ইবনে সিনা আস্তিক নাকি নাস্তিক ছিলেন?
ইবনে সিনা কি আস্তিক ছিলেন নাকি নাস্তিক ছিলেন?

ইবনে সিনা আস্তিক ছিলেন নাকি নাস্তিক ছিলেন এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গিয়ে অনলাইন সোস্যাল সাইটে নিয়মিত জল ঘোলা কম হয়না ।
আস্তিকদের দাবী হচ্ছে ইবনে সিনা আস্তিক ছিলেন ।
অপরদিকে নাস্তিকদের দাবী ইবনে সিনা নাস্তিক ছিলেন ।
আর এটা নিয়ে শুরু হয় দুই মতের লোকেদের কাদা ছোড়াছুড়ি।
কেননা জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলমানরা বরাবরই অজ্ঞ এবং পিছিয়ে আছে ।
পক্ষান্তরে অমুসলিমরা সবসময়ই জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে ।
নাস্তিকদের দাবী এর পিছনে একমাত্র মোক্ষম দায়ী হচ্ছে মুসলিম জাতিটির ইসলাম নামক দলের মেনিফেস্টোতে ( কুরান হাদীস) কিছু কিছু বিষয়ে বাধ্যবাধকতা এবং নিয়মনীতি সেটে দেওয়ার কারনে সেখানে যা খুসি তাই ভাবার সুযোগ নেই ।
যা ইচ্ছে তাই বলার সুযোগ নেই ।
কেননা মুক্তমনে খোলামেলাভাবে চিন্তাভাবনা করতে গেলে এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনাকে ধারন করতে গেলে অনেক অনেক বিষয়ই ইসলামে বেধে দেওয়া মেনিফেষ্টোর বিপরীতে চলে যায়।
কেননা বিজ্ঞানে আমাদের শেখায় সমস্ত শক্তির উতস সূর্য , কিন্তু একথাটা মুসলিমদের অকপটে স্বীকার করে নেওয়া সম্ভব নয় ।
কেননা তাদের ইসলামে বলা হয়েছে একমাত্র সমস্ত শক্তির উতস আল্লা।
বিজ্ঞান দাবী করছে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে কোন ভগবানেশ্বরাল্লা ( ভগবান+ঈশ্বর+আল্লা)'র হাত নেই।
কিন্তু একথা স্বীকার করতে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ।
সেখানে বলা হয়েছে এই মহাবিশ্ব তথা সবকিছু আল্লায় সৃষ্টি করেছে ।
বিজ্ঞান বলছে মানুষ এসেছে বিবর্তনের হাত ধরে ,কিন্তু মুসলমানরা এটা মেনে নিতে পারেনা ।
কেননা তাদের ইসলামে সেটে দিয়েছে মানুষ এসেছে আদম হাওয়া থেকে ।
যাহোক, এভাবে উদাহরন দিলে অনেক অনেক উদাহরন সেটে দেওয়া যাবে , কিন্তু আমি সেদিকে গিয়ে লেখাটিকে দীর্ঘায়িত করতে চাইনা ।
বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের অনেক অনেক বিষয়ে সাংঘর্ষিকতা রয়েছে ।
আর এভাবে বিজ্ঞান বিমুখ হওয়ার ফলেই এই মুসলমান জাতিটি দিনদিন এই অগ্রগামী পৃথিবী থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে বলেই নাস্তিকদের মতামত।
কিন্তু এই দাবীকে আস্তিকেরা কিছুতেই মেনে নিতে রাজি নয় ।
কেননা তাদের দাবী একসময় এই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে সভ্যতা,জ্ঞান বিজ্ঞান এই মুসলমানেরাই এনে দিয়েছে ।
আর সেটার প্রমান হিসাবে তারা আজ থেকে হয়তো কয়েকশো বছর ধরেই সেই পুরেনো ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে ।
যেখানে তাদের সেই লিষ্টে রয়েছে বেশ কিছু মুসলিম বিজ্ঞানীদের নামের তালিকা ।
যারা বিভিন্ন সময়ে চিকিতসা বিজ্ঞান, দর্শন,ইতিহাস,ভুগোল,বীজগনিত,এটা সেটা নানা বিষয়ের জন্ম দিয়েছিল ।
আর অমুসলিম তথা কাফের নাস্তিকরা সেটাকেই এখন ঘষেমেজে কিছু আবিস্কার করে সব নোবেল তারাই নিয়ে নিচ্ছে ।অথচ ওসব আবিস্কারের মুল থিওরি কিংবা কনসেপ্ট সেই কয়েকশো বছর আগেই মুসলিমরা দেখিয়ে দিয়ে গেছে ।
আর সেই লিষ্টের মধ্যে চিকিতসা বিজ্ঞানের জনক হিসাবে দেখানো হয় ।
আর এটা মেনে নিতে নারাজ নাস্তিক সমাজ ।
কেননা ইবনে সিনার যে সমস্ত ধ্যান ধারনা এবং চিন্তাভাবনা পাওয়া যায় তাতে কোনভাবেই সে আর ইসলামের বা মুসলিম দলের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকতে পারেনা , আর সেগুলিকে কেন্দ্র করেই প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ইমাম গাজ্জালীসহ অনেক আলেম ওলামারাই তাকে নাস্তিক কাফের বলেও ফতোয়া দিয়ে থাকে ।
আর তাই আমি এই লেখাটিতে এই বিষয়টা ই পুরোপুরি ক্লিয়ার করবো যে, ইবনে সিনা আস্তিক ছিল নাকি নাস্তিক ছিল।
তো আমার হাতে থাকা নানাবিধ তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে আমিও সেটাই বলবো যে ইবনে সিনা আস্তিক ছিলেননা, বরং নাস্তিক ছিলেন।
তো চলুন দেখি বিস্তারিতঃ দার্শনিক ইবনে সীনার আক্বীদাহ-বিশ্বাস এবং তার ব্যাপারে আলেমদের মতামতঃ
ইবনে সীনা হচ্ছেন, অতিপ্রসিদ্ধ একজন দার্শনিক। ডাক্তারী /চি্তকিসা বিদ্যায় তিনি জগৎবিখ্যাত। তার নাম হচ্ছে, আবূ আলী হুসাইন বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান বিন আলী বিন সীনা বালখী। তিনি ৩৭০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন আর মারা যান ৪২৮ হিজরীতে (ইবনে সিনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ➜ https://bit.ly/2RC0Ll6)।
তাকে আমরা সবাই মুসলিম হিসেবে জানি। অথচ তিনি বাতেনী কারামুতাহ ছিলেন। তিনি নাস্তিক্যবাদী অনেক বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তাকে অনেক ইমাম ও আলেম কাফের ও নাস্তিক আখ্যা দিয়েছেন।
ইবনে সীনা কাফের ও নাস্তিক এ ব্যাপারে উলামাদের মতামতঃ
➤ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহি) বলেনঃ
وابن سينا تكلم في أشياء من الإلهيات والنبوات والمعاد والشرائع لم يتكلم فيها سلفه ولا وصلت إليها عقولهم ولا بلغتها علومهم فإنه استفادها من المسلمين وإن كان إنما أخذ عن الملاحدة المنتسبين إلى المسلمين كالإسماعيلية وكان هو وأهل بيته وأتباعهم معروفين عند المسلمين بالإلحاد وأحسن ما يظهرون دين الرفض وهم في الباطن يبطنون الكفر المحض
ইবনে সীনা ইলাহ, নবুওয়াত, পরকাল ও শরী’আত সম্পর্কে এমন সব কথাবার্তা বলেছেন যা তার পূর্বের কোনো সালাফ বলেননি; তাঁদের বিবেক ও জ্ঞান সেদিকে যেতেই পারেনি। তিনি তা মুসলিমদের থেকে গ্রহণ করেন। যদিও তিনি এসব শিখেন ইসমাইলিয়্যাহদের মত নামধারী নাস্তিকদের থেকে। তিনি, তার পরিবার ও তার অনুসারীরা মুসলিমদের নিকট নাস্তিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তারা বাহিরে রাফেযী শিয়ার ভাব নিতেন আর ভিতরে খালেস কুফরী লালন করতেন। [মাজমুঊল ফাতওয়া, ৯/২৩২-২৩৫]
➤ তিনি আরো বলেনঃ
أن ابن سينا أخبر عن نفسه أن أهل بيته وأباه وأخاه كانوا من هؤلاء الملاحدة وأنه إنما اشتغل بالفلسفة بسبب ذلك
ইবনে সীনা নিজেই তার, তার পরিবার, তার পিতা ও তার ভাইদের সম্পর্কে জানিয়েছেন যে, তারা এসব নাস্তিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি এ কারণে দর্শন শাস্ত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। [মাজমুঊল ফাতওয়া, ৯/২৩২-২৩৫]
➤ তিনি আরো বলেনঃ
وابن سينا أحدث فلسفة ركبها من كلام سلفه اليونان ومما أخذه من أهل الكلام المبتدعين الجهمية ونحوهم وسلك طريق الملاحدة الإسماعيلية في كثير من أمورهم العلمية والعملية ومزجه بشيء من كلام الصوفية وحقيقته تعود إلى كلام إخوانه الإسماعيلية القرامطة الباطنية فإن أهل بيته كانوا من الإسماعيلية أتباع الحاكم الذي كان بمصر وكانوا في زمنه ودينهم دين أصحاب "رسائل إخوان الصفا" وأمثالهم من أئمة منافقي الأمم الذين ليسوا مسلمين ولا يهود ولا نصارى
ইবনে সীনা জাহমিয়া ও তাদের মত বিদ’আতপন্থী আহলে কালামদের থেকে কিছু গ্রহণ করে ও তার পূর্ববর্তী ইউনানিদের থেকে কিছু নিয়ে সবকে জোড়া দিয়ে এক নতুন দর্শন আবিষ্কার করেন। তিনি ইলমী, আমলী অনেক ক্ষেত্রে নাস্তিক ইসমাইলিয়্যাহদের তরীকায় চলেন। তার সঙ্গে আরো মিশ্রণ করেন সূফীদের কথাবার্তা। যার বাস্তবতা হচ্ছে, তার ইসমাইলিয়্যাহ কারামুতাহ বাতেনিয়্যাহ ভাইদের মতাদর্শ। তার পরিবার ছিল মিসরে অবস্থানকারী হাকেমের অনুসারী ইসমাইলিয়্যাহদের অন্তর্ভুক্ত। তারা তার যুগের ছিল। তাদের দ্বীন হচ্ছে, “রাসায়েল ইখওয়ানুস সফা’র” অনুসারীদের ও তাদের মত মুনাফিক সর্দারদের দ্বীন; যারা মুসলিম নয়, ইহুদী নয়, খ্রিষ্টান নয়। [ঐ, ১১/৫৭১]
➤ ইমাম যাহাবী (রাহি) তার সম্পর্কে বলেনঃ
وله كتاب الشفاء وغيره وأشياء لاتحتمل ,وقد كفره الغزالي في كتاب المنقذ من الضلال وكفر الفارابي
তার “আশ-শিফা” সহ অন্যান্য কিতাব এবং এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা সহ্য করার মত না। তাকে গাযালী “আল-মুনকিয মিলায যলাল” কিতাবে কাফের বলেছেন এবং ফারাবীকেও কাফের বলেছেন। [সীয়ারু আ’লামিন নুবালা, ১৭/৫৩৫]
➤ ইবনুল কাইয়িম (রাহি) তার সম্পর্কে বলেনঃ
وكان ابن سينا كما أخبر عن نفسه قال: أنا وأبي من أهل دعوة الحاكم فكان من القرامطة الباطنية الذين لا يؤمنون بمبدأ ولا معاد ولا رب ولا رسول مبعوث جاء من عند الله تعالى
ইবনে সীনা তেমনটি ছিলেন যেমনটি তিনি তার সম্পর্কে বলেছেন, তিনি বলেন: আমি ও আমার পিতা হাকেমের আন্দোলনের অনুসারী ছিলাম। তিনি কারামুতাহ বাতেনিয়্যাহর অন্তর্গত ছিলেন, যারা (সৃষ্টির) সূচনা, পরকাল, রব ও আল্লাহর প্রেরিত রাসূল-কে বিশ্বাস করে না। [ইগাসাতুল লাহফান, ২/১৯৫]
তিনি তাকে নাস্তিকদের নেতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন। [ইগাসাতুল লাহফান, ২/১৯৬]
➤ ইবনুস স্বলাহ (রাহি) তার সম্পর্কে বলেনঃ
كان شيطاناً من شياطين الإنس
তিনি মানুষরূপী শয়তান ছিলেন। [ফাতওয়া ইবনিস স্বলাহ, ২/২০৯]
➤ আনওয়ার শাহ কাশমীরী (রাহি) তার সম্পর্কে বলেনঃ
ابن سينا الملحد الزنديق القرمطي غدا مدى شرك الردى وشريطة الشيطان
নাস্তিক, অবিশ্বাসী, কুরমুতী ইবনে সীনা চরম পর্যায়ের শিরকে নিমজ্জিত ছিলেন এবং শয়তানের ফিতা (অধীনে) ছিলেন। [ফায়জুল বারী, ১/১৬৬]
لا رضي الل
আল্লাহ্ যেন তার উপর সন্তুষ্ট না হন।
➤ ইবনে কাসীর (রাহি) তার সম্পর্কে বলেনঃ
قد حصر الغزالي كلامه في "مقاصد الفلاسفة" ثم رد عليه في "تهافت الفلاسفة" في عشرين مجلساً له، كفره في ثلاث منها، هي: قوله بقدم العالم وعدم المعاد الجسماني وأن الله لا يعلم الجزئيات وبدَّعه في البواقي ويقال أنه تاب عند الموت والله أعلم
গাযযালী তার মতবাদকে “মাকাসিদুল ফালাসাফাহ” গ্রন্থে একত্রিত করেছেন। তারপর তিনি ২০টি আলোচনায় “তাহাফুতুল ফালাসাফাহ”-তে তার জবাব দিয়েছেন। তিন কারণে তিনি তাকে কাফের বলেছেন। তা হল: তার মতে বিশ্বজগত সৃষ্টি নয়, শারীরিকভাবে পরকাল হবে না এবং আল্লাহ শাখাগত বিষয় সমূহ জানেন না। আর অন্যান্য কারণে তিনি তাকে বিদ’আতী বলেছেন। [আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১২/৪৩]
أكثر العلماء على كفره وزندقته حتى قال الإمام الغزالي في كتابه "المنقذ من الضلال" : لا شك في كفرهما أي الفارابي وابن سينا
অধিকাংশ উলামা তাকে কাফের ও নাস্তিক বলেছেন। এমনকি ইমাম গাযালী তার কিতাব “আল-মুনকিয মিনায যলাল” কিতাবে বলেছেন, উভয়ের অর্থাৎ ফারাবী ও ইবনে সীনার কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ নেই। [সাযারাতুয যাহাব, ২/৩৫৩]
➤ ইবনে সীনার কিছু ইসলাম তথা আল্লা বিরোধী ও নাস্তিকীয় মতবাদঃ
০১. আল্লাহর ক্ষমতা, ইচ্ছা, হিকমত ও চাওয়া বলতে কিছুই নেই।
০২. মস্তিষ্কের বাইরে আল্লাহর অস্তিত্ব নেই। [মাজমুউল ফাতওয়া, ৬/৫১৬-৫১৭]
০৩. নবীগণ পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম, ফেরেশতা ও গায়েবের বিষয়ে যা কিছু বলেছেন, সে-সবের কোনো বাস্তবতা নেই। [দারউ তা’আরুযিল আকল ওয়ান নাকল, ১/৯]
০৪. নবীগণের মু’জিযা হচ্ছে, আত্মিক শক্তি। [সুফদিয়াহ, ১/২]
০৫. নবীগণের ওহী হচ্ছে, নিজের অন্তরের ফয়েয। অর্থাৎ তাদের অন্তর অত্যন্ত স্বচ্ছ হওয়ার কারণে অন্তরে কিছু গেঁথে যেত।
০৬. সৃষ্টিজগৎ অবিনশ্বর। [ইগাসাতুল লাহফান, ২/১০৩১]
০৭. শারীরিকভাবে পরকালে পুনরুত্থান হবে না। [ইগাসাতুল লাহফান, ২/১০৩১]
--- তো পাঠক এবার আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন ইবনে সিনাকে আস্তিক বানিয়ে নিজেদের অজ্ঞতাকে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দায়সারা হওয়ার বৃথা চেষ্টা করবেন আর???
- shakh al imran
--- তো পাঠক এবার আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন ইবনে সিনাকে আস্তিক বানিয়ে নিজেদের অজ্ঞতাকে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দায়সারা হওয়ার বৃথা চেষ্টা করবেন আর???
No comments