মকে বিশেষ সুবিধা করে দেয়ার সুযোগ রুখে দেয়ার জন্য

সকল সেক্যুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেক্ষগণই যে নাস্তিক বা এণ্টাইথিয়েস্ট হবেন এমন কোন নিয়ম নেইএমনকি উনারা ব্যক্তিগতভাবে ধার্মিকও হতে পারেনএমনকি উনারা এটাও মনে করতে পারেন যে, তার ধর্মটিই অন্য সকলের পালন করা উচিততারা ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাদের ধর্ম প্রচারও করতে পারেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা রাষ্ট্র, সরকার বা আইনের লঙ্ঘন করছে
একজন বিজ্ঞানমনষ্ক সত্যানুসন্ধানই মানুষের কাজ হচ্ছে, কোন বিষয় না বুঝলে, বা না জানলে তা নিয়ে গবেষণা করে সত্য তথ্যটি খুঁজে বের করাবা পড়ালেখা করাতার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করা




No comments

Powered by Blogger.